Let your mind to be opened to explore the truth
This is my way (ISLAM); I invite to Allah with insight :12-No Sura Yousuf: Verse-108.”

একাদশ অধ্যায়

রসুল (সা) এর জীবনীই একমাত্র আদর্শঃ

আমরা সবাই আমাদের সমাজের পরিবর্তন চাই। সমাজে পরিবর্তনও এসেছে। বাকশাল গিয়ে সামরিক শাসন এসেছে। সামরিক শাসনের পর স্বৈরশাসন এসেছে। স্বৈরশাসনের পর গণতন্ত্র এসেছে। গণতন্ত্রের পর আবার এসেছে পশ্চিমা ধাঁচের শিক্ষিতদের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার শাসন। তারপর এসেছে জেলের মাঝে থেকে পাপমুক্ত হওয়া আসামীদের আবারও সেই গণতন্ত্র। কিন্তু একটি জিনিস বদলায়নি। আর তা হল সাধারণ মুসলিমদের ভাগ্য। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আগে মানুষ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত ছিল, এখন দেশের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। তাই আমরা যারা বিশ্বাস করি যে, ইসলাম এক শ্বাসত জীবন ব্যবস্থা, এটি কোনও কালের জন্য নয় বরং পৃথিবীর শেষ সময় পর্যন্ত এর সমাধান, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালায় বিশ্বাসী, বুদ্ধিমান মানুষের জন্য এটিই একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান। আর তাই তাদের জন্য ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থাই একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,

 

নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম... ” [সূরা আল মায়েদা: ১৯]

 

যেহেতু আমরা খিলাফত প্রতিষ্ঠায় ক্ষমতার অধিষ্ঠিত ব্যাক্তিদের ভূমিকার ব্যাপারে আলোচনা করছি আর তাই আমাদের রসুল (সা) এর জীবনীতে ফিরে যাওয়া উচিত। যাতে করে আমরা খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পদ্ধতির ব্যাপারে এমন একটি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করি যা খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সফলতা পেয়েছে। তাছাড়া রসুল (সা) রসুল (সা.) এর জীবনেই রয়েছে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। তাছাড়া রসুল (সা) যেহেতু এই পৃথিবীতে একবারই এসেছেন, এবং একবারই ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন (আজকের নেতাদের মত কোনও গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরী করেননি, তৈরী করেননি কোনও সেক্যুলার সমাজ!)। আর তাই খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একাধিক পদ্ধতি থাকা অসম্ভব। এটি তখনই সম্ভব হত যদি রসুল (সা) একাধিকবার একাধিক উপায়ে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতেন।

 

রসুল (সা) ৬১০ সালে নবুয়্যত প্রাপ্তির পর থেকে ৬২৩ সালে মদিনায় প্রথম ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১৩ বছরের জীবনে তিনি যেসকল কাজ করেছেন তারই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অনুগ্রহে মদিনাতে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। যা মানব জাতিকে এনেছে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। এ দীর্ঘ সময়ে রসুল (সা) অনেক কাজ করেছেন। যার মাঝে কিছু কাজ আছে যা একজন ব্যাক্তি হিসেবে তিনি তা সম্পন্ন করেছেন। যেমন তিনি খেয়েছেন, তিনি ঘুমিয়েছেন, তিনি বিবাহ করেছেন। এসব কাজের মাঝে অনেক কিছুই আছে যা আমাদের জন্য অনুকরণীয়। কিন্তু এগুলো ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পর্কিত নয়। আবার তিনি খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করেছেন তার মাঝে কিছু কাজ তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে করেছেন, আর কিছু কাজ তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজগুলোর মাঝে ধারাবাহিকতা রাখা প্রয়োজন। রসুল (সা) এর খিলাফত প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে তিনটি ধাপে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।

 

প্রথমত: গোপনে দাওয়াত ও দল গঠন পর্যায়।

 

দ্বিতীয়ত: সমাজের প্রচলিত মানব রচিত নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনমত তৈরীর প্রচেষ্টা। যেমন শিরক, সুদ, ব্যভিচার, নারীদের সাথে অন্যায় ব্যবহার, লেনদেনে অসততা, অন্যের সম্পদ ভক্ষণ, নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যাক্তিদের স্বেচ্ছাসারিতা, মানব তৈরী আইন ইত্যাদির বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালনা।

 

তৃতীয়ত: মক্কায় রসুল (সা) এর দল নিষিদ্ধ হয়ে, সিয়াবে আবু তালেবে অবস্থানকালে মক্কার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত গোত্র প্রধান ও প্রভাবশালী ব্যাক্তিবর্গের নিকট ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নুসরাহ (সমর্থন) প্রাপ্তির চেষ্টা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অনুগ্রহে মদিনায় আনসারদের সহযোগিতায় প্রথম খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। আলোচ্য নিবন্ধে তৃতীয় তথা শেষ ধাপ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

 

মদিনায় প্রথম খিলাফত প্রতিষ্ঠায় রসুল (সা) কে আনসারদের গোত্র প্রধান ও সেনাপতিদের নুসরাহ্ (সমর্থন) প্রদানঃ

রসুল (সা) মক্কায় তার সর্বশক্তি দিয়ে ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালনা করেন। রসুল (সা) এর প্রচেষ্টা এবং সুস্পষ্ট পথনির্দেশনা এমন ছিল যে, তা পরবর্তী যুগে খিলাফত প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিতদের জন্য এক অবশ্য অনুকরণীয় হয়ে আছে। নবুয়্যতের ১০ম বছরে রসুল (সা) ও তাঁর দল [সাহাবা (রা.)] ব্যাপক পরীক্ষার সম্মুখীন হন। রসুল (সা) এর চাচা আবু তালিব মারা যান। যিনি রসুল (সা) কে এক ধরণের নিরাপত্তা প্রদান করে আসছিলেন। তাছাড়া মক্কার কাফের ও মুশরেকরা নবীজি (সা) ও তাঁর দলকে মক্কায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, মক্কা থেকে বিতাড়িত করে শিয়াবে আবু আলেবে এক ধরণের বন্দীদশায় প্রেরণ করে। এ ঘটনার পূর্বে রসুল (সা) মোটামুটি নিরাপত্তার মাঝেই ইসলামের দাওয়াত প্রচার করছিলেন। কিন্তু এখন তিনি অনুধাবন করলেন যে, মক্কার সমাজ এ বাণীকে ঐভাবে গ্রহণ করেনি। না মক্কার জনসাধারণের মাঝে এটি কোনও ধরণের স্থায়ী জনমত তৈরি করতে পেরেছে। আর এই অবস্থাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রসুল (সা) কে নুসরাহ (সাহায্য বা সমর্থন) আদায়ের দিকে মনোনিবেশ করার আদেশ দেন। নুসরাহ্ শব্দটি একটি আরবী শব্দ। এখানে নসর শব্দের অর্থ হল অন্যায় অত্যাচারের শিকার ও নির্যাতিতের সাহায্য করা এবং আনসার শব্দের অর্থ হল সে গ্রুপ বা দল যারা অত্যাচারের শিকার ও নির্যাতিতের সাহায্য করে। একটি ক্রিয়া ও অপরটি কর্তা।

 

সিরাতে ইবনে হিশামে বর্ণিত আছে যে, ইবনে ইসহাক বলেন, ‘যখন আবু তালেব মারা যান, তখন মক্কার কোরাইশরা রসুল (সা.) ও সাহাবা এর উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার শুরু করে। রসুল (সা) এই পরিস্থিতিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নির্দেশে ইসলামের প্রতি সমর্থন আদায় এবং নিরাপত্তার জন্য তায়েফ গমন করেন। রসুল (সা.) তাঁর পালিত পুত্র যায়েদসহ একাই তায়েফে গমন করেন এবং তাদের কাছে ইসলামকে উপস্থাপন করেন। ইবনে হাজারের ফাতাহ উল বারী, তুহফাত উল আহওয়াদী, আল কওয়ালাম এবং আল হাকিমে ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, এবং আবু নূয়াইম এবং বায়হাকীতে নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলী ইবনে আবি (রা) তালিব রাসুল (সা) কে আরবের বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের কাছে ইসলামের বাণী নিয়ে যাবার আদেশ দিলেন তখন আমি ও আবু বকর রাসুল (সা) কে মিনা পর্যন্ত বিভিন্ন গোত্রের কাছে পৌঁছে দিলাম।

 

আলী ইবনে আবু তালিব কর্তৃক বর্ণিত উপরোক্ত হাদিস অনুযায়ী এটা প্রতিষ্ঠিত যে, আরবের গোত্রসমূহের কাছে নুসরাহ্ (সমর্থন) প্রদানের আহবান এই আহবানের সময় আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত। ইসলামকে ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত করে শারীআহ্র পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ঐ নির্দেশিত সময়ে রসুল (সা.)কে নুসরাহ্ (সমর্থন) আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

 

রসুল (সা.) তাঁর এ দায়িত্ব শুরু করেন মক্কার পাশে অবস্থিত তায়েফ গোত্র থেকে। তায়েফ গোত্র ছিল তৎকালীন আরবের অন্যতম শক্তিশালী গোত্র। এরা ক্ষমতা, প্রভাব, সম্মান এসব দিক থেকে মক্কার কোরাইশ গোত্রের সমতূল্য ছিল। মক্কার নেতা ওয়ালিদ বিন মুগিরার বক্তব্য থেকে তা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যখন সে কোরআনকে অস্বীকার করে বলে যে, কেন এই গ্রন্থ মক্কা বা তায়েফের কোনও সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তির উপর নাযিল হয় নি?

 

রসুল (সা.) মক্কা থেকে তায়েফ গমন করেন এবং সেখানে তিনি তায়েফের গোত্র প্রধানদের কাছে ইসলামকে তুলে ধরেন, ইসলাম গ্রহণ করে এর নিরাপত্তা বিধানের জন্য তাদেরকে আমন্ত্রন জানান। তারা আল্লাহর রসুল (সা) কে প্রত্যাখ্যান করে এবং তার উপর অত্যাচারের বোঝা চাপিয়ে দেয়। রসুল (সা.) তায়েফ থেকে ফিরে আসেন এবং মক্কার অদূরে আল মুতিম ইবনে আদির বাসায় অবস্থান করেন। এটাই ছিল নুসরাহ্ গ্রহণের প্রথম প্রচেষ্টা। এটাই ইতিহাস। এটাই রসুল (সা.) এর শিক্ষা ও সুন্নাহ্।

 

খিলাফত প্রতিষ্ঠায় মুসলিম সেনাবাহিনীর ভূমিকা পর্ব-২

পূর্ব প্রকাশের পরঃ

 

খিলাফাহ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ

 

তারপর রসুল (সা) আরও উদ্যমে হজ্বের সময় মক্কার বাহিরে বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের সাথে সাক্ষাৎ করেন তৎকালীন আরব সমাজের এসব গোত্র প্রধানরা মূলত বর্তমান সময়ের বিভিন্ন সরকার প্রধান ও সামরিক নেতৃত্বের দায়িত্বে অবস্থান করা ব্যাক্তিদের সমতুল্য

 

ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণিত সিরাতে ইবনে হিশামে রসুল (সা.) এর বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের কাছে যাওয়া এবং তাদের কাছ থেকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নুসরাহ্ প্রার্থনা করার বিশদ বর্ণনা রয়েছে ইবনে ইসহাক বলেন, ‘তায়েফ হতে ফিরে এসে রসুল (সা.) একনিষ্ঠভাবে নুসরাহ্র বিষয়টি প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের নিকট উপস্থাপন করতে লাগলেন এ ব্যাপারে হজ্বের সময়টি রসুল (সা.) পুরোদমে কাজ করার জন্য ব্যবহার করেন তিনি আরবের বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের কাছে ইসলাম এবং এর পরিপূর্ণ ব্যবস্থা উপস্থাপন করতে শুরু করেন তৎকালীন আরব সমাজে এমন একজন ব্যাক্তিও নেই যে, তিনি হজ্বের সময় এসেছেন এবং নিজস্ব গোত্রে তার সামান্যতম প্রভাব আছে অথচ রসুল (সা.) তার সাথে সাক্ষাৎ করেননি

 

সিরাতে ইবনে হিশামে ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণিত যে রসুল (সা.) ক্বালব গোত্রের কাছে গিয়েছিলেন, যারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তিনি গিয়েছিলেন আল ইয়ামামাহর হানিফা গোত্রের কাছে, যারা রসুল (সা) এর সাথে এমন খারাপ আচরণ করেছিল যা ইতপূর্বে কেউ করেনি রসুল (সা.) বনী আমের ইবনে সাসা গোত্রের কাছে যান যারা রসুল (সা) এর উপর তাদের জন্য কর্তৃত্বের দাবীর শর্ত জুড়ে দিয়ে রসুল (সা.) এর বাণীকে গ্রহণ করতে রাজী হন রসুল (সা.) তাদের এমন শর্ত সাপেক্ষে ইসলাম গ্রহণকে নিজেই প্রত্যাখ্যান করেন অতঃপর রসুল (সা.) ইয়েমেন থেকে আগত বনী কিন্দাহার কাছে যান এবং ইসলাম গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন ও এর নিরাপত্তা বিধানের জন্য সমর্থন চান তারাও সাসা গোত্রের মত রসুল (সা) এর উপর তাদের জন্য কর্তৃত্বের দাবীর শর্ত জুড়ে দিয়ে ইসলাম গ্রহণে সম্মত হন রসুল (সা) এবারেও তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি বকর বিন ওয়াইল এর নিকট যান এবং তারা রসুল (সা.)কে প্রত্যাখ্যান করেন এই কারণে যে, তাদের অবস্থান তৎকালীন সুপার পাওয়ার পারস্যের নিকটবর্তী ছিল রসুল (সা.) বনী রাবীয়াহ্ গোত্রের কাছে যান এবং তারা নবীজির কথার কোন উত্তর দেননি রসুল (সা) তারপর বনু সাইবান গোত্রের কাছে যান এবং তারা রসুল (সা.)-কে গ্রহণ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে রাজী হন, তবে ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা রসুল (সা.)-কে বলেন যে, তারা আরবের বিরুদ্ধে ইসলাম ও রসুল (সা.)-কে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত কিন্তু পারস্যের বিরুদ্ধে নয় রসুল (সা) তাদেরকে বলেন, ‘তোমাদের সত্যকে গ্রহণ করার ধরণ তাকে প্রত্যাখ্যান করার সমতুল্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার এই ইসলামের ব্যাপারে কারও প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে ইসলামের সব কিছুকে গ্রহণ ও একে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত থাকে

 

রসুল (সা.) এরপর নুসরাহ্ পাবার জন্য তাঁর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন এটা এমন ছিল যে, তিনি একটি নিরবিচ্ছিন্ন মিশনের সফলতার দিকে এগিয়ে যাবার দায়িত্ব পালন করছিলেন এতগুলো প্রত্যাখ্যান তাঁর দৃঢ়তার ব্যত্যয় ঘটাতে পারেনি না তিনি এই পদ্ধতি সম্পর্কে এতটুকু পর্যন্ত সন্দেহ পোষণ করেছেন তিনি হতাশও হননি, না তিনি পথ পরিবর্তন করেছেন

 

আল ওয়াতাদিতে যাদ আল মাদ বর্ণনা করেন যে, ‘রসুল (সা.) যে সব গোত্রের কাছে ইসলাম গ্রহণ, প্রতিষ্ঠা ও এর নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েছেন তার মাঝে রয়েছে বনী আমের ইবনে সাসা, মুহারিব ইবনে হাফসা, ফাজারাহ, গাসসান, মুরাহ, হানিফাহ, সুলাঈম, আবস বনু নজর, বনু বিকা, বনু কিন্দাহ, বনু কালব, হারিতা ইবনে কাব, উজরাহ, হাজরামিচ এরা কেউই রসুল (সা.)কে সমর্থন করেননি

 

এত কিছুর পরও যখন আল্লাহর রসুল (সা) থেমে যান নি তখনই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার এই দ্বীনকে (জীবন বিধানকে) সাহায্য করতে শুরু করেন সিরাতে ইবনে হিসামে ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণিত যে, যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার প্রেরিত ইসলামের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা করলেন এবং রসুল (সা.)কে তাঁর দায়িত্ব পূরণের জন্য অনুগ্রহ করলেন তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হজ্বের সময় রসুল (সা.)-এর সাথে মদিনার আনসারদের পরিচয় করিয়ে দেন তিনি আল আক্বাবায় খাজরাজ গোত্রের সাথে সাক্ষাৎ করেন, যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সম্মানিত করার ইচ্ছে পোষণ করেন তাদের সামনে রসুল (সা) ইসলামের ব্যবস্থা উপস্থাপন করেন তারা আল্লাহর রসুল (সা) এর আহবানকে গ্রহণ করেন এবং তাদের সাথে আউস গোত্রের দীর্ঘদিনের শত্রুতা সমাধানের জন্য মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন পরবর্তী বছর হজ্বের সময় তারা ১২ জনকে নিয়ে ফেরত আসেন এবং রসুল (সা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করেন তারা রাসুল (সা.)-কে মান্য করা এবং ইসলামের বাস্তবায়নে রসুল (সা.)কে সাহায্য করার অঙ্গীকার করেন এটা ইতিহাসে আক্বাবার প্রথম শপথ হিসেবে পরিচিত তারপর তারা মদিনাতে ফিরে যান এবং রসুল (সা) মুসায়েব ইবনে উমার (রা)কে তাদের কাছে প্রেরণ করেন যাতে করে মদিনার সমাজকে ইসলামের জন্য তৈরি করা হয় এরই মধ্যে মদিনার অনেক গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ রসুল (সা) এর সাথে সাক্ষাৎ করে ইসলাম ও মুহাম্মদ (সা)কে রক্ষা ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন

 

মদিনায় ইসলাম দ্রুত প্রসারিত হতে লাগল মুসায়েব (রা.) মাত্র এক বছরের মাঝে মদিনায় ইসলামের ভীতকে শক্ত ও শক্তিশালী করার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেন এরই মাঝে পরবর্তী বছর ৬২২ সালে নব্যুয়তের ১২ তম বছরে ৭৩ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলাসহ মোট ৭৫ জন মুসলিম মদিনা থেকে আবার রসুল (সা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন রসুল (সা.) তাদের সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করে ইসলামের প্রতি তাদের আনুগত্য এবং আন্তরিকতার ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করেন তারা রসুল (সা.) এর সাথে তাশরিকের দিনগুলোতে রাতের শেষভাগে আল আক্বাবায় সাক্ষাৎ করার প্রতিশ্রুতি দেন রসুল (সা.) তাদের বলেন, ‘কাউকে জাগাবেনা, এবং কারও জন্য অপেক্ষা করবে না তারা রাতের শেষভাগে আল আক্বাবায় অপেক্ষা করতে থাকেন যতক্ষণনা পর্যন্ত রসুল (সা) তার চাচা ইবনে আব্বাস সহ সেখানে হাজির হলেন প্রথমে ইবনে আব্বাস বললেন, ‘হে খাজরাজের লোকেরা! আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, মুহাম্মদের অবস্থান আমাদের মাঝে কেমন? আমরা মুহাম্মদের নিরাপত্তা দিয়েছি তিনি তার লোকদের মাঝে সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে অবস্থান করছেন কিন্তু তিনি আপনাদের সাথে যেতে চাচ্ছেন আপনারা যদি মনে করেন যে আপনারা যে প্রতিশ্রুতি তাকে দিয়েছেন এবং তার প্রতিপক্ষদের নিকট থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবেন তবে আমাকে আপনাদের দায়িত্বের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন যে তিনি আপনাদের সাথে যাবার পর তার সাথে প্রতারণা করবেন এবং তাকে শত্রুর সামনে ত্যাগ করবেন তবে তাকে এখনই ত্যাগ করুন তারা বলল, “হে ইবনে আব্বাস আমরা আপনার কথা শুনেছি হে আল্লাহর রসুল (সা) এখন আপনার মুখ থেকে কথা শুনতে চাই আপনি আপনার ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য যা ভাল তা গ্রহণ করুন রসুল (সা.) দাঁড়ালেন এবং পবিত্র কুরআনের থেকে তার বক্তব্য শুরু করলেন সিরাতে ইবনে হিশামে ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন যে, রসুল (সা.) তাদের কাছে এ মর্মে শপথ গ্রহণ করেন যে, “আমি আপনাদের এই মর্মে ইসলামের আনুগত্য করার জন্য আহবান জানাচ্ছি যে, আপনারা ইসলাম গ্রহণ করবেন এবং আমাকে নিরাপত্তা দেবেন যেভাবে আপনারা আপনাদের মহিলা ও সন্তানদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন আল বারা ইবনে মার রসুল (সা.)-এর হাত ধরেন এবং বলেন, “নিশ্চয়ই যিনি আপনাকে এই সত্যসহ রসুল হিসেবে প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, আমরা আপনাকে রক্ষা করব যেমনিভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের রক্ষা করে থাকি হে আল্লাহর রসুল! আমাদের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করুন আল্লাহর কসম আমরা যুদ্ধের সন্তান এবং যুদ্ধের অস্ত্রসমূহ আমাদের জন্য খেলনা এটাই আমাদের ও আমাদের পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য আল বারার এই বক্তব্যের মাঝেই আবু আল হাইতাম ইবনে তাইহান বলেন, হে আল্লাহ্র রসুল (সা.), আমাদের সাথে মদিনার অন্যান্য গোত্রের (ইহুদী) সম্পর্ক আছে আর আমরা যদি তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করি তবে আল্লাহ্ যখন আপনাকে বিজয় দেবেন তখন আপনি যদি আমাদের ছেড়ে আপনার লোকদের মাঝে ফিরে আসেন? রসুল (সা) হাসলেন এবং বললেন, ‘না তোমাদের রক্তই আমার রক্ত তোমাদের নিকট যা পবিত্র তা আমার নিকট পবিত্র আমি তোমাদের থেকে আর তোমরা আমার থেকে আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করব যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে, আর আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করব যারা তোমাদের সাথে শান্তি কামনা করে

 

আব্বাস ইবনে উবাদা তখন দাঁড়িয়ে বলেন যে, ‘হে মদিনার লোকেরা! তোমরা কি বুঝতে পারছ যে, তোমরা এই ব্যাক্তিকে আনুগত্য করার ব্যাপারে কি ধরণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছ? এটার অর্থ হল সমস্ত আরবের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া যদি তোমরা মনে কর যে, এর মাধ্যমে তোমরা তোমাদের সম্পদ হারাবে, তোমাদের সম্মানিত ব্যাক্তিরা নিহত হবে এবং তোমরা এই দায়িত্ব হতে অব্যাহতি চাইবে তবে তা এখনই কর আর যদি তোমরা তা পরে কর, তবে তা তোমাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের লজ্জার কারণ হবে যদি তোমরা মনে কর যে তোমরা এ দায়িত্বের প্রতি আস্থাশীল থাকবে যদিওবা এর মাধ্যমে তোমরা তোমাদের সম্পদ হারাবে তোমাদের সম্মানিত ব্যাক্তিরা নিহত হবে, তবে তাকে গ্রহণ কর নিশ্চয়ই এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ায় ও পরকালে লাভবান করবেন তারা বলল, “হে আল্লাহর রসুল (সা) আমরা আপনাকে গ্রহণ করব, তবে হে আল্লাহর রাসুল (সা)! আপনার প্রতি আমাদের এই আনুগত্যের বিনিময় কি? রাসুল (সা) দৃঢ়তার সাথে বললেন, “জান্নাত তারপর তারা আল্লাহর রাসুল (সা) এর হাতে হাত রাখলেন এবং তাদের আনুগত্য প্রকাশ করলেন এই বলে যে, “আমরা আপনাকে বিপর্যয় ও ভাল সময়ে, কঠিন ও সহজ সময়ে মানার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমরা সর্বদা সত্য কথা বলব এবং প্রতিরোধে ভীত হবনা তাদের আনুগত্যের শপথ শেষে রসুল (সা.) বললেন, “তোমাদের মাঝে খাজরাজ হতে ৯ জন ও আউস হতে ৩ জন নেতা আমার কাছে নিয়ে আস এই ১২ জনকে রসুল (সা.) বললেন, তোমরা তোমাদের লোকদের অভিভাবক, যেমনিভাবে ঈসা ইবনে মারিয়ামের ১২ জন অনুসারী নেতা ছিল, আর আমি আমার জনগণের জন্য দায়িত্বশীল আর এভাবেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবায়ন করেন এবং ইসলামকে রাষ্ট্র মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন

 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হুকুম অনুযায়ী রসুল (সা.) নুসরাহ্ (সমর্থন) আদায়ের অবিরাম প্রচেষ্টা এবং এ কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা, যদিও নানাবিধ হতাশা এবং নিপীড়ন তাকে অভিষ্ঠ লক্ষ্য হতে একচুলও নড়াতে পারেনি, এটাই প্রমাণ করে যে নুসরাহ্ (সমর্থন) আদায়ের কাজটি সুনির্দিষ্ট এবং তা ফরজ এটাই হচ্ছে খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী জীবন ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করার একমাত্র পথ এবং এ পথ থেকে এক চুলও বিচ্যুত হওয়া জায়েজ নয় বর্তমান সময়ে যেদল ইসলামী জীবনব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত ও খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে তাদের অবশ্যই রসুল (সা.) এর দেখানো পথ অনুযায়ী সমাজের প্রভাবশালী গোষ্ঠির (বর্তমান সময়ে মুসলিম বিশ্বের সেনাবাহিনী) নিকট নুসরাহ্ (সমর্থন) আদায়ের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে হবে ইসলামী জীবনব্যবস্থাকে পুনরুজীবিত করার জন্য নুসরাহ (সমর্থন) আদায় একটি রাজনৈতিক কাজ ইসলামী চিন্তার ভিত্তিতে যখন সমাজে জনমত গঠিত হয় ও এই চিন্তার সমর্থনকারী একটি গোষ্ঠি গঠিত হলেই এই নুসরাহ্র কাজ শুরু করতে হয় এই নুসরাহ্ (সমর্থন) একমাত্র সেনাবাহিনী থেকেই আসা সম্ভব এবং মুসলিম বিশ্বের যে সেনাবাহিনী একাজটি করবে তাদের পুরষ্কার হবে দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার, আর জান্নাতের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার আর কী হতে পারে!

 

খিলাফত প্রতিষ্ঠায় মুসলিম সেনাবাহিনীর ভূমিকা পর্ব-৩

পূর্ব প্রকাশের পরঃ

 

খিলাফাহ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ

 

সতর্ক পরিকল্পনা ও সাহসী বাস্তবায়ন:

নুসরাহ্ একটি ইসলামিক দায়িত্ব। এটি ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিদের জন্য একটি অবশ্যকরণীয় কর্তব্য। কেউ যদি তার সামর্থ্য থাকার পরও এ দায়িত্ব পালন না করে তবে এটি বড় গুনাহের কাজ। ইসলাম ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিদের দুটি দায়িত্ব দিয়েছে। যার একটি আরেকটি হতে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রথমত, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যা নাযিল করেছেন তা দিয়ে যারা শাসন করেনা সেসব শাসকদের কাছ থেকে তারা ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব কেড়ে নিবেন। দ্বিতীয়ত, যে বা যারা ইসলামী খিলাফতের জন্য কাজ করছে এ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তাদের কাছে হস্তান্তর করবেন।

 

আর এ দুটি দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে নুসরাহর কর্তব্য সম্পাদিত হয় এবং যে ব্যক্তি এ দুটি কাজ সম্পাদন করবে তাকে বলা হবে আনসারুল্লাহঅর্থাৎ আল্লাহ্র সাহায্যকারী। তাদের মর্যাদা মদিনার আনসারদের মর্যাদার সমান। এভাবে একবার খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে তাদের মর্যাদা ও সম্মান হবে সাদ ইবনে মুয়ায (রা.), সাদ ইবনে উবাদা (রা.), আসাদ ইবনে জুরারাহ (রা.) ও উসায়েদ ইবনে হুজায়ের (রা.) এর মত, যারা রাসূল (সাঃ) কে প্রথম খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য সাহায্য করেছিলেন।

 

আজকে পশ্চিমাদের জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়নকারী মুসলিম বিশ্বের বর্তমান যালেম শাসকদের অপসারণ করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতা গ্রহণ এবং তা খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত দলের কাছে হস্তান্তর করার জন্য প্রয়োজন একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা। এর জন্য প্রয়োজন অপরিসীম সাহস এবং বাস্তবায়ন করার জন্য ইসলাম অনুসারে বৈধ নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ। তাছাড়া ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিদের মাঝে যারা নুসরাহ্ প্রদান করতে চায় তাদের সাথে খিলাফতের প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত দলের একটি সুসংগঠিত সহযোগীতার পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। সর্বোপরি নুসরাহ্ গ্রহণের জন্য যাবতীয় শারীআহ্ সিদ্ধ প্রাথমিক কার্যাবলী সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। আর এসবের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ইচ্ছা ও অনুগ্রহে প্রতিষ্ঠিত হবে নবুয়্যতের আদলে খিলাফত। ইনশাআল্লাহ্।

 

আর তাই এদুটি কাজ, পরিকল্পনা এবং দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন আমাদেরকে রাসূল (সাঃ) এর সময়ে একই কাজে তাঁর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। রাসূল (সাঃ) এর মাঝে আমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। আর রাসূল (সাঃ) এর পদ্ধতির অনুসরণই আমাদের জন্য একমাত্র গ্রহণযোগ্য কর্মপন্থা। রাসূল (সাঃ) এর হিজরতের ঘটনা একাজের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। কারণ হিজরতের মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) মদিনায় প্রথম ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজকে সম্পন্ন করেছেন। এটা কোন সাধারণ সফর নয়। এটা ছিল আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার একটি হুকুম। এটা ছিল মদিনায় গিয়ে ইসলাম বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়া। এটা ছিল ইসলামকে বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করে এর ভিত্তিতে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আর তাই মক্কার কাফেররা এটা হওয়া থেকে রাসূল (সাঃ) কে বিরত রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে। তারা রাসূল (সাঃ) কে হত্যা করতে চেয়েছে। যাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। আর তাই হিজরত আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ হতে রাসূল (সাঃ) ও ইসলামের প্রতি এক চূড়ান্ত বিজয়। আর এ কাজে জড়িত থাকার জন্য মদিনার লোকদেরকে আনসার বলা হয়। তারা সাহায্য করেছেন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কে, সাহায্য করেছেন রাসূল (সাঃ) কে, সাহায্য করেছেন ইসলামকে।

 

রাসূল (সাঃ) হিজরতের মাধ্যমে মদিনায় গিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার পুরো কৌশল পূর্ণাঙ্গরূপে পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের জন্য তাঁর সমস্ত সহায়-সম্বল এতে ব্যবহার করেছেন। আর পুরো কাজের সফলতার জন্য তিনি পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার উপর নির্ভর করেছেন। তিনি ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ হতে আশু সাহায্যের উপর এতটুকুও দ্বিধান্বিত ছিলেন না। আর আজকের দিনে খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজে নুসরাহ্র বিষয়টি যখন অনিশ্চিত, তখন রাসূল (সাঃ) এর উদাহরণ আমাদের জন্য অনুকরণীয়।

 

সিরাতে বর্ণিত আছে যে, জিব্রাঈল (আ) রাসূল (সাঃ) এর কাছে ওহী নিয়ে এসে মক্কার কুরাইশদের ষড়যন্ত্র ও রাসূল (সাঃ) কে হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন।। জিব্রাঈল (আ.) রাসূল (সাঃ) কে মক্কা ত্যাগের ব্যাপারে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আদেশ অবহিত করেন এবং বলেন যে, “আপনি যে বিছানায় রাতে ঘুমান, সেখানে আজ ঘুমাবেন না।অতঃপর মক্কার নিয়মানুযায়ী সবাই যখন দিনের প্রচন্ড তাপের সময় নিজগৃহে বিশ্রাম নেয় তখন রাসূল (সাঃ) আবু বকর (রা.) এর কাছে গিয়ে তাকে হিজরতের ব্যাপারে জানান এবং তাদের যাত্রার ব্যাপারে আলোচনা সেরে নেন। অতঃপর নিজ গৃহে ফিরে তিনি রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকেন। অন্যদিকে সন্ত্রাসী কুরাইশ নেতারা, যারা রাসূল (সাঃ) কে হত্যা করে তাঁর পবিত্র রক্ত বিভিন্ন গ্রোত্রের মাঝেবন্টন করার হীন চক্রান্ত করেছিল তারা বিভিন্ন গোত্র হতে ১১ জনকে বাছাই করে রাতের প্র ম ভাগে রাসূল (সাঃ) এর বাসার কাছে জড়ো করে, যাতে করে রাসূল (সাঃ) যখন ঘুমিয়ে পড়বেন তখন তারা যেন রাসূল (সাঃ) কে হত্যা করার হীন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পারে। রাসূল (সাঃ) আলী (রা.)-কে তাঁর গৃহে ঘুমানোর জন্য নির্দেশ দেন এবং তাঁকে একটি সবুজ হাদরামী কম্বল দিয়ে তাঁর মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দেন। রাসূল (সাঃ) আলী (রা.) কে বলেন যে, তাঁর উপর কোন ধরনের বিপদ আসবে না। রাসূল (সাঃ) রাতের বেলায় কয়েক মুঠো বালি কাফেরদের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে সূরা ইয়াসিনের ৯ নং আয়াত পড়তে পড়তে তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সাহায্যে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। যখন অন্য একজন ব্যক্তি তাদেরকে বললেন যে, রাসূল (সাঃ) ইতোমধ্যেই গৃহ ত্যাগ করেছেন, তখন তারা তা বিশ্বাস করেনি। পরবর্তীতে তারা দেখল যে, রাসূল (সাঃ) এর পরিবর্তে আলী (রা.) তাঁর বিছানায় শুয়ে আছেন। অন্যদিকে রাসূল (সাঃ) প্রথমে আবু বকর (রা.) এর গৃহে যান এবং আবু বকর (রা.) সহ তিনি দেয়ালের মধ্যবর্তী ফাঁকা দিয়ে বের হয়ে পড়েন, যাতে করে কেউ তাঁদেরকে চিনতে না পারে। তাছাড়া তাঁরা মদিনার উল্টো পথে চলতে থেকে ইয়েমেনের পথের দিকে অগ্রসর হয়ে মক্কা হতে ৫ মাইল দূরের থাওর গুহার কাছে এসে উপস্থিত হন। তাঁরা তিন রাত পাহাড়ের গুহায় অবস্থান করেন। এটি ছিল পর্বতের উপরের অংশে এবং এর রাস্তা ছিল কংকরযুক্ত ও খাড়াভাবে উপরের দিকে উঠা। রাসূল (সাঃ) এর পরিকল্পনা ছিল যে, মক্কার কাফেররা তাঁকে খোঁজার জন্য উত্তর দিকে মদিনার পথে অগ্রসর হবে। আর তাই তিনি অগ্রসর হয়েছেন দক্ষিণ দিকে ইয়েমেনের পথে। রাসূল (সাঃ) এ যাত্রা শুরু করেন ২৭শে সফর।

 

আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রা.) রাতে এসে তাঁদের সাথে অবস্থান করতেন এবং ভোরের দিকে মক্কায় ফিরে আসতেন। তিনি তাঁদেরকে মক্কার কুরাইশ নেতাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করতেন। আবু বকর (রা.)র দাস আমের ইবনে ফুহাইরা (রা.) গভীর রাতে এসে বিভিন্ন প্রকার খাবার সরবরাহ করতেন ও আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রা.)র পায়ের চিহ্ন মুছে দিতেন।

 

কুরাইশরা যখন বুঝতে পারল যে, রাসূল (সাঃ) মক্কা ত্যাগ করেছেন, তখন তারা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে আলী (রা.) কে আটক করে কাবার কাছে নিয়ে তাঁকে অত্যাচার শুরু করে। কিন্তু আলী (রা.)র কাছ থেকে তারা কোন তথ্য না পেয়ে আবু বকর (রা.)র বাসায় গিয়ে আসমা (রা.) কে পেয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা শুরু করে। তাঁর কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে আবু জাহেল (তার উপর আল্লাহ্র লানত) আসমা (রা.) কে মুখের উপর থাপ্পড় দিয়ে রাগে বের হয়ে আসে। পরবর্তীতে তারা এক জরুরী বৈঠক ডেকে রাসূল (সাঃ) ও আবু বকর (রা.) কে ধরার সমস্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তাঁর মক্কা হতে মদিনা যাবার সকল রাস্তায় তাদের গোয়েন্দা নিয়োগ করে এবং রাসূল (সাঃ) ও আবু বকর (রা.) এর পবিত্র মস্তকের উপর ১০০ উটের পুরষ্কার ঘোষণা করে। ফলে মক্কার বিভিন্ন গোত্রের সামর্থবানরা পুরস্কারের আশায় রাসূল (সাঃ) কে ধরতে বের হয়ে পড়ল। তারা এমনকি রাসূল (সাঃ) এর অবস্থিত গুহার পথে এসে উপস্থিত হয়। তারা এক পর্যায়ে গুহার এমন কাছে এসে উপস্থিত হল যে, আবু বকর (রা.) বললেন, “তারা যদি তাদের পায়ের দিকে তাকায় তবে তারা আমাদেরকে দেখতে পাবে।রাসূল (সাঃ) তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, “আপনি এই দুই ব্যক্তি ছাড়া তৃতীয়, আল্লাহ্র ব্যাপারে কি বলবেন?” এ ব্যাপারে সূরা আত-তওবার ৪০ নং আয়াত নাযিল হয়।

 

আর এভাবেই মক্কার কুরাইশদের মিশন ব্যর্থ হয়ে পড়ে। যখন কুরাইশদের নজরদারি কমতে শুরু করে তখন রাসূল (সাঃ) মদিনা যাবার প্রস্ততি শুরু করেন। রাসূল (সাঃ) যাত্রা পথে তাঁকে সহায়তার জন্য পথ সম্পর্কে অভিজ্ঞ আব্দুল্লাহ ইবনে উরাইকা আল-লুথির সাথে ইতোমধ্যেই কথা বলে নিয়েছিলেন। তিনি যদিও তার পূর্বপুরুষের ধর্ম তখনও বিশ্বাস করতেন, তবুও সে ছিল এ কাজে দক্ষ ও বিশ্বস্ত। কথা মত সে তিন দিন পর এসে উপস্থিত হলে রাসূল (সাঃ) রবি-উল আউয়াল মাসের প্রথম তারিখ রাতে আমের ইবনে ফুহাইরা (রা.) সহ রওনা হলেন।

 

তারা প্রথমে আরো দক্ষিণ দিকে ইয়েমেনের দিকে রওনা হন। তারপর সমুদ্রের পাশ দিয়ে এগিয়ে এমন স্থানে এসে উপস্থিত হন যা সম্পর্কে কুরাইশদের কোন ধারণা নেই। অতঃপর তারা লোহিত সাগরের পাশ ঘেঁষে উত্তরের দিকে যাত্রা করেন। অবশেষে তারা রবিউল আউয়াল মাসের ৮ম তারিখে মদিনার কুবা নামক স্থানে এসে উপস্থিত হন। মদিনার মুসলিমরা রাসূল (সাঃ) হিজরতের খবর পেয়ে আল-হারার দিকে এসে প্রত্যেকদিন তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল। এভাবে তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হয়। রাসূল (সাঃ) মদিনায় এসে উপস্থিত হন। এমন সময় এক অপেক্ষারত ইহুদী বাড়ীর ছাদ থেকে বলে উঠল, “হে আরবের লোকেরা! এইতো আসছে সেই ব্যাক্তি যার জন্য তোমরা অপেক্ষা করছিলে।মুসলিমরা তাদের অস্ত্র হাতে তুলে নিল এবং সবাই আনন্দে তাকবির দিতে থাকল। মদিনার সকল লোকেরা রাসূল (সাঃ) কে স্বাগত জানানোর জন্য তাদের ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। এটা ছিল মদিনার জন্য, ইসলামের জন্য এক স্মরণীয় দিন। হিজরতের এই প্রক্রিয়ায় রাসূল (সাঃ) থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।

 

প্রথমত, পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিকল্পনা ও কৌশল অবলম্বন:

রাসূল (সাঃ) হিজরতের এই পরিকল্পনা নিজে গ্রহণ করেন। তিনি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যাবতীয় বিষয় নিজে তদারকি করেন। রাসূল (সাঃ) এর পরিকল্পনার ধরণ থেকে বুঝা যায় যে, পুরো বিষয়টিই ছিল বিচক্ষণতা ও কৌশল গত। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা রাসূল (সাঃ) কে হিজরতের নির্দেশ দেন আর রাসূল (সাঃ) নিজে এ জন্য পুরো পরিকল্পনা তৈরী এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল বস্তুগত সম্বল সংগ্রহ করেন। এর মাধ্যমে তিনি হিজরত পুরো সফলতার সাথে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। আর তাই আজকে যারা খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজকে সম্পনন্ন করার জন্য আনসারদের মত নুসরাহ্ প্রদান করবেন তাদেরকে অবশ্যই একটি পুর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরী করতে হবে। আর এর জন্য যাবতীয় বস্তুগত সহায়-সম্বল ও কৌশল গ্রহণ এবং সাহসের সাথে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। মদিনায় হিজরত করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজকে সম্পন্ন করার জন্য রাসূল (সাঃ) কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনার ধাপসমূহকে নিচে উল্লেখ করা হল:

 

১. রাসূল (সাঃ) তাঁর বিছানায় আলী (রা.) কে ঘুমানোর জন্য ব্যবস্থা করেন।

 

২. রাসূল (সাঃ) তাঁর গৃহ থেকে রাতের অন্ধকারে আবু বকর (রা.)-এর বাসায় গমন করেন। এর মাধ্যমে তিনি (সাঃ) আরবরা তাঁকে খুঁজে পাবার সম্ভাবনাকে হ্রাস করেছেন।

 

৩. তাঁরা দুজনেই আবু বকরের (রা.) গৃহ ত্যাগ করেছেন বাসার দরজার পরিবর্তে দেয়ালের মধ্যবর্তী ফাঁকা দিয়ে। এর মাধ্যমে কুরাইশরা যেন তাঁদেরকে খুঁজে পেতে না পারে বা তাঁদের পেছন নিতে না পারে তা নিশ্চিত করেছেন।

 

৪. তাঁরা মদিনায় যাবার জন্য সচরাচর যে পথ ব্যবহার করা হয় তা ত্যাগ করে উল্টোদিকে ইয়েমেনের পথের দিকে এগিয়েছেন।

 

৫. তাঁরা থুর গুহায় তিন দিন অপেক্ষা করেছেন যাতে করে রাসূল (সাঃ) কে খুঁজে পাবার তৎপরতা কুরাইশদের মাঝে কমে যাবে তখন মদিনার পথে যাত্রা করতে পারেন।

 

৬. আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রা.) রাতের বেলায় এসে কুরাইশদের পরিকল্পনা তাঁদেরকে অবহিত করতেন। এর মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) কুরাইশদের তৎপরতা সর্ম্পকে অবহিত থাকতেন।

 

৭. তাঁদের যাত্রার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) এর মাধ্যমে।

 

৮. আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রা.)র রাতের বেলায় আসা যাবার পদচিহ্ন মুঁছে ফেলার জন্য আমের ইবনে ফুহাইরা (রা.) কে ব্যবহার করা হয়েছে।

 

৯. ইবনে উরাইকা নামের একজন বিশ্বস্ত ও দক্ষ লোককে তাঁদের গাইড নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

 

দ্বিতীয়ত, ঐশ্বরিক সাহায্য:

হিজরতের পুরো প্রক্রিয়ায় রাসূল (সাঃ) আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কর্তৃক সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছেন। পবিত্র কুরআন ও সহীহ্ হাদীসে এ বিষয়ে বর্ণনা পাওয়া যায়। এসব ঘটনা হতে আমরা আমাদের সময়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার সময় সাহায্য পেতে পারি। ইমাম আহমেদ থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) হিজরতের সময় যে পর্বতের গুহায় তিন দিন আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে কুরাইশদের লোকজন গিয়ে উপস্থিত হয়। এমন সময় আবু বকর (রা.) রাসূল (সাঃ) কে বলেন, “হে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ), তারা আমাদেরকে খুঁজে পেয়ে যাবে।রাসূল (সাঃ) বলেন, “না, তারা আমাদের খুঁজে পাবেনা। কারণ জিব্র্ঈাল (আ.) তাঁর পাখা দিয়ে আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে।লোকটি গুহার দিকে ফিরে বসে পড়ল। রাসূল (সাঃ) বললেন, “যদি সে আমাদেরকে চিহ্নিত করে ফেলে, তবে তা সে পারবেনা।সহীহ বুখারী থেকে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি (রা.) বলেন, “হে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) তারা যদি তাদের মাথা নিচু করে তবে তারা আমাদেরকে দেখতে পাবে।রাসূল (সাঃ) বললেন, “শান্ত হও আবু বকর! আমরা দুজন আর তৃতীয়জন হল আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।সুতরাং, এ ঘটনা হতে এটা প্রমাণিত যে, রাসূল (সাঃ)-এর সকল মানবীয় ক্ষমতা, পরিকল্পনা ও বিচার-বিশ্লেষণের পরও, কাফেররা আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) এর কাছে এসে পৌঁছে যায়। এতে তাদের দৃঢ় সংকল্প এবং ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য রাসূল (সাঃ) কে হত্যা করার ব্যপারে তাদের বিরামহীন পরিকল্পনার সুষ্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। আর এই পরিস্থিতিতে রাসূল (সাঃ) আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও আল্লাহ্র পক্ষ হতে রাসূল (সাঃ)-কে সাহায্য করার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠে।

 

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, যদি তোমরা তাঁকে (রাসূলকে) সাহায্য না কর, তবে মনে রেখ, আল্লাহ্ তাঁর সাহায্য করেছিলেন, যখন তাকে কাফেররা বহিষ্কার করেছিল, তিনি ছিলেন দুজনের একজন। যখন তাঁরা গুহার মধ্যে ছিলেন, তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, বিষন্ন হয়োনা, আল্লাহ্ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁর প্রতি স্বীয় শান্তনা নাযিল করলেন এবং তাঁর সাহায্যে এমন বাহিনী পাঠালেন, যা তোমরা দেখনি। বস্তুতঃ, আল্লাহ্ কাফেরদের মাথা নিচু করে দিলেন, আর আল্লাহ্র কথাই সদা সমনত এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা তওবা : ৪০]

 

আজকে যারা আল্লাহ্র পৃথিবীতে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম করছে এবং যাদের নুসরাহ্ দেবার মত সামর্থ্য ও মন মানসিকতা আছে তাদের জন্য এ আয়াতের অর্থ বুঝা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ্র বান্দা হিসাবে আল্লাহ্ ও তাঁর দ্বীনের প্রতি নুসরাহ্ দেয়ার অর্থ হল পূর্ণাঙ্গ ও সার্বিকভাবে দ্বীন ইসলামকে সমর্থন করা এবং আল্লাহ্র পক্ষ হতে তাঁর বান্দার প্রতি নুসরাহ্ হল তাকে সাহায্য করে ইসলামকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করা। আজকে যদি বিশ্বাসীদের ভিতর থেকে ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিবর্গ এবং ইসলামের দাওয়াত বহণকারী মানুষদের একটা বড় অংশ দ্ব্যার্থহীনভাবে তাদের সকল প্রচেষ্টা দ্বারা এই কাজে আত্মনিয়োগ করতো তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে নুসরাহ্ খুবই সন্নিকটে এবং এতে কোন প্রকার দ্বিধার অবকাশ নেই; কারণ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বলেন,

 

নিশ্চয়ই আমি বিজয়ী করবো আমার নবীদেরকে এবং তাদেরকে যারা ঈমানদার এই দুনিয়ার জীবনে এবং ঐ দিন যখন সবাই স্বাক্ষ্য দিবে (কেয়ামত দিবসে)।” [সূরা আল-গাফির : ৫১]

 

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলার হস্তক্ষেপ ও সাহায্য নিশ্চিতভাবেই আসবে যদিও আমরা তার প্রকৃতি ও ধরন সম্পর্কে অজ্ঞ।

 

চলবে----------
 
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free