Misconception Among Muslims
মুসলিমদের দলবাজি,ফের্কাবাজী ও বিভক্তি ইসলামে পুরোপুরি নিষিদ্ধ
জ্যোতির্ময় কুরআন-এ আল্লাহ বলছেনঃ
Indeed, those who have divided their religion and become sects - you, [O Muhammad], are not [associated] with them in anything. Their affair is only [left] to Allah; then He will inform them about what they used to do. [6:159] |
নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার(মুহাম্মদ সাঃ) কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা'আয়ালার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে। |
(সূরা আনআমঃ ৬:১৫৯)
এ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তাদের সাথে কোন সম্পর্ক নাই যারা তাদের দ্বীনকে(ইসলামকে) বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। যেমন- এখন কেউ কোনো দলবাজ মুসলিমকে জিজ্ঞেস করে তুমি কে? সাধারণ উত্তর হলো, আমি একজন সুন্নি অথবা আমি শিয়া। অনেকেই নিজেদেরকে হানাফী অথবা শা’ফী অথবা মালেকী অথবা হাম্বলী অথবা আহলে হাদিস বা সালাফি ইত্যাদি হিসেবে পরিচিত হতে গর্ববোধ করেন। কেউ আবার দেওবন্দী। কেউ দেওলোভী।কেউ মওদুদী। বাংলাদেশে এখন আবার নতুন একটা চালু হইছে –হেফাজত।
অথচ আমাদের রাসূল সাঃ ছিলেন একজন পরিপূর্ণ‘মুসলিম। যিনি নিজেকে কখন-ই এর বাইরে পরিচয় দেননি। এখন ধরুন, যে কোন মুসলিমকে যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) কি ছিলেন? তিনি কি একজন হানাফী কথবা শাফী অথাবা হাম্বলী ছিলেন?
উওরে সে বলবে, “না”! তিনি ছিলেন একজন পাক্কা মুসলিম। আমরা যদি কোরআন-হাদিস ভালভাবে পড়াশুনা করি এবং গবেষনা করে দেখি তাহলে দেখতে পাব যে রাসুল সাঃ এর পূর্বে আগত আল্লাহর সকল নবী ও রাসূলগণও মুসলিম ছিলেন। আসলে মুসলিম মানেই হচ্ছে আল্লাহর প্রতি পুরোপুরি আনুগত্য করা।
বিদায় হজ্জের ভাষনে রাসুল সাঃ আমাদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক করে গেছেন। তার উল্লেখযোগ্য অংশ হলঃ
“সকল মানুষ হযরত আদম এবং হাওয়ার সন্তান। মানুষ হিসেবে একজন আরবের যেমন অনারবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই তেমনি অনারবেরও আরবের উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। যেমনি করে কালোর সাদার উপর; যদি না সে চারিত্রিক শুদ্ধতা এবং সতকর্মশীল হয়। জেনে রাখ, প্রত্যেক মুসলিম একে অপরের ভাইবোন। যা একক মুসলিম বিশ্বভ্রার্তৃত্ব তৈরি করবে। যতক্ষন এক মুসলিম অন্য মুসলিমকে বিনামুল্যে ও স্বেচ্ছায় কোন কিছু না দেয়, ততক্ষন তা তার জন্য বৈধ নয়। অন্যের এবং নিজের প্রতি অবিচার করবে না।”
“All mankind are from Adam and Eve - an Arab has no superiority over a non-Arab nor a non-Arab has any superiority over an Arab; also a white has no superiority over a black nor a black has any superiority over white except by piety and good action.
Learn that every Muslim is a brother to every Muslim and that the Muslims constitute one brotherhood. Nothing shall be legitimate to a Muslim which belongs to a fellow Muslim unless it was given freely and willingly. Do not, therefore, do injustice to yourselves”
--------------------------------------------------------------------------------------
এছাড়াও আল্লাহ কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বলছেনঃ
O you who have believed, fear Allah as He should be feared and do not die except as Muslims [in submission to Him]. [3:102] |
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
সুরা আলে ইমরান ৩:১০২ ----------------------------------------------------- |
And strive for Allah with the striving due to Him. He has chosen you and has not placed upon you in the religion any difficulty. [It is] the religion of your father, Abraham. Allah named you "Muslims" before [in former scriptures] and in this [revelation] that the Messenger may be a witness over you and you may be witnesses over the people. So establish prayer and give zakah and hold fast to Allah. He is your protector; and excellent is the protector, and excellent is the helper. [22:78] |
তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী। |
সুরা হজ্জ ২২:৭৮
----------------------------------------------------------------------
And Abraham instructed his sons [to do the same] and [so did] Jacob, [saying], "O my sons, indeed Allah has chosen for you this religion, so do not die except while you are Muslims." [2:132] |
এরই ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য এ ধর্মকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মুসলমান না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ করো না। |
সুরা বাকারা ২:১৩২
----------------------------------------------------------------------------
And who is better in speech than one who invites to Allah and does righteousness and says, "Indeed, I am of the Muslims." [41:33] |
যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম(আজ্ঞাবহ), তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার? সুরা গাফির ৪১:৩৩ |
------------------------------------------------------------------------------
উক্ত আয়াতগুলো থেকে নিঃসন্দেহে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, “মুসলিম” নামের বাইরে অন্য কোন নাম অস্তিত্বহীন। কারন, মুসলিম শব্দের অর্থই হচ্ছে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য। যেটা রাসুল সাঃ এর পূর্বের সকল নবী রাসুলদের বেলায়ও প্রযোজ্য ছিল।
রাসুল (সাঃ) অমুসলিম রাজা বাদশাহদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি পাঠাতেন। চিঠিতে তিনি সুরা আলে ইমরানের এই আয়াত উল্লেখ করতেনঃ
Say, "O People of the Scripture, come to a word that is equitable between us and you - that we will not worship except Allah and not associate anything with Him and not take one another as lords instead of Allah." But if they turn away, then say, "Bear witness that we are Muslims [submitting to Him]." [3:64] |
বলুনঃ ‘হে আহলে-কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস-যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান-যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও যে, ‘সাক্ষী থাক আমরা তো মুসলমান(অনুগত)। |
সুরা আলে-ইমরান (৩:৬৪)
"আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" এই হাদীস টির মূল ব্যাখ্যা টা কি ?
"আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" তিরমীযি শরীফে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদীস টিকে আমরা অনেককেই অপব্যাখ্যা হিসাবে এরকম ভাবে বলতে শুনি যে, যেমন যারা তাবলীগ জামাত করে তারা বলে তারাই হল সেই হকপন্থী দলটি যাদের কথা উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে। আবার যারা জামাত শিবির বা হেফাজত বা আহলে সুন্নাত করে তারা অনেকেই ভাবে যে তারাই হল সেই মুক্তিপ্রাপ্ত দলটি আর বাকী ইসলামী দল বা গোষ্ঠী গুলি সেই অভিশপ্ত ৭২ দলের মাঝে পড়েছে।
এরকম ভাবে প্রত্যেকে যে যে ইসলামী দল করে তারা ভাবে একমাত্র তারাই হল হাদীসে উল্লেখিত সেই মুক্তিপ্রাপ্ত দল টি। আসলে উপরোক্ত হাদীস টির মূল ব্যাখ্যা না জানার কারনে আমাদের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ঐ হাদীসে যে হকপন্থী দলটির কথা বলা হয়েছে এটা হল বিশ্বাস এবং অনুসরনের ক্ষেত্রে রাসুল সাঃ এর অনুসরন যেটা আমাদের সকল মুসলিমদের আক্বীদা হওয়া উচিত।যা কোরআনে বারংবার বলা হয়েছে,
There has certainly been for you in the Messenger of Allah an excellent pattern for anyone whose hope is in Allah and the Last Day and [who] remembers Allah often. [33:21] সুরা আহযাব ৩৩:২১ ------------------------------------- |
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। |
O Mankind, the Messenger has come to you with the truth from your Lord, so believe; it is better for you. But if you disbelieve - then indeed, to Allah belongs whatever is in the heavens and earth. And ever is Allah Knowing and Wise. -- [4:170] |
হে মানবজাতি! তোমাদের পালনকর্তার যথার্থ বাণী নিয়ে তোমাদের নিকট রসূল এসেছেন, তোমরা তা মেনে নাও যাতে তোমাদের কল্যাণ হতে পারে। আর যদি তোমরা তা না মান, জেনে রাখ আসমানসমূহে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সে সবকিছুই আল্লাহর। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞ, প্রাজ্ঞ। -- |
(An-Nisaa’ 4:170)
আর আল্লাহ আমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন ঐক্যবদ্ধ থাকার,
And hold firmly to the rope of Allah all together and do not become divided. And remember the favor of Allah upon you - when you were enemies and He brought your hearts together and you became, by His favor, brothers. And you were on the edge of a pit of the Fire, and He saved you from it. Thus does Allah make clear to you His verses that you may be guided. [3:103] |
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার। |
সুরা আলে ইমরান ৩:১০৩
আসলে এখানে ৭২ দল বলতে সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্টভাবে ৭২ সংখাকে নির্দিষ্ট করা হয় নাই। বরং নামে বেনামে মুসলিমদের অগনিত দলবাজী এবং বিভক্তির কথা বলা হয়েছে। সেটা কিছু উদাহরন দিলেই পরিস্কার হয়ে যাবে। যেমনঃ সুন্নি,রাফেজী, শিয়া, মুতাজিলা, খারেজী, কাদিয়ানী, -আর রাজনৈতিক ভাবে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী, হিযবুত তাহরীর,মুসলিম ব্রাদারহুড, চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজত, মুফতি আমীনের ইসলামী ঐক্যজোট, যে মাযহাব-ই অনুসরন করুন, সালাফী হন না কেন অথবা আপনি তথাকথিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের প্রমুখ যে দল গুলি ইসলামের নামে দলাদলিতে ব্যস্ত। এই গুলি সকল মুসলিম দেশেই আছে। সুতরাং এই ৭২ সকল মুসলিম দেশের দলগুলির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
কারন, শুধুমাত্র মুসলিম নামটাই দল হিসেবে পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট।
এখন আপনি হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে পরিত্রানের উপায় কি?
খুব-ই সাধারন উত্তর। কোরআনে যে ভাবে বলা আছে তার অনুসরন। এর ফ্রেমওয়ার্ক হবে রাসুল সাঃ কে অনুসরনের মাধ্যমে। কারন ইসলাম একটা পরিপূর্ণ জীবন-ব্যবস্থা। আপনি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, বিচারিক প্রক্রিয়া---এসকল বিষয়ে আল্লাহর দ্বীন অনুসরন করলেই কেবল মুক্তি।এটাই একমাত্র সহজ-সরল রাস্তা বা সিরাতুম মুস্তাকিম। যা কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত ও নির্দেশিত হয়েছে।
==============================================