Let your mind to be opened to explore the truth
This is my way (ISLAM); I invite to Allah with insight :12-No Sura Yousuf: Verse-108.”

দশম অধ্যায়

খিলাফত শাসন ব্যবস্থার স্বরূপ ও রূপরেখাঃ জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী, গণমুখী ও জবাবদিহিতামূলক সরকার ব্যবস্থা

যে সব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী শাসন করেনা তারাই জালেম। (সুরা মায়েদা-৪৬)

 

সূচনা

নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সূচনালগ্নে এদেশের জনসাধারণ অনেক স্বপ্ন দেখেছিলো। কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবে, সার-বিদ্যুৎ-ডিজেলের মূল্য হাতের নাগালে থাকবে, শ্রমিকসহ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ শ্রমের ন্যায্য মূল্য পাবে, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হবে, শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান হবে, স্বৈরশাসনকালীন ভয়াবহ দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হবে; সর্বোপরি, বঞ্চিত হতদরিদ্র মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু বিগত ১৫ বছরের বিএনপি-আওয়ামী লীগের দুঃশাসন জনগণের সেই আশা-আকাংখাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। চলমান এই রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থা সন্ত্রাস, বোমাবাজি, সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট ছাড়া দেশবাসীকে আর কিছুই দিতে সক্ষম হয়নি। দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী আজও সকল মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। জনগণের দুর্দশার কোন পরিবর্তন তো ঘটেইনি, বরং সংকট আরো গভীর হয়েছে।

 

এরই মধ্যে গত মার্চ ২০০৫ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও নির্বাচন: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সংস্কারের আবশ্যকতা শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে ২০০৭ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন আন্দোলনের সূচনা করে। আর মার্চ ২০০৬ এ জাতীর নির্বাচন ২০০৭: জবাবদিহিমূলক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সুশীল সমাজের উদ্যোগ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন শিরোনামে এক বক্তৃতার মাধ্যমে নুতন আরেকটি বিষয়ের অবতারণা করেন। আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম করে রেখেছে। আর জনগণ অপেক্ষা করছে তথাকথিত সিভিল সোসাইটির যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাড়ায় তা জানার জন্য। শাসনব্যবস্থা সংক্রান্ত এই আলোচনা দুটি চলমান শাসনব্যবস্থার দূর্বলতাকেই সামনে নিয়ে এসেছে। এমন অবস্থায় শাসনব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন দাবী না করে প্রচলিত ব্যবস্থাকে জিইয়ে রাখার এই সব আন্দোলন জনগণকে পুনরায় ধোঁকা দেয়ারই আরেকটি ষড়যন্ত্র। মানুষ বিকল্প ব্যবস্থার সন্ধান চায়। হিযবুত তাহরীর, বাংলাদেশের গণমুখী আন্দোলনের ফলে খিলাফত সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এই নিবন্ধে আমি চলমান রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার মৌলিক দূর্বলতা আলোচনা করার পাশাপাশি খিলাফত ব্যবস্থার স্বরূপ ও রূপরেখা উপস্থাপন করবো।

 

১৯৯০-২০০৬: মূল্যায়ন প্রয়োজনঃ

স্বৈরতন্ত্রের পতনের পর বাংলাদেশে তিন তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। বিগত ১৫ বছরের শাসনব্যবস্থা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান জাতিকে কি দিয়েছে? আমরা কাদেরকে আমাদের শাসক হিসেবে পেয়েছি? সেই একই বিএনপি, একই আওয়ামী লীগ। পালাক্রমে এই দুই দল ক্ষমতায় এসেছে, তা যারাই প্রধান উপদেষ্টা আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হোক না কেন। এই দুই দল দেশ পরিচালনায় যখন চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে, তখন চাল-ডাল-চিনি-সার-ডিজেলের দাম বা বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসের ঘাটতি ইত্যাদি গণমানুষের ইস্যু থেকে জনগণের চোখ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চলছে সংস্কার আন্দোলন ও যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন। কৃত্রিম ইস্যু তৈরীর মাধ্যেমে দেশবাসীকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েই সম্মিলিত ও সচেতনভাবে বিভ্রান্ত করছে। তারা পালাক্রমে দেশের সম্পদ লুটেপুটে খাবে, এ যেন এক অলিখিত চুক্তি।

 

বিগত দেড় দশকের বিএনপি-আওয়ামী লীগের শাসন গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে আমাদের সামনে এক চরম হতাশাজনক চিত্র ফুটে উঠে। আজ দেশবাসী মরু সাহারায় এবং ভুমধ্যসাগরে বাংলাদেশী যুবকের করুণ মৃত্যু প্রত্যক্ষ করছে। এই দেশের মানুষ আজ মরুভূমিতে পঁচে মরতে রাজী, সাগরে না খেয়ে মরতে রাজী। প্লেনের চাকায় নিজেকে বেঁধে অথবা ডিপফ্রিজের মধ্যে ঢুকে হলেও এদেশ থেকে মানুষ পালাতে চায়। দেশের এই অবস্থার জন্য দায়ী বিএনপি-আওয়ামী লীগের দেশ শাসনে ব্যর্থতা। বর্তমান শাসনব্যবস্থার নিম্নবর্ণিত অন্তর্নিহিত উপাদানের কারনেই আজ দেশবাসীর এই করুণ অবস্থা:

 

১. সার্বভৌম ক্ষমতার অপপ্রয়োগ তথা স্বেচ্ছাচারিতাঃ

জাতি একজন স্বৈরশাসকের বদলে এখন তিনশ স্বৈরশাসককে দেখছে। এই তিনশ স্বৈরশাসক যা ইচ্ছা তাই করতে পারে, কারণ তারাই আইন প্রণেতা। তারা নিজের ইচ্ছামত আইন তৈরী করতে পারেন অথচ নিজেরা সকল আইনের উর্ধ্বে। তারা ইচ্ছামত কোটি কোটি টাকার টেলিফোন বিল বকেয়া রাখতে পারেন। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যক্তিগত আপ্যায়ন বাবদ খরচ করতে পারেন। কোটি টাকার শুল্কমুক্ত গাড়ী আমদানী করে ব্যবসা করতে পারেন। বেকার ও দরিদ্র জনগণকে তোয়াক্কা না করে নির্লজ্জের মতো নিজেদের বেতনভাতা বাড়িয়ে নিতে পারেন। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত এই তিনশ নীতিনির্ধারকরা যা বলবেন, তাই সমগ্র জাতির জন্য আইন।

 

২. চরম দায়িত্বহীনতাঃ

সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হওয়া সত্ত্বেও এই আইন প্রণেতারা কোন কিছুর দায়িত্ব নেননা। লঞ্চ ডুবিতে মানুষ মারা গেলে অথবা সন্ত্রাসীর গুলিতে শিশু মারা গেলে আমাদের বলা হয় আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের দাবী উঠলে আমাদের শুনতে হয় মার্কেট ইকোনমি বা বাজার অর্থনীতির তত্ত্ব যেখানে সরকারের কোন দায়-দায়িত্ব নেই, বাজার অর্থাৎ চাহিদা ও সরবরাহ ঠিক করবে পণ্যের মূল্য। উল্টো জনগণকে বাধাকপি খেয়ে থাকতে বলা হয়। আর গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী ধসে পড়লে এবং আগুনে পুড়ে শ্রমিক মারা গেলে সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে কখনো দেখা যায় না।

 

৩. জবাবদিহিতার চরম অভাবঃ

সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে শাসকগোষ্ঠী দায়িত্ব তো কাঁধে নেয়ইনা, উপরন্তু তাদেরকে কারো কাছে কোন জবাবদিহি করতে হয় না। কারো কাছে তারা দায়বদ্ধ নন। অনেকে মনে করেন যে, তথাকথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠীকে পাঁচ বছর পর পর তো জনগণের মুখোমুখি হতে হয়। তাই বলে কি তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ? বাস্তবতা বলে, কখনোই নয়। শাসনকালে হাজারো অন্যায় করলেও ভোটের সময় জনগণকে কালো টাকার বন্যায় ভাসিয়ে ও মাস্তানের ভয় দেখিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়ই ক্ষমতায় যেতে পারঙ্গম। শাসকগোষ্ঠীকে কখনোই সত্যিকার অর্থে জনগণের মুখোমুখি হতে হয় না। এরাই হলো আমাদের যোগ্য প্রার্থী !

 

দায়দায়িত্বহীন, জবাবদিহিতাবিহীন সার্বভৌম ক্ষমতা মানুষের হাতে অর্পণ করা হয় যে শাসনব্যবস্থায়, তার বিগত ১৫ বছরে ফল আর কি হতে পারে? সন্ত্রাস, মাস্তানি, চাঁদাবাজি দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে, দুর্নীতিতে স্বাভাবিকভাবে আমরা বিশ্বসেরা, খুন আর ধর্ষণের মতো অপরাধের কোন বিচার কেউ পায়না, সুবিধাবাদীরা নির্বিবাদে লুটপাট আর স্বার্থের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে আর জনগণ হয়েছে রাজনীতিবিমুখ। চুড়ান্ত বিচারে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, প্রচলিত শাসনব্যবস্থার উদ্দেশ্যই হচেছ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল - তা যে কোন উপায়েই হোক না কেন। মানবরচিত আইন, প্রতিষ্ঠান ও শাসনব্যবস্থা শুধু কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকেই লাভবান করে। আর বৃহত্তর জনগোষ্ঠী হয় জুলুমের শিকার, অধিকার বঞ্চিত। যতই সংস্কার হোক না কেন, যতই যোগ্য প্রার্থী আসুক না কেন, ফলাফল একটিই - বিএনপি অথবা আওয়ামী লীগের পূনরায় ক্ষমতায় আরোহণ। আজ দেশবাসী এই দুই দলের দায়িত্বহীনতা, প্রতারনা ও বিশ্বাসঘাতকতা থেকে মুক্তি চায়, তাদের স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি চায়। এদেশের মজলুম, নিপীড়িত, অধিকার-বঞ্চিত মানুষ তাদের মৌলিক সমস্যার সমাধান চায়। প্রচলিত শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে বিকল্প শাসনব্যবস্থা চায়। আর বৃহত্তর জনগণের চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাসের প্রতিফলনই হচ্ছে ইসলামী শাসনব্যবস্থা তথা খিলাফত সরকার ব্যবস্থা।

 

ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মূলনীতি

ল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা মানুষ ও বিশ্বজগৎ সৃষ্টির সাথে সাথে মানুষকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য দিয়েছেন খিলাফত শাসন ব্যবস্থা। আমি এখন প্রচলিত শাসনব্যবস্থার যে তিনটি ত্রুটি ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে, তারই প্রেক্ষিতে ইসলামের শাসনব্যবস্থার মূলনীতি তুলে ধরবো।

 

১. সার্বভৌম ক্ষমতা তথা আইন তৈরীর অধিকারঃ

ইসলামী শাসন ব্যবস্থার প্রধানতম মূলনীতি হচ্ছে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়াতায়ালা। তিনিই একমাত্র আইন প্রনেতা।

 

ল্লাহ্ সুবহানাহুওয়াতায়ালা বলেছেন:

 

ল্লাহ্ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করো না।” (সূরা ইউসুফ-৪০)

 

কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ। তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবেনা, যতক্ষন না তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার তোমার উপর ন্যস্ত করে।” (নিসা-৬৫)

 

ল্লাহ্ ও তার রাসুল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ কিংবা কোন মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোন অধিকার থাকবে না।” (আল-আহযাব-৩৬)

 

হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ্ ও পরকালে বিশ্বাস কর, তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ, আনুগত্য কর রাসুলের এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী; কোন বিষয়ে তোমরা যদি বিবাদে লিপ্ত হও, তাহলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট।” (নিসা-৫৯)

 

রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইরশাদ করেন,

 

তোমাদের কেউ ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমি যা আনয়ন করেছি তার অনুগত হয়।

 

সুতরাং, ইসলামী রাষ্ট্রে খলিফা নিজে কোন আইন তৈরী করতে পারবেন না। তাই তার স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী হবার কোন সুযোগ নেই। ইচ্ছামত নিজের বেতন বাড়িয়ে নেয়া, কোটি টাকার গাড়ীর ব্যবসা করা, লক্ষ লক্ষ টাকার বিল বকেয়া রাখা ইসলামী রাষ্ট্রে সম্ভব নয়।

 

২. দায়িত্ব পালনঃ

একই ভাবে দায়িত্বের দিক থেকে জনগণের সমস্ত মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব খলিফার।

 

রাসুল (সাঃ) বলেছেন:

 

সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্বন্ধে জবাবদিহি করতে হবে। ইমাম (খলীফা) যিনি সর্বসাধারণের উপর শাসক হিসেবে নিয়োজিত তিনিও দায়িত্বশীল, তাকেও তার দায়িত্ব সম্বন্ধে জবাবদিহি করতে হবে।

 

রাসুল (সাঃ) হাদীসে মানুষের তিনটি অধিকারের কথা বলেছেন : খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের অধিকার 

 

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর ভাষণে বলেছিলেন:

 

তোমাদের দুর্বলতম ব্যক্তি আমার কাছে সর্বাপেক্ষা শক্তিমান, আমি তার নিকট তার হক পৌঁছিয়ে দিবই। আর তোমাদের শক্তিধর ব্যক্তিও আমার নিকট দুর্বল, আমি তার থেকেও হক আদায় করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।

 

এভাবে ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা মানুষের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তিনি মানুষের মৌলিক চাহিদা অবশ্যই পূরণ করবেন। আর মৌলিক চাহিদা পূরণের পরেই অন্যান্য চাহিদা পূরণের দিকে রাষ্ট্র নজর দিবে। সুতরাং খিলাফত ব্যবস্থা প্রকৃতিগতভাবেই গণমুখী।

 

৩. জবাবদিহিতাঃ

খলিফা তার নিজের কাজের জন্য আল্লাহর কাছে এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। রাসুল (সাঃ) বলেছেন:

 

মুসলিম প্রজাদের দায়িত্বশীল কোন গভর্নর যদি তাদের ওপর যুলুম করে এবং তাদের হক আদায়ের ব্যাপারে খিয়ানত করে মারা যায়, তাহলে আলাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিবেন।

 

তিনি আরো ইরশাদ করেন:

 

যাকে আল্লাহ তাআলা প্রজাদের উপর শাসক বানিয়েছেন সে যদি তাদের পূর্ণাঙ্গভাবে কল্যাণ কামনা না করে, তবে জান্নাতের ঘ্রাণও তার নসিব হবে না।

 

এভাবে খলিফা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কাছে কাজের জন্য দায়বদ্ধ থাকেন। খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর (রাঃ) বলেছিলেন, যদি ফোরাতের তীরে বকরির একটি বাচ্চাও হারিয়ে যায়, তবে আমার ভয় হয় হয়তো আল্লা সুবহানাহু ওয়া তাআলা সে সম্বন্ধে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে জনগণের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ তথা মুসলিম ও অমুসলিম সকল নাগরিককে সব সময় সচেতন থেকে খলিফার কাছ থেকে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য ইসলাম জোর দেয়।

 

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,

 

জালিম শাসকের সামনে হক কথা বলা উত্তম জিহাদ।

 

তিনি (সাঃ) আরো বলেন,

 

শহীদদের সর্দার হামযা (রাঃ) এবং ঐ ব্যক্তিও, যে অত্যাচারী শাসকের সামনে দাড়িয়ে উপদেশ দেওয়ার পর (ঐ শাসক) তাকে হত্যা করে ফেলে।

 

খিলাফত ব্যবস্থার স্বরূপ

ইসলাম রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে শুধু মূলনীতিই দেয়নি, বরং একটি পরিপূর্ণ ও বাস্তবায়নযোগ্য সরকার কাঠামোও দিয়েছে। খিলাফত সরকারের কাঠামো আটটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। খিলাফত সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা নিম্নরূপ:

 

ইসলামী আদর্শভিত্তিক খিলাফত সরকার কাঠামোর মধ্যেই অর্ন্তনিহিত আছে জনপ্রতিনিধিত্ব এবং জবাবদিহিতা। বাস্তবতায় কিভাবে খিলাফত এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করে, তা এবার আলোচনা করব।

 

 

১. খলিফা নির্বাচনঃ

খিলাফত ব্যবস্থা রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র বা পরিবারতন্ত্র নয়। খলিফা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তিও যদি কোন উন্মুক্ত ময়দানে থাকে, তাহলে আমীর ব্যতীত চলা তাদের জন্য জায়েয নয়, বরং নিজেদের মধ্য থেকে তারা একজনকে আমীর নিযুক্ত করবে।

 

সুতরাং, ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য জনগণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী রাষ্ট্রপ্রধান তথা খলিফা নির্বাচন করবেন। খলিফা যেহেতু নিজে কোন আইন তৈরী করতে পারবেন না, তাই তার স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী হবার কোন সুযোগ নেই। খলিফা জনগণকে অভুক্ত রেখে ইচ্ছামত নিজের বেতন বাড়াতে পারবেন না অথবা তেল-গ্যাস-বন্দর আমেরিকা ও ভারতের হাতে তুলে দিতে পারবেন না। তার একমাত্র কাজ কুরআন ও সুন্নাহ মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করা, মানুষের দেখাশুনা করা এবং মানুসের সমস্যা সমাধান করা। এটাকে তিনি ইবাদত হিসেবে দেখবেন।

 

২. পরামর্শ সভাঃ

খলিফাকে পরামর্শ দেয়া, অভিযোগ করা ও অধিকার আদায়ের জন্য জনগণ পরামর্শ সভার প্রতিনিধিও নির্বাচন করবে। নারী-পুরুষ, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নাগরিক ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন এবং নির্বাচিত হতে পারবেন। জনপ্রতিনিধিবৃন্দ খলিফাকে শাসন সংক্রান্ত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অর্থনীতি, শিল্প এমনকি পররাষ্ট্রনীতি ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সম্পর্কেও পরামর্শ দিবেন। পরামর্শ সভার অন্যতম দায়িত্ব খলিফাকে জবাবদিহি করা। শুধু তাই নয় পরামর্শ সভা রাষ্ট্রীয় যেকোন কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পর্কে অভিযোগ আনতে পারেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে খলিফা তাৎক্ষনিকভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পদচ্যুত করতে বাধ্য।

 

৩. স্বাধীন নির্বাচন কমিশনঃ

নির্বাচন কমিশন খলিফার অধীনে থাকবেনা, পরামর্শ সভার অধীনে থাকবে। যেহেতু পরামর্শ সভায় দলভিত্তিক বিভক্তি থাকবে না, তাই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। খলিফা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রার্থী বাছাই জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা স্বাধীনভাবে সম্পন্ন হবে। এই ব্যবস্থায় প্রতিনিধি সভার সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশন খলিফার প্রভাবমুক্ত থাকবে। নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোন বিরোধ ইসলামী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত (Court of Unjust Act) নিষ্পন্ন করবেন। আদালত যেকোন নির্বাচনকে তদন্ত সাপেক্ষে অবৈধ ঘোষণা দেয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।

 

৪. খলিফা পদপ্রার্থীর যোগ্যতাঃ

শুধুমাত্র ইসলামী ব্যক্তিত্ব, বিশেষ করে যিনি বিশ্বাসযোগ্য (Trustworthy), দুর্নীতিপরায়ন নয় এবং পদের যোগ্য (Competent/Capable for the Post), কেবলমাত্র তারাই খলিফা পদপ্রার্থী হতে পারেন। পরামর্শ সভা এই যোগ্যতা যাচাই বাছাই করে তবেই খলিফা পদপ্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করবেন। সুতরাং যে ব্যক্তি ঋণখেলাপী, কালো টাকার মালিক, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ও দুর্নীতি পরায়ন, সে কখনোই খলিফা পদপ্রার্থী হতে পারবে না।

 

৫. খলিফার শাসনের সময়সীমাঃ

খলিফা এই শর্তাবলী পূরণ করে কুরআন-সুন্নাহ্ অনুযায়ী যতদিন জনগণকে শাসন করবেন, ততদিন তিনি এই পদে আসীন থাকবেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বর্তমান ব্যবস্থায় পাঁচ বছরের একটি সীমাবদ্ধতা আরোপ করা আছে। এর পেছনে যুক্তি হচ্ছে পাঁচ বছর পরে আবার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসতে হবে তথা এই প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। বাস্তবতা হচ্ছে পাঁচ বছরে সীমাহীন দুর্নীতি আর লুটপাট হয়; সময় যত কমতে থাকে, দুর্নীতি আর লুটপাটে ক্ষমতাসীনরা ততই মরিয়া হয়ে উঠে। এর আরেকটি দিক হচ্ছে দুর্নীতি করলে জনগণ পরদিনই ক্ষমতাসীনদের বিদায় করতে পারছেনা। অথচ ইসলামী ব্যবস্থায় খলিফা দুর্নীতি-লুটপাট তথা কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী কোন কাজ করলে পরদিনই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আর খলিফা ভাল কাজ করলে তাকে সরানোর কোন প্রয়োজন নেই। এই ব্যবস্থা সরকারের মধ্যে স্থিতিশীলতা দেয় যা উন্নয়ণের পূর্বশর্ত।

 

৬. স্বাধীন বিচার বিভাগঃ

ইসলামী রাষ্ট্রে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত (Court of Unjust Act, মাহকামাতিল মাযালিম), যেখানে জনগণ ও রাষ্ট্রের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়। এই আদালতে জনগণ খলিফাসহ সকল রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় জুলুমের প্রতিকার এবং অধিকার আদায়ের জন্য মামলা করতে পারবেন। এই আদালতের বিচারক খলিফাসহ যে কোন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদচ্যুত করতে পারবেন। খলিফার বিরুদ্ধে মামলা চলাকালীন সময়ে এই আদালতের বিচারককে পদচ্যুত করা যাবেনা। অভিযোগ ব্যাতিরেকে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যেকোন ধরনের জুলুম আমলে আনতে পারবেন, তদন্ত ও রায় দিতে পারবেন।

 

৭. রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বঃ

ইসলামী রাষ্ট্রে একাধিক রাজনৈতিক দল থাকতে পারে। এই রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ হবে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ।

 

ল্লাহ্ সুবহানাহুওয়াতায়ালা বলেছেন:

 

তোমাদের মাঝে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা কল্যানের প্রতি আহ্বান করবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দিবে আর অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং এরাই সফলকাম।” (সুরা আলি ইমরান-১০৪)

 

সুতরাং এই দলগুলোর মূল কাজ হচ্ছে খলিফা তথা শাসকদের জবাবদিহিতার মুখোমুখী করা। রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য কোন অনুমতিরও প্রয়োজন নেই।

 

৮. স্থানীয় প্রতিনিধি সভাঃ

প্রত্যেক প্রশাসনিক অঞ্চলে একটি করে স্থানীয় প্রতিনিধি সভা থাকবে যা ঐ অঞ্চলের জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত। আঞ্চলিক গভর্নর ও প্রশাসনকে জবাবদিহি করাই এই প্রতিনিধি সভার দায়িত্ব।

 

উপসংহারঃ

এটা স্পষ্ট যে প্রচলিত রাজনীতি স্বার্থের রাজনীতি, লুটপাটের রাজনীতি ও ক্ষমতার রাজনীতি। কে কার সাথে জোট করবে বা কে কিভাবে জোট ভাঙ্গবে, সবাই সে হিসাব নিকাশে ব্যস্ত। অন্যদিকে ইসলামের রাজনীতি দায়িত্ব গ্রহণ ও পালন করার রাজনীতি, জবাবদিহিতার রাজনীতি, মানুষকে সৎ পরামর্শ দেয়ার রাজনীতি। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহ ইসলামী আদর্শ, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং শারীয়াহ্ আহকামেরই প্রতিফলন। একমাত্র আল্লাহ সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রেই জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী, গণমুখী ও জবাবদিহিতামূলক সরকার ব্যবস্থা সম্ভব। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আজকে রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের অর্থহীন স্লোগান মাত্র। রাজনীতিবিদরা মানৃষের ভাগ্য নিয়ে এতটা ছিনিমিনি খেলছে যে একটি চিঠির উত্তর দিতে আজকাল কমিটি গঠন করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে বর্তমান লুটপাটের রাজনীতি টিকিয়ে রেখে যে রূপকল্প ২০২০ তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেটাও মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আনতে পারবেনা, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। আজকে তাই প্রয়োজন ইসলামের শাসনের দাবীতে গণআন্দোলন। সচেতন জনগণকে এই দাবীতে মাঠে নেমে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বর্তমান ব্যবস্থার পতন ঘটাতে হবে। তবেই জনগণের মুক্তি নিশ্চিত হবে।

 

মহিউদ্দিন আহমেদ

এপ্রিল ৬, ২০০৬

 

খিলাফত প্রতিষ্ঠায় মুসলিম সেনাবাহিনীর ভূমিকা পর্ব-১

খিলাফাহ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ

 

ভূমিকাঃ

২০০৭ সালে যখন চার দলীয় জোট ক্ষমতা থেকে বিদায় নিচ্ছিল এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট রাজপথে আন্দোলন করছিল, তখন বাংলাদেশের আপামর মুসলিম জনগণ হাসিনা-খালেদার পরিবর্তে একটি বিকল্প রাজনীতির ধারার জন্য অপেক্ষা করেছিল। এক-এগারোর সরকার এ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংস্কারের নামে ক্ষমতায় বসানো হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকারকে। মাত্র কয়েকদিনের মাঝেই ভারতীয় চক্রান্তে পিলখানা হত্যাকান্ডে সরকারের মদদ থেকে শুরু করে অতি সম্প্রতি ভারতীয় প্রেসিডেন্ট প্রতিভা পাতিল কর্তৃক শেখ হাসিনাকে ক্রুসেডার উপাধি প্রদান, পরিবর্তনের এ সরকারের প্রকৃত চেহারা উন্মুক্ত করেছে। এ চিত্র শুধু বাংলাদেশেরই নয় বরং সারা মুসলিম বিশ্ব জুড়ে একই অবস্থা। প্রায় ১০ বছরের সামরিক শাসনের পর পাকিস্তানের আসিফ জারদারীর গণতান্ত্রিক সরকার প্রকৃত অর্থে মুসলিমদের সাথে এক বিশ্বাসঘাতকার নাম। যাকে কাফের সাম্রাজ্যবাদী ক্রুসেডার মার্কিন-বৃটেনের দালাল ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। একইভাবে ২০০৭ সালে গাজার গণহত্যার সময় মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনী মোবারকের ভূমিকা, যাতে সে ইসরাইলের আগ্রাসন থেকে বাঁচার জন্য ফিলিস্তিনের নিরীহ মুসলিমরা রাফাসীমান্ত দিয়ে মিশরে প্রবেশের সময় সেনাবাহিনী দিয়ে বাঁধা প্রদান করতে চাইলে মিশরীয় সেনাবাহিনী তাতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরিণামে হোসনী মোবারক বেশ কিছু উর্ধ্বতন সেনা অফিসারদের বরখাস্ত করে। আর তাছাড়া আমরা জানি আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই, ইরাকের নূরে-আল মালিকী, সৌদি রাজা আব্দুল্লাহ সহ অসংখ্য মুসলিম শাসকদের কথা, যারা রসুল (সা) কে পরিত্যাগ করেছে, যখন ইউরোপ বিকৃত কার্টুন ছেপে আমাদের প্রিয় নবী (সা) এর অবমাননা করেছে। তারা কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে যখন মার্কিনীরা পবিত্র কুরআনকে টয়লেটে ফ্লাশ করেছে। তারা ডঃ আফিয়া সিদ্দিকীর মত বোনদের পরিত্যাগ করেছে যখন মার্কিনীরা তাকে গত ৭ বছর ধরে ধর্ষণ করে তারপর ৬০ বছরের জেল প্রদান করেছে। একটু চিন্তা করুন যখন শেখ মুজিবকে কটাক্ষ করে কবিতা লেখা হয়, তখন ঐ লেখককে খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। তার ফাঁসির ব্যবস্থা করার জন্য আন্দোলন করা হয়। অথচ যেসব দেশ রসুল (সা) কে অপমান তাদের নেতাদের সফর উপলক্ষ্যে তৈরী করা হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা, তাদেরকে ডাকা হয় বন্ধুহিসেবে। যখন কোনও এক দলের নেতা খুন করে তার বদলা নেয়া হয়। অথচ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ অন্যায় যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মুসলিম নিধনের ব্যাপারে তাদের শুধু নিরবতাই নয়, বরং মুসলিমদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসব কাফের মুশরিকদের মুসলিম সেনাবাহিনী, ভূমি, সম্পদ ও জনবল ব্যবহার করতে দিয়ে কাফেরদের সাহায্য করা মুসলিম, ইসলাম, কুরআন, রসুল (সা.) এবং সর্বোপরি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে গাদ্দারীর সমান।

 

মুসলমি বিশ্ব আজ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন-মার্কিনীদের “Divide and Rule” পলিসির কার্যকারীতা ও আমাদের মেরুদন্ডহীন দালাল শাসকগুলোর কল্যানে ৫৭ টির মত ভূখন্ডে বিভক্ত। আজকের মুসলিম বিশ্ব অর্থনৈতিক দিক হতে পশ্চাদপদ। পশ্চিমা কাফের মুশরিকরা মুসলিমদের সম্পদ, সম্মান লুণ্ঠনের জন্য কখনো বা একে অপরকে ডাকছে এবং কখনোবা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। ১৯২৪ সালে খিলাফত ব্যবস্থা পতনের পর, স্বৈরাচারী, রাজতান্ত্রিক, সামরিক এবং সর্বশেষ গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মুসলিম বিশ্বকে একটি বিভক্ত ও পদানত জাতিতে পরিণত করেছে। প্রকৃত অর্থে, মুসলিমদের জীবনে কোনও পরিবর্তন আসেনি। আর তাই যারা বারবার একই ব্যবস্থাপত্র দেন (গ্রহণ করেন), অথচ ভিন্ন ফল আশা করেন, তাদেরকে চিন্তার দিক থেকে দেউলিয়াগ্রস্থ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।

 

চলবে--------
 
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free