Let your mind to be opened to explore the truth
This is my way (ISLAM); I invite to Allah with insight :12-No Sura Yousuf: Verse-108.”

WHICH SIDE YOU ARE ON ???




 

আপনি কোন পক্ষ?

যেকোন ঘটনার ব্যাখ্যায় পুরোপুরি নিরপেক্ষ থাকা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। ছোটবেলা থেকে বয়ে আনা চিন্তা, সমাজের ইমপোজিং মেন্টালিটি-এসব তার দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রভাব ফেলবেই। Sociology বইতে পড়েছি সমাজবিজ্ঞানীরা Social Imagination নামে একটা টার্ম ইউজ করেন, যেটার মানে যথাসম্ভব নিরপেক্ষতা অবলম্বনের জন্য নিজ গণ্ডির বাইরে নিজেকে কল্পনা করে সামাজিক বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা করা, যাতে বায়াসনেস সর্বোচ্চ এড়ানো যায়। এতকিছুর পরও নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে তাদের কিছু ভিউ গড়ে ওঠে, যেমন Functionalist view, Conflict view ইত্যাদি। Functionalist viewer রা সমাজের সবকিছুকে দেখেন কনট্রিবিউশন রাখার নিয়ামক হিসেবে, আবার Conflict viewer রা সবকিছুকে শ্রেণীবৈষম্যের প্রকটতার ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন।

9/11 পরবর্তী বিশ্বে দুটো ভিউ রয়ে গেছে। একটা হল Muslim/Quranic view, আরেকটা হল Kuffar view. বুশ বলেছিল পৃথিবীবাসী দুইভাগে বিভক্ত, একভাগ আমেরিকার পক্ষে, আরেকভাগ টেররিস্টদের পক্ষে। বুশের ভাষায় যারা সন্ত্রাসী, আর যারা তাদের সমর্থন করছে, তাদের View কেই আমি Muslim view বলছি। এরা প্রধানত বিবেককে খুলে রেখেছে, আমেরিকার কাছে বন্ধক দেয়নি। তাই অন্তত আমেরিকার দেওয়া চশমা দিয়ে তারা বিশ্বকে দেখতে বসেনি। এখন কথা হল এরা কি নিরপেক্ষ?.না, এরা নিরপেক্ষ নয় কারণ ঈমান আর কুফরের দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষ থাকার কোন সুযোগ নেই। ঈমান আর কুফর- তাবু এখন এ দুটিই। যেকোন একটা বেছে নিতে হবে। অথচ বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিম নিজেকে প্রান্তিক মেনে নিতে আপত্তি করেন, তারা তালিবানদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও বলেন আবার ঈমানের তাবুতে নিজেদের অবস্থান থাকার কথাও বলেন। এই কনফ্লিক্টের কারণ কেবল ভিউটা। বিষয়টা এমন যে, তারা Muslim কিন্তু জগতটাকে দেখেন Kuffar view দিয়ে। মানে সেক্যুলারদের কিনে দেওয়া বাইনোকুলারে চোখ লাগিয়ে যে বিশ্বটাকে দেখেন সেটাকে তারা সমগ্র সত্য জ্ঞান করে বসে আছেন।

মুসলিমদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হল তাদের একটা কুরআন আছে, যেটা কুফফাররা হাজার চেষ্টা করেও বিকৃত করতে পারেনি। পারবেও না, কেননা আল্লাহ্‌ স্বয়ং এটি সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। অথচ কুরআনকে রুখে দেওয়া না গেলে মুসলিমদের দমিয়ে রাখা যাবেনা, কেননা তারা কুরআন থেকে কী করা উচিত তা শিখে নেবে। মুসলিমরা যখন বিশ্ব শাসন করেছে তখন এই একটা কিতাবের ওপর তারা নির্ভর করেছিল। কাজেই মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণ করা তখনই সম্ভব যখন তাদের Quranic ভিউটাকে Kuffar ভিউ দিয়ে রিপ্লেস করা যাবে। অর্থাৎ মুসলিমদের চোখ আছে, তাই তারা দেখবে, কেবল কুরআন এর চোখ দিয়ে না দেখে সেক্যুলারদের চোখ দিয়ে দেখবে।

তাতাররা যখন বাগদাদ দখল করল বা ইউরোপিয়ানরা যখন জেরুজালেম দখল করল, তারা লক্ষ লক্ষ মানুষ মেরেছিল, এতে মুসলিমরা বিপর্যস্ত হলেও ইসলামের কোন ক্ষতি হয়নি। কারণ তারা মুসলিমের প্রাণ নিয়েছিল, কিন্তু View টা চেঞ্জ করতে পারেনি। ফলে মুসলিমরা অঞ্চলসমূহ পুনর্দখল করতে পেরেছিল। আজকে ফিলিস্তিন বছরের পর বছর ইহুদিদের হাতে বন্দি, সেটা উদ্ধার করা যাচ্ছে না। কারণটা এই যে, মুসলিমরা আজকে টেরই পাচ্ছে না যে মুসলিম ভূমিগুলো কুফফারদের হাতে চলে যাচ্ছে, তারা সমানে Kuffar View দিয়ে বিশ্বকে দেখছে আর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধকারীদের 'সন্ত্রাসী' ট্যাগিয়ে মাথা চাপড়াচ্ছে এই বলে-'এই লোকগুলোর কারণেই ইসলামের সুনাম বিনষ্ট হচ্ছে !! এদের কারণেই আজকে মুসলিমরা সন্ত্রাসী বলে আখ্যা পায়'। সুবহানআল্লাহ্‌ !! কাফিররা আজকে মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে, মা-বোনদের ধর্ষণ করছে, শিশুদের জবাই করছে, তাতে মুসলিমরা কোন "সুনাম বিনষ্ট" হওয়াকে টের পাচ্ছে না, অথচ কুফফাররা, আল্লাহ্‌ কর্তৃক লানতপ্রাপ্ত ইহুদি-খৃস্টানরা ইসলাম নিয়ে বাজে মন্তব্য করলে ইসলামের সুনাম বিনষ্ট হয় !! এই যে আমরা কুফফারদের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি নিয়ে এত বিচলিত, এটাই হল Kuffar View দিয়ে মুসলিম বিশ্বকে দেখার ফল।      

Muslim View আর Kuffar View এর Conflict সবচেয়ে ভালো বোঝা যায় যেকোন ঘটনায় রেসপন্স এর পার্থক্য দিয়ে। আমি সম্প্রতি বিহারীদের ওপর হওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। এক ভাই সেখানে এসে মন্তব্য করলেন, বিহারীদের আগুনে পুড়িয়েছে বলে আমি ক্ষোভ ঝাড়ছি, কিন্তু যখন জামাত-শিবির গাড়িতে আগুন দেয় বা মানুষ পোড়ায় তখন আমি চুপ থাকি কেন?

মূলত তার কথাটির জবাব দিতে গিয়েই আমি এ লেখাটি লিখতে বসেছি। তার অভিযোগটি Valid নয় একারণে যে, আমাকে যারা চেনেন তারা জানেন আমি আদর্শগতভাবে জামায়াত-শিবিরকে অপছন্দ করি। তাদের হরতাল বা এজাতীয় কর্মসূচীর বিরোধিতা সবসময়ই করেছি আর এগুলোকে কোন ইসলামী দলের কর্মকাণ্ডের নমুনা বলেও আমি মনে করিনা।

এখন কথা হল আমি তাদের সমালোচনা কীভাবে করব? এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একজন মুসলিম হিসেবে আমার সমালোচনা আর পরগাছারূপী একজন সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীর সমালোচনা এক হবে না। যদি হয় তবে বুঝতে হবে আমি সেক্যুলারদের ভিউ দিয়ে ইসলামিক দলকে দেখছি, আর কুফরের তাবু থেকে বেরোতে পারিনি। আমি জামায়াত-শিবিরের সমালোচনা করি তাদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলাম কায়েমের প্রচেষ্টার কারণে, বিএনপির সাথে হাত মেলানোর কারণে। যখন তারা হরতাল দেবে আমি বলব ভুল করেছে, যদি তারা মানুষ পোড়ায় আমি তাহলে বলব অপরাধ করেছে, এর শাস্তি হওয়া দরকার।

কিন্তু একজন সেক্যুলার কখনোই এ কারণে বিরোধিতা করবে না, বরং সে করবে কারণ দলটি ইসলামী রাষ্ট্র চায়, কুফর ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেনা। একটা টকশো তে এক সেক্যুলার বলেছিল, জামায়াতে ইসলামীর একটা 'হীন' উদ্দেশ্য আছে, আর তা হল একটা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা। চিন্তা করুন, সে বলছে "হীন উদ্দেশ্য", অথচ যেকোন ইসলামী দলের আলটিমেট লক্ষ্য এটাই। আর সেকারণেই জামায়াতসহ সকল ইসলামী দল তাদের কাছে এক কাতারে পড়ে যায়, তখন তারা হিজবুত তাহরীর নিষিদ্ধ করে, এরপর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলে। জামায়াতের বিরুদ্ধে একাত্তরের প্রসঙ্গ তারা আনে, কিন্তু এইচটি বা অন্যান্য ইসলামিক দলের বিরুদ্ধে তো সে অভিযোগ নেই। তা সত্ত্বেও এদের বিরোধিতার কারণ একটাই, সবারই ঐ 'হীন উদ্দেশ্য' আছে, যা হল একটি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা। কাজেই তাদের জামায়াতের বিরোধিতার কারণ 'ইসলাম', অন্য কিছু নয়। এ সহজ কথাটা যারা এখনো বুঝতে পারেনা তাদের জন্য করুণা হয়।     

তাই Muslim View থেকে আমি জামায়াতের সমালোচনা করলেও বলব তাদের পদ্ধতি ভুল কিন্তু লক্ষ্য ঠিক; আর জামাত হোক, এইচটি হোক বা অন্য যেকোন ইসলামিক দল হোক, যারা ইসলাম কায়েম করতে চায়, তাদের সবাইকে আমি আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে ভালোবাসি। তারা আমার ভাই। আর যারা ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সেই Islamophobea তে আক্রান্ত সেক্যুলারদের আমি ঘৃণা করি, তারা আমার যত কাছেরই হোক না কেন। অন্যদিকে একজন মুসলিম যে Kuffar View থেকে ব্যাপারটাকে দেখবে সে বলবে 'জামাত-শিবির নিষিদ্ধ কর, তারা সন্ত্রাস করে, মানুষ পোড়ায়, একাত্তরের চেতনাবিরোধী' ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা এজন্য যে তারা নিজেদের মস্তিষ্ক বন্ধক দিয়ে রেখেছে কুফফারদের কাছে, সেক্যুলারদের ধরিয়ে দেওয়া চশমা দিয়ে দুনিয়া দেখছে আর তাদের শিখিয়ে দেওয়া বুলি আউড়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসের কারণেই যদি নিষিদ্ধ করতে হয় তবে সবার আগে নিষিদ্ধ করা উচিত ছাত্রলীগ, আর একাত্তরের পর থেকে সেক্যুলার জানোয়ারদের করা হত্যা, লুট আর সন্ত্রাসের কাছেধারেও কোন ইসলামী দল নেই, থাকবেও না-এতটুকু উপলব্ধির ক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলেছে। তবু গণতন্ত্রের নামে মানুষহত্যার পাহাড় গড়া প্রধান রাজনীতিক দুটো দল বহাল তবিয়তেই থাকবে, আর শাহবাগ থেকে দাবি উঠবে ইসলামী দল নিষিদ্ধ কর, আর তাতে সায় দেবে দেশের মডারেট মুসলিমরা। এটাই Kuffar View দিয়ে দেখার ফল।

এবার একটা সহজ উদাহরণ দিই। আমি এমন একজন ব্যক্তির কথা বলতে যাচ্ছি যিনি মাত্র তের বছর বয়সে তিনি সংগঠনে যোগ দেন। সতের বছর বয়সে সংগঠনের লিফলেট বিলি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা খান। যদিও তৎক্ষনাৎ ওই পুলিশকে মেরে সেখান থেকে পালিয়ে যান। আঠার বছর বয়সে নিজের সংগঠনের জন্য ডাকবিভাগের অর্থ লুট করেছিলেন উনিশ বছর বয়সে তার অঞ্চলের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভুল লক্ষ্যে বোমা নিক্ষেপ করার কারণে দু'জন নির্দোষ মহিলা সে হামলায় নিহত হন। বিচারের রায় হিসেবে ঐ বৎসরেই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মানুষটি কে ? 

এখন আপনি যদি খুব সাবলীলভাবেই মন্তব্য করে বসেন যে, “নিঃসন্দেহে কোন নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের ব্রেইনওয়াশড প্রোডাক্ট। অল্প বয়সেই সাম্প্রদায়িকতার ফাঁদে পাড়া দিয়ে উগ্রপন্থার পথে পা বাড়িয়েছিলো। এরা দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর।” তাহলে বুঝতে হবে আপনি জগতটাকে Kuffar View দিয়ে দেখছেন। কুফফাররা আপনার মগজটাকে কিনে নিয়ে সেখানে তাদের পছন্দসই Nerve Connection সেট করে দিয়েছে, সেটা দিয়ে আপনি তাদের মত করে ভাবেন, তাদের মত করে দেখেন।

মানুষটি হচ্ছেন ক্ষুদিরাম বসু, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা যার নাম ! পাঠ্যপুস্তকে একে আমরা বীর হিসেবে পড়ি। এই লোকটি বৃটিশদের ওপর বোমা হামলা করেছিল, সেটাকে আমরা দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে দেখি। অথচ আক্রান্ত মুসলিম ভূমিতে অস্তিত্ব রক্ষার্থে অস্ত্র হাতে নিচ্ছে যারা, তাদের 'টেররিজমে' আমরা বিরক্ত। এদের কারণেই নাকি ইসলামের মানহানি হচ্ছে, এদের কারণেই নাকি আজ দাড়ি দেখলে আমেরিকা ভিসা দিতে চায় না। 

US Force এর থিঙ্কট্যাঙ্ক RAND ৯/১১ পরবর্তী মুসলিম বিশ্বের সাথে আমেরিকার যে Ideological Conflict শুরু হয়েছিল তাতে জেতার জন্য দুটো প্রস্তাব করেছিল। এক, মুসলিমদের View টাকে চেঞ্জ করে দিতে হবে। তাদের কাছে ইসলামকে নতুন করে উপস্থাপন করতে হবে, যেমনটা আমেরিকা আশা করে।  দুই, যারা আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়বে মুসলিমদের কাছেই তাদের অজনপ্রিয় করে তুলতে হবে।

 আমেরিকা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে এই দুটো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে। ইসলামকে নিজেদের পছন্দমত Define করতে তারা নিজেরা কিছু 'আলিম বানিয়েছে, যারা ইসলাম প্রচার করবে ঠিকই, তবে সেটা হবে পাশ্চাত্য ভাবধারার ইসলাম। এছাড়া Orientalism এর প্রচারকদের দিয়ে ইসলাম প্রচার করাতে হবে, আর জিহাদসহ বেশকিছু ইসলামের টার্মের অর্থ বদলে দেওয়া। তাই আজকে আমরা দেখি দাঈরা ইসলাম প্রচার করছে, তারা খিলাফাহকে ফ্যান্টাসি বলছে, পশ্চিমাদের অনুকরণে মুসলিমদের উন্নত হতে পরামর্শ দিচ্ছে, জিহাদকে এই যুগের জন্য অপ্রযোজ্য প্রমাণ করতে কাজ করছে। মোটকথা একটাই উদ্দেশ্য, মুসলিমদের View কন্ট্রোল করা। তারা যাতে ইসলামকে বোঝে কুফফারদের মগজ দিয়ে, বিশ্বকে দেখে কুফফারদের চোখ দিয়ে। র‍্যান্ডের পরিকল্পনার একটা অংশ খুব পপুলার হয়েছিল, যদি দেখ রাস্তার একপাশে মোল্লা উমার আছে, তবে আরেকপাশে মোল্লা ব্র্যাডলিকে দাঁড় করিয়ে দাও, যে মোল্লা উমারের বিরোধিতা করবে। সোজাকথা, মোল্লা উমার ইসলামকে ব্যাখ্যা করবে Quranic view দিয়ে, কাজেই মোল্লা ব্র্যাডলিকে লাগিয়ে দাও যে ইসলামকে ব্যাখ্যা করবে Kuffar view দিয়ে।

  মুসলিমদের নিজেদের কাছে অজনপ্রিয় করে ফেলার প্রক্রিয়াতেও তারা সফল হয়েছে বলা যায়, কারণ আজকে মুজাহিদদের সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করে মুসলিমরাই। যে তালিবানরা শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছে, ইউ এস আর্মির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে, তাদেরকে 'সন্ত্রাসী' বলে মুসলিমরাই বেশি ট্যাগায়। তালিবানদের সাথে সম্মুখ সমরে না পেরে কিছু রাস্তার লোকের ওপর বোমা হামলা করে তালিবানের নাম চাপিয়ে দেওয়া হয়, আর Kuffar Viwer মুসলিমরা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে "হুম হুম তালিবানরা নিরীহ মানুষ মারে, ধর্মের নামে সন্ত্রাস করছে" ব্লা ব্লা ব্লা। তালিবানরা কোন জায়গায় শরীয়াহ আইন প্রতিষ্ঠা করে সেখানে একজন ব্যাভিচারিনীর শাস্তি দিলে সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনের মাতম উঠে যাবে। আমরা সায় দিয়ে বলব-তালিবানরা বর্বর, তারা মেয়েদের বেরোতে দেয় না; অথচ মুসলিম দেশগুলিতে মেয়েদের কীভাবে হত্যা করছে সাদা চামড়ারা, বোন আফিয়া-ফাতিমাদের একদিনে অসংখ্যবার ধর্ষণ করছে কারাগারে নিয়ে, সেখানে আমাদের "নারী অধিকার সত্ত্বা" জাগ্রত হয়না, কারণ আমরা দেখছি Kuffar view দিয়ে, যেখানে মুসলিম যোদ্ধা বর্বর, শরীয়াহ আইন মধ্যযুগীয় আর কাফিরদের সব নীতি অনুকরণীয়। ফলে মুখে আমেরিকাকে গাল দিয়ে আবার আমেরিকার ভিসা নিতে সবার আগে লাইনে দাঁড়াই আমরা।   

Kuffar View View দিয়ে মুসলিমদের জগত দেখানোর আরেকটা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ওদের পছন্দসই কিছু ব্যক্তির কাজ এবং কথার Social Acceptance তৈরি করা। যেমন বুশ বলছে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ওবামা হোয়াইট হাউজে ইফতার পার্টি ডাকে। মুসলিমরা গদগদ হয়ে যায়। কথা হল, বুশ বলার কে? যে লোকটা লক্ষ লক্ষ মুসলিমের রক্ত দিয়ে স্নান করেছে, সে ইসলামের শান্তি নিয়ে বলার কে? জগতের এক নম্বর টেররিস্ট আমেরিকা আমাদের ইসলাম শেখানোর কে? তারা আজকে বোঝাতে চায় শরীয়াহ আইন বর্বর, সেটা নারীকে প্রাপ্য অধিকার দেয়নি। কিন্তু এটা নিয়ে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? যাদের দেশে নারী মানেই ভোগের পণ্য, উলঙ্গ নারী নিজের যৌবন দেখিয়ে পয়সা কামায় রাস্তাঘাটে, যেদেশে ধর্ষণের রেট সবচেয়ে বেশি, তারা ইসলামে নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলার সাহস পায় কোত্থেকে? 

একইভাবে কিছু সেক্যুলার ঝোলা গোফওয়ালা লোক আজকে টিভির টকশোতে এসে আমাদের ইসলাম শেখায়, কুরআনের আয়াত উদ্ধৃতি করে। বলে ব্লাসফেমির জাগতিক শাস্তির বিধান কুরআন-হাদিসে কোথাও নেই। আমরা মাথা নাড়ি। বলি ঠিকই তো বলেছে। অথচ রাসূল (সা) বলেছিলেন ইবনে খাতালাকে হত্যা করতে, যদি সে কা'বার গিলাফ ধরে ঝুলে পড়ে তবুও। ইবনে খাতালার অপরাধ ছিল সে রাসূল কে (সা) ব্যাঙ্গ করে গান বানাতো। এসব আমরা জানিনা কারণ আমরা ইসলাম শিখি, রাসূলের (সা) সীরাত শিখি সেক্যুলারদের কাছে, তারা আমাদের যেভাবে চিন্তা করতে শেখায় তার বাইরে আমরা কিছু চিন্তা করতে চাইনা।

Acceptance এর কথা বলছিলাম। যেমন মালালা। মালালাকে তালিবানরাই গুলি করেছিল কি না, কিংবা করলে কী কারণে করেছে-এসব ভারি ভারি আলোচনায় আমি যাব না। আমি কেবল ভিউ এর Conflict টা দেখাব। সেটা এই যে, আপনি যখন Muslim View ব্যাপারটাকে দিয়ে দেখবেন, তখন আপনি যদি এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তালিবানদের সমালোচনা করেন, আপনি বলবেন এভাবে- 'তালিবান অমুক কারণে তাকে গুলি করলে ঠিক করেনি, ব্যাপারটা এভাবে Proceed করা উচিত ছিল'... কিন্তু আপনি যদি Kuffar view ঘটনাটা দেখে থাকেন, তখন বলবেন 'তালিবানরা বর্বর, তারা মেয়েদের গুলি করে, মালালা পড়াশোনা করতে চেয়েছিল বলে গুলি করেছে, এদের থেকে নারীদের মুক্ত করা দরকার' ব্লা ব্লা ব্লা। একটা ১৪ বছরের মেয়ে কারো হাতের ইশারা ছাড়াই ব্লগিং করে দুনিয়া উলটে ফেলল কীভাবে কিংবা ঘটনার একমাসের মাধ্যে মালালার প্রকাশিত ছবিতে গুলির চিহ্ন কেন নেই-এ জাতীয় প্রশ্ন আপনার কাছে অবান্তর মনে হবে। যাক, সূক্ষ্ম প্রশ্ন অবান্তর মনে হতেই পারে। কিন্তু এটুকু অন্তত মনে আসা উচিত ছিল, যে আমেরিকানরা লক্ষ লক্ষ মালালার কবর খুঁড়ছে প্রতিদিন মুসলিম দেশগুলোতে, এক মালালার প্রতি তাদের দরদ কেন উথলে উঠবে? কিংবা সোয়াত উপত্যকায় বসে কোন সাপোর্টে সে দাড়িওয়ালা লোককে ফেরাউন কিংবা হিজাবকে প্রতিবন্ধক উল্লেখ করতে পারে? বারাক ওবামার অনুরাগী এক কিশোরীর রক্ত দেখে আমাদের "মুজাহিদীন বিরোধী" সত্তা জেগে উঠে! কিন্তু আফগানিস্তান,সিরিয়া, ফিলিস্থিন, আরাকানের হাজার হাজার ইসলামী রক্ত দেখে কি ততোটা জেগে উঠে "ইসলামী সত্তা"??? সেটা উঠবেনা কারণ আপনি দুনিয়া আমেরিকার view দেখছেন দিয়ে, তাই মালালা আপনার কাছে Acceptance পেয়ে গেছে, তার কথা আপনার সমর্থন পাবেই, সেটা তালিবানের নাম করে ইসলামের বিরুদ্ধে হলেও। মালালাকে আমেরিকা "নারী অধিকারের" প্রতীক ঘোষণা করলে আপনি গদগদ হয়ে বলেন 'Proud to be Muslim' অথচ এই আমেরিকানরা যারা মেয়েদের গণহত্যা আর গণধর্ষণ করে চলেছে কয়েক দশক ধরে, তারা 'নারী অধিকার' নিয়ে কথা বলার ধৃষ্ঠতা দেখালে তাতে আপনার হৃদয়ে আঘাত লাগেনা, আপনি আমেরিকার সুদৃষ্টি লাভ করেই খুশি।  

দেশীয় প্রেক্ষাপটে Social Acceptance এর উদাহরণ দিতে গেলে সবার আগে যে নামদুটো আসবে তা হল- মুহাম্মাদ জাফর ইকবাল আর প্রথম আলো। জাফর ইকবাল প্রথমে সায়েন্স ফিকশন লিখে আর বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তরুণদের মধ্যে একটা Acceptance তৈরি করে নিয়েছে, এরপর সে কলাম লেখা শুরু করে শিবির পচানোর নাম করে ইসলাম পচাক, হিজাবের বিরুদ্ধে বলুক আর দাড়িকে কটাক্ষ করুক সেটা আপনার গায়ে লাগবে না, কারণ আপনি অলরেডি ব্যাপারগুলোকে Secular View দিয়ে দেখা শুরু করেছেন। তাই দেখেছি জাফরের ভক্তদের সামনে তার সামান্যতম সমালোচনা করা হলেও তারা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে-একমাত্র যুদ্ধাপরাধী ব্যতীত কেউ জাফর ইকবালের সমালোচনা করতে পারেনা !একইভাবে প্রথম আলো সরকার-বিরোধিদল উভয়ের সমালোচনা করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, এরপর আদ্যন্ত কম্যুনিস্ট এ পত্রিকাটি স্লিভলেস পোশাক কিংবা মেহতাব খানমের যৌনতার উস্কানি - যা ই ছাপাক পাঠক তা খাবে, প্রথম আলো বলছে কথা !! কাজেই হেফাযতের তাণ্ডবের বানোয়াট খবর সে ছাপাবে, তার ওপর সম্পাদকীয় লিখবে, অথচ রাতের অন্ধকারে গুলি নিক্ষেপের ঘটনা চেপে যাবে, আপনি সেটা দেখে তাদের মত করে চিন্তা করবেন, তারা আপনাকে তাদের view দিয়ে দেখতে বাধ্য করেছে।    

যারা Kuffar view দিয়ে জগতটাকে দেখে তাদের কন্ট্রোল করা অনেক সহজ, সামনে একটা মূলা ঝুলিয়ে দিলে সেটার পেছনে ছুটবে, অথচ মূলা ঝুলিয়ে যে গাধা বানানো হয়, সে বেমালুম ভুলে থাকবে। যেমন গণতন্ত্র। পেটে লাথি-গুতা দিয়ে সব কেড়ে নিলেও kuffar viewer রা সিস্টেমের বিরুদ্ধে বলবে না, বলবে অমুক দলটা ভালো না, তাই ভোট দিয়ে অমুক দলকে আনতে হবে; তবু সমাধান গণতন্ত্রেই, কেবল প্রকৃত গণতন্ত্র হতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আপনি কুফফারদের সাহায্য নিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারেন। কিন্তু গিয়ে যদি ইসলামের পক্ষে বলেন তো সাথে সাথেই গদি থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে, যেটা আমরা মিশরে ব্রাদারহুডের বেলায় দেখলাম। আবার উসামা বিন লাদেন যতক্ষণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন আমেরিকান মিডিয়া তাঁকে সম্বোধন করল Warrior বলে, কিন্তু যখনই তাঁর দল রাশিয়া থেকে মুক্ত হওয়া অঞ্চলসমূহে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন, এক মুহূর্তের মধ্যে তাঁরা হয়ে গেলেন Terrorist ! কিন্তু Kuffar view দিয়ে বিশ্ব দেখা মুসলিমরা এরপরেও বিশ্বাস করবে পশ্চিমারা মুসলিমদের ভালো চায়, তাই তারা আরব বসন্ত আনছে, আর সাদা চামড়াদের সুদৃষ্টি লাভ করাকে পরম লক্ষ্য জ্ঞান করবে।

একইভাবে বাংলাদেশে দুদিন পরপর মিডিয়া একেকটা নিউজ আনবে অমুক জায়গায় জঙ্গি গ্রেপ্তার আর একটা ধারনা ছড়িয়ে দেবে দেশে জঙ্গি গিজগিজ করছে, Secular viewer মুসলিমরা আতঙ্কিত হয়ে বলবে জঙ্গিবাদ দমন কর, আর সরকার তখন সব কাজের জাস্টিফিকেশন পেয়ে যাবে। "ঐ দেখ-জঙ্গি জঙ্গি !!" বলে রাস্তা থেকে একেকটা হুজুর ধরে নিয়ে পেটাবে, আর আপনি বলবেন- বাহ বাহ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরই ফাঁকতালে টিকফা চুক্তি হবে, দেশের সব নদীর পানি ভারতকে দিয়ে দেওয়া হবে, আপনি সমানে মুড়ি চিবোতে চিবোতে I hate politics বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন, যেন পলিটিক্স না বোঝাটা কত গর্বের বিষয় !! ভাত নেই, কাপড় নেই--তাতে কী হয়েছে?? জঙ্গিবাদ তো দমন করা গেছে!!   

Kuffar View দিয়ে জগতকে দেখার সবচেয়ে বড় আউটপুট হচ্ছে, আপনি কুফফারদের ভালোবাসতে আর মুসলিমদের ঘৃণা করতে শিখবেন। কুফফাররা যা ই করুক, আপনি সেটাকে জাস্টিফাই করতে পারবেন, আর মুসলিমদের নিতান্ত ন্যায্য কাজগুলোকে আপনার কাছে বাড়াবাড়ি, বর্বরতা ইত্যাদি মনে হবে। কারণ এটাই যে, আপনি ওদের চোখ দিয়ে দেখছেন, ওদের মগজ দিয়ে ভাবছেন। আমেরিকানরা যখন অমুক দেশে বিধ্বংসী অস্ত্র আছে কিংবা অমুক দেশে জঙ্গিবাদ দমন করা প্রয়োজন বলে সেনাবাহিনী নামিয়ে হাজার হাজার সিভিলিয়ান মারবে, ড্রোন হামলা করবে, তখন আপনি বিষয়টাকে নিতান্তই রাজনৈতিক বিষয় বলে এড়িয়ে যাবেন, আর যখন আক্রান্ত দেশগুলোতে কিছু মানুষ মজলুমের কান্নায় সারা দিয়ে, তাদের পক্ষ নিয়ে হানাদার আমেরিকান কিংবা শিয়া রাফেজীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে তখন আপনি কতরকম War rule violation আর Ethical mistake নিয়ে হাজির হবেন আর কুফফারদের শিখিয়ে দিয়ে বুলি আউড়ে মুখে ফেনা তুলবেন। যে মার্কিন সেনা কারাগারে আমাদের ভাই-বোনদের অবর্ণনীয় নির্যাতন করছে, তাদের কাজ আপনার কাছে মানবাধিকার লঙ্ঘন মনে হবে না, বরং তাদের তৈরি করে দেওয়া মানদণ্ডে আপনি অধিকার নিয়ে উচ্চবাচ্য করবেন, যেখানে সশস্ত্র একজন মার্কিন সেনা হবে সদাচরণের চরম হক্বদার, আর ইরাক-পাকিস্তানের মৃত শিশুরা কুকুরের সমতুল্য। সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান ব্যাপারটিকে যেভাবে বলেছেনঃ মুসলমানের মানবাধিকার থাকতে নেই।

শেষ কথাঃ  ভাই ও বোনেরা, যারা আমার লেখাটি পড়ছেন এবং যাদের কাছে কথাগুলো পৌঁছে যাবে, সবাইকে বলছি, আমার বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। ঈমান ও কুফর-দুটি তাবুর একটাতে আমাকে-আপনাকে আশ্রয় নিতে হবে। কেবল নিজেকে মুসলিম দাবি করলেই অবস্থান নিরাপদ হয়ে যাবে না, আপনি যদি Kuffar view দিয়ে জগতটাকে দেখার অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারেন, আমি বলছি, আপনি কুফরের তাবুতেই রয়ে গেছেন, বিশ্বাস করুন। কারণ আপনি ভালোবাসছেন তাদেরকে, যারা আল্লাহ্‌র দুশমন, যারা ইসলামের দুশমন। আর ঘৃণা করছেন নিপীড়িত মুসলিমদের, অথচ তারা আর্তনাদ করছে আপনার সাহায্যের জন্যই। তাদের জন্য কিছু করতে না পারুন, অন্তত View টা বদলান, জালিমদের শিখিয়ে দেওয়া মানদন্ডে জগতটাকে বিচার না করে বিশ্বকে দেখুন, পরিষ্কার হয়ে যাবে কে বন্ধু আর কে শত্রু।

বুশের মত আমিও বলছি, বিশ্ব আজ দুটি পক্ষে বিভক্ত, একটি আমেরিকার পক্ষ তথা কাফিরদের পক্ষে, যারা সেক্যুলারদের চশমা দিয়ে জগত দেখে, তাদের মুভি আর মিডিয়ার পর্দা চোখের সামনে ঝুলিয়ে মুসলিমদের বিচার করে। আরেকটা হল মুসলিমদের পক্ষ, যারা Quranic view দিয়ে বিশ্বকে দেখে, যারা তাদের করণীয় গ্রহণ করে আল্লাহ্‌র কিতাব থেকে। আল্লাহ্‌ ওয়াদা করেছেন তিনি প্রথম দলটাকে বিজয়ী হতে দেবেন না, তারা যতই চেষ্টা করুক। এখন এই Ultimate Success এর দলে কারা যারা থাকতে চায়, তারা কাফিরদের উন্নতির মানদণ্ড মানবে না, তাদের রংদার দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে সভ্যতার মাপকাঠি ভাবতে শিখবে না, বরং তাদের সেভাবেই চিনবে, যেভাবে কুরআন চিনিয়েছে ইহুদি-খৃস্টানদের। 

কে কোন দলটাতে নাম লেখাতে চায়, সে সিদ্ধান্ত আজই, এই মুহূর্তেই নিতে হবে।

The choice is yours



 
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free