5-"তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ মাহদি ও দাজ্জাল"
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ৩৪] সামাজিক ক্ষেত্রে দাজ্জালি ষড়যন্ত্র রুখতে মুসলিম পুরুষদের দায়িত্ব
সামাজিক ক্ষেত্রে দাজ্জালি ষড়যন্ত্র রুখতে মুসলিম পুরুষদের দায়িত্ব সাধারণত পুরুষদের মধ্যে দেখা যায় যে, তারা নিজেরা তো ঠিকই নামাজ রোজা ইত্যাদি সঠিকরূপে গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং জান্নাত অর্জনের জন্য পুণ্যের কাজে সময় লাগিয়ে থাকে। কিন্তু নিজের সন্তান, বোন এবং মেয়েদের ব্যাপারে এতটুকু চিন্তা করেন না। যার ফলে, তাদের এবং আত্মীয়স্বজনদের ধর্মীয় জীবনযাপনে বিস্তর অমনোযোগী দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে পুরুষগণ এ অলসতায় মনযোগ না দেওয়ার ফলে পরবর্তীতে তা আস্তে আস্তে প্রশস্ত হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে এমন এক সময় এসে উপস্থিত হয় যে, সে তার স্ত্রী সন্তানকে একটি হারাম বস্তু থেকে নিষেধ করতে থাকলেও স্ত্রী সন্তান এটাকে যুগের ফ্যাশন বলে কোমর বেধে তা ব্যবহার করতে থাকে।
সুতরাং পুরুষদের উচিত – তাদের নিজেদের আখেরাত নিয়ে ফিকিরের পাশাপাশি পরিবার পরিজনকেও আগত সম্মুখ ঝড় থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থাপনা তৈরি করে। তাদের কাছে সময় দিয়ে তাদের দ্বীনী শিক্ষা দীক্ষায় প্রতিপালন করেন। সামনের ভয়ানক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন। এটা ভেবে বসে পড়বেন না যে, আমি তো একা। আমার কথা কে শুনবে আর কে মানবে। এমনটি কখনও ভাববেন না। আপনি যখনই উম্মতের দরদ নিয়ে আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করার নিমিত্তে কোন পদক্ষেপ নিবেন, তখন আল্লাহ পাকও আপনার প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাকে সাহায্য করবেন। ফলশ্রুতিতে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না – যে কাজটি আপনি একা শুরু করেছিলেন, এখন তা লাখো মুসলমানের কন্ঠ এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কোন ময়দানে সাহস হারিয়ে ফেলা, নিরাশ হয়ে যাওয়া এবং মন ভেঙ্গে দেয়া হকের রাস্তায় কখনও বাধা হতে পারে না। এটা তো এমন পথ, যার মধ্যে শুধু অটল থাকাটাই সফলতার লক্ষণ, রাস্তা তো এমনিতেই তৈরি হতে থাকে।
----
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ৩৫] দাজ্জালি ষড়যন্ত্র রুখতে মুসলিম মহিলাদের দায়িত্ব
হযরত আবু উমামা বাহেলি (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“ইসলামের কড়াগুলো একটি একটি করে ভেঙ্গে যাবে। একটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর মানুষ তার পরেরটি আঁকড়ে ধরবে। তো সর্বপ্রথম যে কড়াটি ভাঙবে, সেটি হল ইসলামী শাসন। আর সর্বশেষটি হল নামাজ”।
(সু’আবুল ইমান খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৩৬; আল মু’জামুল কাবীর খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৯৮; মাওয়ারিদুয যাম’আন খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৭)
অর্থাৎ মুসলিম জাতি অধঃপতনের ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম যে বিষয়টি পরিত্যাগ করবে, সেটি হল ইসলামী শাসন। আল্লাহপাকের ঠিক করে দেওয়া যাবতীয় হক আদায় করা, যতসব ফরজ আদায় করা এবং ইসলামের দণ্ডবিধির অনুসরণ করা। এই সবগুলি বিষয় ইসলামী খেলাফতের অধীনে অত্যন্ত সুন্দর ও সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হয়। কাজেই শাসননীতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
মোটকথা, মুসলমানের জীবন থেকেইসলামী সর্বপ্রথম যে সুচারুরূপে বিষয়টি হারিয়ে যাবে বলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, সেটি হল খেলাফত।
যদি খেলাফতে উসমানিয়ার পতনের (১৯২৪ সাল) এর পর থেকে এ সময় পর্যন্তকার ইতিহাস অধ্যায়ন করা হয়, তাহলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ও সভ্যতা সংস্কৃতির সংরক্ষণ আমাদের ঘরগুলোরই মাধ্যমে আঞ্জাম দেওয়া হয়েছে এবং এই ঘরগুলোই মুসলিম সমাজকে এই পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে। বহু মুসলিম ভূখণ্ডে এমনও ঘটেছে যে, এই সর্বশেষ দুর্গটি ছাড়া মুসলমানদের কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। এমনকি মসজিদ মাদ্রাসাগুলো পর্যন্ত কাফেরদের দখলে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এই দুর্গগুলোতে অবস্থানরত ইসলামী বাহিনীগুলো সাহস হারায়নি এবং নিজ নিজ রণাঙ্গনে দৃঢ়পদে টিকে রয়েছে।
ইসলামের এই দুর্গগুলোতে যে বাহিনী আছে, তারা হল মুসলিম নারীদের বাহিনী, যারা ইসলামের জন্য সেই মহান কীর্তি আঞ্জাম দিয়েছে, যা ইসলামবিরোধীদের হাজার প্রচেষ্টার পর আজও অটুট রয়েছে। বর্তমানে মুসলিম জাতি যে পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, তা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি। কাজেই এই পরিস্থিতিতে মুসলিম মহিলাদের দায়িত্বও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ঈমানদার মা ও বোনদেরকে এখন আগের তুলনায় বেশি সচেতনতা, সাহসিকতা ও পরিশ্রমের সঙ্গে আপন দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ইসলামের শত্রুরা আপনার মোকাবেলায় একনাগাড়ে ৯০ বছর যাবত পরাজয় বরণ করে আসছে। এসব পরাজয় থেকে তারা এই ফলাফলে উপনীত হয়েছে যে, মোকাবেলা করে এই বাহিনীটির বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে না – আমাদেরকে অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এবার তারা যে কৌশলটি অবলম্বন করেছে, তা হল মুসলমানদের ঘরগুলোতে যে ইসলামী বাহিনীটি অবস্থান নিয়ে আছে, তাদেরকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে উদাসীন করে দিতে হবে। এই কৌশলটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনেকগুলো মনোমুগ্ধকর শ্লোগান নিয়ে দরদী বন্ধুর রূপ ধারণ করে তারা আপনার সামনে এসে হাজির হয়েছে।
কাজেই আমার মা ও বোনেরা! সময়ের নাজুকতা ও শত্রুপক্ষের ধকা-প্রতারনা উপলব্ধি করে আপনাদেরকে তাদের মোকাবিলা করতে হবে। আপন দায়িত্ব কর্তব্য থেকে উদাসীন হবেন না। মুসলমান পুরুষদের বাহিনী, যারা আপন দায়িত্ব থেকে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে, যারা মানসিকভাবে পরাজয়ের শিকার হয়ে আছে, হতাশার কালো মেঘ যাদের ঘিরে রেখেছে, আপনারা মহিলাদেরকে আল্লাহ এই যোগ্যতা দান করেছেন যে, আপনারা পলায়মান এই বাহিনীটিকে সম্মুখপানে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগাতে পারেন, তাদের অবশ বাহুগুলোতে বিদ্যুৎ সঞ্চারিত করে দিতে পারেন, ভীত সন্ত্রস্ত পুরুষদের মাঝে আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তাদেরকে কর্তব্য পালনের উপযোগী বানিয়ে তুলতে পারেন।
মহান আল্লাহ আপনাদেরকে সত্তাগতভাবেই একটি সংগঠন হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। একজন নারী মানেই একটি সংগঠন। একারণে দাজ্জালের ফেতনার বিরুদ্ধে আপনারা অনেক বেশি কাজ করতে পারেন।
সন্তানদেরকে খাঁটি মুসলমান বানানো এবং তাদেরকে সর্বাবস্থায় ইসলামী নিতি-আদর্শের প্রহরী হিসাবে গড়ে তোলা মহিলাদেরই দায়িত্ব। সন্তানদের মন মস্তিস্ককে শৈশব থেকেই একথাটি বসিয়ে দিতে হবে যে, তার ঈমান জগতের প্রতিটি বস্তুর চেয়ে মূল্যবান। কাজেই ঈমানকে বাঁচিয়ে রাখতে যদি সমগ্র দুনিয়াকেও কুরবান দিতে হয়, তাহলে অকুণ্ঠচিত্তে তা করতে হবে। তবুও ঈমানের গাঁয়ে আঁচড়টিও লাগতে দেওয়া যাবে না।
হযরত ইমরান ইবনে সুলাইম কালায়ি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
“একজন নারীর নিজ গৃহের মাঝে ছুটে বেড়ানো তার জন্য জুতাজোড়া অপেক্ষা উত্তম। স্থুলাকায়া নারীদের জন্য ধ্বংস অবধারিত। সুসংবাদ গরীব মহিলাদের জন্য। তোমরা তোমাদের নারীদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করাও আর তাদেরকে তাদের ঘরের মাঝে হাঁটাচলা করার প্রশিক্ষন দাও। কারণ, অদূর ভবিষ্যতে তারা এই কাজটি করতে বাধ্য হতে পারে”।
(আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৫১)
এই বর্ণনায় বলা হয়েছে, মুসলিম নারীদেরকে আরাম প্রিয় না হওয়া উচিৎ। বরং তাদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করে নিজ ঘরে হাঁটা চলা করে জীবন অতিবাহিত করায় অভ্যস্ত হতে হবে, যাতে শরীরটা ক্ষীণ থাকে। কারণ, তাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আগমন করতে পারে যে, তখন নিজের সম্ভ্রম ও ঈমান বাঁচানোর তাগিদে তাদেরকে পাহাড়-বনে-জঙ্গলে পায়ে হেঁটে সফর করতে হবে। যেমনটি আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, সিরিয়ায় ঘটছে।
তাই কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক শরীয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে আমল করুন এবং গোটা পরিবার ও বংশের লোকদের মাঝে যথারীতি ঈমানের অভিযান পরিচালনা করুন। দাজ্জালের মহা ফেতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে নিজেও সজাগ সচেতন থাকুন, অন্যদেরকেও সচেতন করে তুলুন।
স্মরণ করুন ইরাকের সেই অসহায় মায়েদের, ফিলিস্তিনের সেই বোনদের, যাদের হাতের মেহেদী শুকানোর আগেই তাদের সোহাগ উজাড় করে দেওয়া হয়েছে।
স্মরণ করুন, কাশ্মীর ও আফগানিস্তানের সে কন্যাদের, যারা জীবনের প্রতিটি পলক ও প্রতিটি মুহূর্ত বিহ্বলতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে থাকে।
স্মরণ করুন, সিরিয়ার সেই নিস্পাপ শিশুদের, যারা খোলা আকাশের নিচে মা! মা! করে চিৎকার করছে, কিন্তু তাদের মায়েদের ইমাম মাহদির আগমনপূর্ব আলামত বহনকারী নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের বনু কাল্ব গোত্রের জালেমরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
আমাদের মা ও বোনদের ভুলে গেলে চলবে না, যে দাজ্জালের সঙ্গে মহাযুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের (ভারতীয় উপমহাদেশের) মুজাহিদদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
হযরত নাহীক ইবনে সারীম (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে”।
(আল ইসাবা, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৭৬)
এখানে মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী জাতি। তার মানে এটি হাদিস শরীফে বর্ণিত সেই যুদ্ধ – “গাজওয়াতুল হিন্দ”, যেখানে মুজাহিদরা এই উপমহাদেশে আক্রমণ চালাবে, আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন, ক্ষমা করে দেবেন, বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা জেরুজালেমে ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা (আঃ) সাক্ষাত পাবে এবং ঈসা (আঃ) নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে।
( সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২; আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০৯ ও ৪১০)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন,
“সমুদ্রের শহীদান (খ্রিস্টানদের সাথে মহাযুদ্ধে), আন্তাকিয়ার-আমাকের শহীদান ((খ্রিস্টানদের সাথে মহাযুদ্ধে) ও দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের শহীদান হল মহান আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠতম শহীদ”।
(আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৯৩)
এসব যুদ্ধের শহীদদের সম্পর্কে এক বর্ণনায় আরও বলা হয়েছে,
“উক্ত যুদ্ধে যে এক তৃতীয়াংশ লোক শহীদ হবে, তাদের এক একজন বদরি শহীদদের দশজনের সমান হবে। বদরের শহীদদের একজন সত্তরজনের জন্য সুপারিশ করবে। পক্ষান্তরে এই ভয়াবহ যুদ্ধগুলোর একজন শহীদ সাতশো ব্যক্তির সুপারিশের অধিকার লাভ করবে”।
(আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১৯)
তবে মনে রাখতে হবে, এটি একটি শানগত মর্যাদা। অন্যথায় মোটের উপর বদরি শহীদদের মর্যাদা ইতিহাসের সকল শহীদের মাঝে সবচেয়ে উঁচু।
আমাদের মা ও বোনদের বুঝার সুবিধার্থে এখানে হাদিস শরীফে বর্ণিত “গাজওয়াতুল হিন্দ” সম্পর্কে আসা ৫ টি হাদিস-ই বর্ণনা করছি।
(১) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর প্রথম হাদিস
আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
“আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের থেকে হিন্দুস্থানের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। কাজেই আমি যদি সেই যুদ্ধের নাগাল পেয়ে যাই,তাহলে আমি তাতে আমার জীবন ও সমস্ত সম্পদ ব্যয় করে ফেলব। যদি নিহত হই, তাহলে আমি শ্রেষ্ঠ শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হব। আর যদি ফিরে আসি, তাহলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরায়রা হয়ে যাব”।
(সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)
(২) হযরত সা্ওবান (রাঃ) এর হাদিস
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আজাদকৃত গোলাম হযরত সাওবান (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আমার উম্মতের দুটি দল এমন আছে, আল্লাহ যাদেরকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ করে দিয়েছেন। একটি হল তারা, যারা হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আরেক দল তারা যারা ঈসা ইবনে মারিয়ামের সঙ্গী হবে’।
(সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)
(৩) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর দ্বিতীয় হাদিস
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,
“অবশ্যই আমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন, আর তারা রাজাদের শিকল/বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে । এবং আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন (এই বরকতময় যুদ্ধের দরুন)। এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে তারা ঈসা ইবন-ই-মারিয়াম কে সিরিয়ায় (শাম) পাবে”।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
“আমি যদি সেই গাযওয়া পেতাম, তাহলে আমার সকল নতুন অ পুরাতন সামগ্রী বিক্রি করে দিতাম এবং এতে অংশগ্রহণ করতাম । যখন আল্লাহ্ (সুবঃ) আমাদের সফলতা দান করতেন এবং আমরা ফিরতাম, তখন আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম; যে কিনা সিরিয়ায় হযরত ঈসা (আঃ) কে পাবার গর্ব নিয়ে ফিরত । ও মুহাম্মাদ (সাঃ) ! সেটা আমার গভীর ইচ্ছা যে আমি ঈসা (আঃ) এর এত নিকটবর্তী হতে পারতাম, আমি তাকে বলতে পারতাম যে আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী”।
বর্ণনাকারী বলেন যে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ ‘খুব কঠিন, খুব কঠিন’।
(আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০৯)
(৪) হযরত কা’ব (রাঃ) এর হাদিস
এটা হযরত কা’ব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেনঃ
“জেরুসালেমের (বাই’ত-উল-মুক্বাদ্দাস) একজন রাজা তার একটি সৈন্যদল হিন্দুস্তানের দিকে পাঠাবেন, যোদ্ধারা হিন্দের ভূমি ধ্বংস করে দিবে, এর অর্থ-ভান্ডার ভোগদখল করবে, তারপর রাজা এসব ধনদৌলত দিয়ে জেরুসালেম সজ্জিত করবে, দলটি হিন্দের রাজাদের জেরুসালেমের রাজার দরবারে উপস্থিত করবে, তার সৈন্যসামন্ত তার নির্দেশে পূর্ব থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত সকল এলাকা বিজয় করবে, এবং হিন্দুস্তানে ততক্ষণ অবস্থান করবে যতক্ষন না দাজ্জালের ঘটনাটি ঘটে”।
(ইমাম বুখারী (রঃ) এর উস্তায নাঈম বিন হাম্মাদ (রঃ) এই হাদিসটি বর্ণনা করেন তার ‘আল ফিতান’ গ্রন্থে । এতে, সেই উধৃতিকারীর নাম উল্লেখ নাই যে কা’ব (রাঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছে)
(৫) হযরত সাফওয়ান বিন উমরু (রাঃ)
তিনি বলেন কিছু লোক তাকে বলেছেন যে রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
“আমার উম্মাহর একদল লোক হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আল্লাহ্ তাদের সফলতা দান করবেন, এমনকি তারা হিন্দুস্তানের রাজাদেরকে শিকলবদ্ধ অবস্থায় পাবে। আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন। যখন তারা সিরিয়া ফিরে যাবে, তখন তারা ঈসা ইবনে মারিয়ামকে (আঃ) এর সাক্ষাত লাভ করবে”।
(আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১০)
এখানে রাসুল (সাঃ) এর বর্ণিত তৎকালীন হিন্দুস্তানের সীমারেখা বর্তমান ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়ে।
বর্তমানে এই উপমহাদেশের মুর্তিপুজারী ভূখণ্ডের মুসলিম প্রধান ভূখণ্ডের উপর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের অব্যাহত প্রচেষ্টা দেখলে বুঝা যায় যে, এটি একদিন চূড়ান্ত সংঘাতময়রূপ ধারণ করবে এবং এখানকার দ্বীন ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎ বাণী মোতাবেক উম্মতের একটি দলকে এই দিকে অগ্রসর হতে হবে। এবং এটি ঘটবে সেই সম সাময়িক সময়ে যখন সমগ্র দুনিয়াতে ইসলামের ক্রান্তিলগ্নে ইসলামকে খেলাফতের আদলে সাজাতে আল্লাহ ইমাম মাহদিকে প্রেরণ করবেন আর যার খেলাফতের সপ্তম বছরে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে ঈসা (আঃ) এর আগমন ঘটবে।
তাই, দ্বীনের উপর দৃঢ়পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রেখে যাওয়া দায়িত্ব আমাদের মা বোনদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
----
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ৩৬] দাজ্জালের হাতে যুবক হত্যা হবার হাদিস ও ২০০৪ সালে এক শিশুর জন্ম
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“মহাযুদ্ধ ও কুস্তুন্তুনিয়া (ইস্তাম্বুল) জয়ের মধ্যখানে সময় যাবে ছয় বছর। সপ্তম বছরে দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করবে”।
(ইবনে মাজা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৭)
নবীজি (সাঃ) বলেন, ‘দাজ্জাল দুনিয়াতে অবস্থান করবে চল্লিশ দিন। প্রথম একটি দিন এক বছরের সমান হবে। দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের সমান হবে। তৃতীয় দিনটি এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো সাধারণ দিনের মতো হবে’।
(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৫০)
অর্থাৎ ৩৬৫+৩০+৭+৩৭=৪৩৯ দিন।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক বর্ণনা করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করলে ঈমানদার ব্যক্তিদের মধ্যে এক ব্যক্তি তার কাছে যাবে। তার সাথে দাজ্জালের প্রহরীদের দেখা হবে।
তারা তাকে বলবে, ‘কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা করছ’?
সে বলবে, ‘আমি এই আবির্ভূত ব্যক্তির কাছে যেতে ইচ্ছা করছি’।
প্রহরীরা বলবে, ‘আমাদের রবের প্রতি কি তোমাদের ঈমান নেই’?
সে বলবে, ‘আমাদের রবের ব্যাপারে তো কোনরূপ গোপনীয়তা নেই’।
তারা বলবে, ‘একে হত্যা কর’।
কিন্তু এদের মধ্যে কেউ কেউ বলাবলি করবে, ‘তোমাদের রব কি তোমাদেরকে তার অগোচরে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করতে নিষেধ করেননি’?
সুতরাং তারা তাকে দাজ্জালের কাছে নিয়ে যাবে। যখন মু’মিন ব্যক্তি দাজ্জালকে দেখবে তখন বলবে, ‘হে লোক সকল! এই তো সেই দাজ্জাল যার প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন’।
এরপর দাজ্জালের নির্দেশে তার দেহ হতে মাথা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। তার পেট ও পিঠ উন্মুক্ত করে পিটানো হবে আর বলা হবে, ‘তুমি কি আমার প্রতি ঈমান স্থাপন কর না’?
উত্তরে মু’মিন ব্যক্তি বলবে, ‘তুমিই তো সেই মিথ্যাবাদী মাসীহ দাজ্জাল’।
সুতরাং তার নির্দেশে মু’মিন ব্যক্তির মাথার সিঁথি হতে দু’পায়ের মধ্য পর্যন্ত করাত দিয়ে চিরে দু’টুকরা করা হবে। দাজ্জাল তার দেহের এ দুই অংশের মধ্য দিয়ে এদিক হতে ওদিকে গমন করবে। এরপর সে মু’মিন ব্যক্তির দেহকে সম্বোধন করে বলবে, ‘পূর্বের মত হয়ে যাও’।
তখন সে আবার পরিপূর্ণ মানব হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। আবার সে বলবে, 'এখন কি তুমি ঈমান পোষণ কর?'
মু’মিন মানবটি বলবে, ‘তোমার সম্পর্কে এখন আমি আরো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম’।
সে মানবদেরকে ডেকে বলবে, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমার পর এ আর কারো কিছু করতে পারবে না’।
দাজ্জাল পুনরায় তাকে হত্যা করতে চাইবে। কিন্তু আল্লাহ তার ঘাড়কে গলার নিচের হাড় পর্যন্ত পিতলে মুড়িয়ে দেবেন। ফলে সে তাকে হত্যা করার আর কোন উপায় পাবে না। বাধ্য হয়ে সে তার দু’হাত ও দু’পা ধরে ছুঁড়ে ফেলবে। মানুষে ধারণা করবে দাজ্জাল তাকে আগুনে নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সে বেহেশতে নিক্ষিপ্ত হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘এই ব্যক্তি বিশ্ব জগতের রব আল্লাহর কাছে মানবের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত স্তরের শহীদের মর্যাদা লাভ করবে’।
( মুসলিম)
এখন আপনাদেরকে আমি একটি বিস্ময়কর ঘটনা জানাতে চাই। গত ২০০৮ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী প্যালেস্টাইনের টিভি চ্যানেল আল আকসা (Al Aqsa TV) তে সেখানকার একজন আলেম ঈসা বাদওয়ান এক সাক্ষাতকারে এক বিস্ময়কর তথ্য দেন। যা নিশ্চিতভাবে মুসলিম জাহানের জন্য ভাবার বিষয় এবং সতর্কবার্তা।
এখানে সাক্ষাতকারের অংশটি তুলে ধরছি।
ঈসা বাদওয়ানঃ একজন লোক, যাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি এবং বিশ্বাস করি, সঙ্গত কারণেই আমি তার নাম বলতে চাচ্ছি না – তো তিনি একদিন রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একজন বৃদ্ধ স্ত্রীলোক তাকে থামালো এবং ঐ স্ত্রীলোককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করল। কারণ, ঐ বৃদ্ধার মেয়ে ঐ হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেছে। লোকটি ঐ বৃদ্ধার অনুরোধটি রাখল এবং তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে হাসপাতালের বাইরে প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করল। এক ঘণ্টা করে ঐ বৃদ্ধা তার মেয়ে এবং মেয়ের নবজাতক শিশুপুত্রকে নিয়ে বের হয়ে গাড়িতে উঠল। যখন তারা গাড়িতে উঠল, তখন ঐ নবজাতক সবাইকে অবাক করে দিয়ে সালাম দিল। আমরা অবাক হয়ে সালামের উত্তর দিলাম।
সাক্ষাতকার গ্রহণকারীঃ নবজাতক কথা বলে উঠল?
ঈসা বাদওয়ানঃ হ্যাঁ, নবজাতক শিশুটি। এবং আমরা এটা শেখ নিজারসহ অন্যান্য আলেমকে জানিয়েছিলাম তখন। তো লোকটি যা বলল তা হল যে, শিশুটি বলল, “আমিই হলাম সেই বালক যাকে দাজ্জাল হত্যা করবে, এরপরে আর কাউকে সে হত্যা করতে পারবে না।” এবং আমরা হাদিস থেকে জানি যে, দাজ্জাল যাকে হত্যা করে জীবিত করবে এবং আবার হত্যা করবে কিন্তু পরে আর জীবিত করতে পারবে না। সে হবে একজন যুবক। যাকে শ্রেষ্ঠ শহীদ বলা হয়েছে। আর যুবক বলতে ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সকেই বুঝায়।
আমি মনে করি, এই ঘটনা আমাদের জন্য অনেক খুশির খবর বহন করে। কারণ, আমরা হাদিস থেকে জানি যে, দাজ্জালের আগমন ঘটবে ইমাম মাহদির উপস্থিতিতে ইস্তাম্বুল জয়ের পর।
সাক্ষাতকার গ্রহণকারীঃ এখন সেই বাচ্চার কি অবস্থা?
ঈসা বাদওয়ানঃ হ্যাঁ, এখন আমরা আলেমরা তাকে চিনি। এবং আমরা তার খেয়াল রাখছি। আমি সব মানুষকে এবং সব আলেমদেরকে জানাতে চাই যে, বিজয় অতি নিকটে। ইমাম মাহদি এখন আমাদের মাঝেই অবস্থান করছে (এই বাচ্চার জন্মের উপর ভিত্তি করে)। ইনশাল্লাহ, প্যালেস্টাইনবাসী, খুব শিগগিরই এ বিজয়ের সাক্ষী হবে এবং এই ধর্মকে (ইসলামকে) ও এর আলোকে ছড়িয়ে দিবে।
(সাক্ষাতকারের অংশ বিশেষ শেষ)
এই শিশুটির জন্ম হয় ২০০৪ সালে। আর উদ্বিগ্নের বিষয় হল, ২০০৮ সালে এই সাক্ষাতকার জনসম্মুখে প্রকাশ হবার কয়েক মাস পর ২০০৮/২০০৯ সালে ইসরাইল রাসায়নিক গ্যাস প্রয়োগ ও বোম্বিং শুরু করে ১৪০০ শিশু হত্যা করে এবং প্রায় ৪০০০ শিশুকে আহত করে। শুধু তাই নয়, ইসরাইল এই সাক্ষাতকারে উল্লেখিত আলেম শেখ নিজারকে হত্যার উদ্দেশ্যে সাক্ষাতকারের ১১ মাস পরে এফ ১৬ বিমান দিয়ে ২০০০ পাউন্ডের বোমা নিক্ষেপ করে। যার ফলে শেখ নিজার তার চার স্ত্রী ও এগার সন্তানসহ শহীদ হন। শেখ নিজার ছিলেন গাজার অন্যতম প্রভাবশালী আলেম। তিনি মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইমাম সাউদ বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বীন শিক্ষা লাভ করেন। এর পাশাপাশি তিনি ইসরাইলের সাথে যুদ্ধরত আল কাসসাম মুজাহিদ ব্রিগেডের একজন দায়িত্বশীল কমান্ডারও ছিলেন।
যদি ২০০৪ জন্ম গ্রহণকারী এই বাচ্চাই যদি সেই সে যুবক হয়, তবে সে ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সী যুবক হবে ২০২৫ থেকে ২০২৯ সালে। দাজ্জাল দুনিয়াতে আত্মপ্রকাশের পর ৪৩৯ দিন বা এক বছরের একটু বেশি সময় অবস্থান করবে এবং এই সময়ের মধ্যে যুবককে হত্যা করবে। মহাযুদ্ধের সপ্তম বছরে যেহেতু দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হবে, তাতে মহাযুদ্ধের সম্ভাব্য সাল আসে ২০১৮ থেকে ২০২২। আর মহাযুদ্ধ ইমাম মাহদির উপস্থিতিতেই হবে।
যা হোক, এগুলো সবই শুধু ঐ বাচ্চার দাবীর উপর ভিত্তি করে হাদিসের মাধ্যমে গণনা। কিন্তু একমাত্র আল্লাহই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানেন।
তবে, অবশ্যই সতর্ক বিশ্বাসী বান্দা হিসাবে আমরা আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ করব এবং সজাগ দৃষ্টি রাখবো হাদিসে বর্ণিত মুসলিম ভূখণ্ডগুলোর প্রতিটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সামরিক পরিস্থিতির উপর।
----
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ৩৭] দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের কার্যক্রম বুঝতে অন্তর চক্ষুর প্রয়োজনীয়তা
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর(রাঃ) একদিন ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন,
“অদূর ভবিষ্যতে এই উম্মতের মধ্যে এমন এক জনগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটবে, যারা রজমকে (ব্যভিচারের দায়ে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করার দণ্ডবিধি) অস্বীকার করবে, দাজ্জালের আগমনকে অস্বীকার করবে, কবর আজাবকে অস্বীকার করবে, সুপারিশ অস্বীকার করবে এবং একদল গুনাহগার মুসলমান জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি লাভ করার আকীদাকে অস্বীকার করবে”। (ফাতহুল বারী খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৪২৬)
বিভিন্ন ভূখণ্ডে ইহুদী খ্রিষ্টানদের অর্থে প্রতিপালিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও বেসরকারি সংস্থাগুলো তাদের প্রভুদের পরিকল্পনায় নিত্যদিন ইসলামী বিধিবিধান নিয়ে ঠাট্টা মশকরা ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে চলছে এবং ইসলামী চিন্তা চেতনা ও বোধ-বিশ্বাসকে মানুষের জীবন থেকে চিরতরে মুছে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইসলাম, ইসলামী আইন ও ফতোয়া ইত্যাদি নিয়ে এমনভাবে আলোচনা চলছে, যেন এসব কোন মানুষের তৈরি আইন। হাল আমলে বিভিন্ন দেশের এমন কিছু বুদ্ধিজীবি-চিন্তাবিদের আবির্ভাব ঘটেছে, যারা বিভিন্ন ব্লগ ও টক শোতে রজম ও অন্যান্য ইসলামী দণ্ডবিধিকে এযুগে অচল সাব্যস্ত করছে। তাছাড়া দাজ্জালের আগমনকে অস্বীকার করার মতো লোকও বর্তমান যুগে বিদ্যমান রয়েছে। ভবিষ্যতে বিষয়টিকে ‘বিতর্কিত’ বানিয়ে ফেলা হবে, তাতে কোনই সন্দেহ নেই।
মানুষ যখন সৃষ্টিকর্তা থেকে দূরে সরে যায় এবং অদৃশ্যের মহাজ্ঞানী প্রভুর সাথে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যায়, তখন তার কাছে আর প্রকৃত বাস্তবতা ধরা দেয় না। যার কারণে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জাদুতে বস হওয়া চোখসমূহ, প্রিন্ট মিডিয়ার বন্যায় ভেসে যাওয়া বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিবর্গদের কাছে নিয়মিত শয়তান উদয় হয়ে অন্তরে কুমন্ত্রণা সরবরাহ করতে থাকে। ফলে তাদের তাদের চিন্তা চেতনা আর দৃষ্টিভঙ্গিগুলো শয়তানের আয়ত্তাধীন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যাদের চিন্তা-চেতনা অদৃশ্যের মহাজ্ঞানী সত্তার রঙ্গে রাঙ্গায়িত থাকে, আল্লাহ তা’আলা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিসমূহকে সরল ও সঠিক পথে পরিচালিত করে দেন, চাই তাদের পথগুলো যতই না অন্ধকার, কণ্টকাকীর্ণ ও সংকটাপন্ন করে দেওয়া হোক না কেন।
এটা আজকালের কোন নতুন কথা নয়, বরং মানব ইতিহাস হক্ক ও বাতিলের যুদ্ধসমূহের তাজা সাক্ষী হয়ে আছে। এ যুদ্ধে বাতিলের পাল্লায় ব্যর্থতা এবং পরাজয় ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয়নি, তেমনি বাহ্যিক পরিস্থিতি আর আসবাবপত্রের উপর বিশ্বাসীরা সর্বদায় ধোঁকায় পড়ে আছে।
প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহপাক প্রকাশ্য দুটি চক্ষু প্রদানের পাশাপাশি অন্তরের ভিতরেও দুটি চক্ষু প্রদান করেছেন। প্রকাশ্য চোখদ্বয়ের মাধ্যমে সে বাহ্যিক পরিস্থিতি দেখতে পায়, পক্ষান্তরে অন্তর্চক্ষু ঐ সকল বস্তুর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তার প্রকৃত বাস্তবতাকে পরখ করে ফেলে। একারনেই নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়া আল্লাম আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করবেন, “হে আল্লাহ, আমার চোখে প্রতিটি বস্তুকে তার প্রকৃত চেহারায় দেখার তৌফিক দাও!!!”
প্রকাশ্য চোখদ্বয়ের অন্ধ ব্যক্তি এতটা দয়ার পাত্র নয়; যতটা অন্তরচক্ষু অন্ধ ব্যক্তি। কেননা, আপনি অসংখ্য প্রকাশ্য চোখের অন্ধ ব্যক্তিকে দেখতে পাবেন যে, সে তার অন্তর চক্ষুর মাধ্যমে স্বীয় সৃষ্টিকর্তা পর্যন্ত সফলভাবে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়েছে এবং বাহ্যিক চক্ষুদ্বয় দ্বারা কোন কিছু দৃশ্যমান না হওয়া সত্তেও সে যাবতীয় পাপ কাজ থেকে শুধুমাত্র এ উদ্দেশ্য বেঁচে রয়েছে যে, তার মহান প্রভু তো তার যাবতীয় কাজ প্রত্যক্ষ করছেন। পক্ষান্তরে আপনি অসংখ্য প্রকাশ্য চক্ষুস্মান ব্যক্তিদেরকে দেখতে পাবেন যে, সবকিছু দেখা সত্ত্বেও তারা নিজেদের স্রস্টাকে চিনতে সক্ষম হয়নি, মানবতা এবং শয়তানীর মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে পারেনি, মূর্খতা এবং জ্ঞানের মধ্যে তফাত সৃষ্টি করতে পারেনি, কোনটা অন্ধকার কোনটা আলো তারতম্য করতে পারেনি। প্রকাশ্য উজ্জ্বল আলোকিত পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে শয়তানের পেছনে পেছনে অন্ধকার পথের দিকে যাত্রা করেছে। তাদের মধ্যে আবার অনেক চিন্তাবিদ, প্রশিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, ভাষণদাতা ও উপদেশদাতাকে আপনি দেখতে পাবেন। এদের মধ্যে আবার ভালো-মন্দ যাচাইয়ে অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদেরকেও আপনার চোখে পড়বে। এটা শুধুমাত্র এ কারণেই যে, তাদের বাহ্যিক চক্ষুগুলো অক্ষত থাকা সত্ত্বেও অন্তর চক্ষুগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিটি বস্তুকে তারা বাহ্যিক রূপ দেখেই বিচার করে ফেলে।
মরুপ্রান্তরে বসবাসকারী এক সস্প্রদায়, আশেপাশে কোন সমুদ্র নেই, যেখানে বন্যা আসারও কোন সম্ভাবনা নেই। এমতাবস্থায় তাদের কোন বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী ব্যক্তি যদি বিশালাকারের নৌকা বানানো শুরু করে দেয় আর সর্বসাধারণকে অপেক্ষামান মহাপ্লাবন থেকে সতর্ক করতে থাকে, এহেন পরিস্থিতিতে আপনি আন্দাজ করতে পারেন – অন্তর চক্ষুতে অন্ধ ব্যক্তিবর্গ ঐ ব্যক্তির সাথে কিরূপ আচরণ করবে!! এটাই যে, সবাই তাকে ঠাট্টা বিদ্রুপ করবে, পাগল বলে তাকে আখ্যায়িত করবে। এটা কেন? শুধুমাত্র এ কারণেই যে, তাদের মাথায় স্থাপিত দুটি চোখ চারিদিকে শুধু মরুভূমি প্রত্যক্ষ করছে, অদুরে কোন সমুদ্র বা আশেপাশে বড় কোন নদীরও অস্তিত্ব নেই, কখনও কোন প্লাবনের আভাসও সেখানে পাওয়া যায়নি। সমাজের গণ্যমান্য (Elite) ব্যক্তিবর্গও ঐ ব্যক্তির কথাকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সুতরাং অন্তর চক্ষুতে অন্ধ ব্যক্তি এই নৌকার বাস্তবতা পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়নি। বিপরীতে ঐ সকল লোক যাদের মন মস্তিস্ক উজ্জ্বল, প্রকাশ্য চোখদ্বয়ের সাথে সাথে অন্তর চক্ষুও সঠিকভাবে পরিচালিত, পাশাপাশি সতর্ককারী ঐ ব্যক্তিটিকেও ভালোভাবে চেনে যে, এক হাজার বছরের জিন্দেগিতে সে কখনও কারও সাথে মিথ্যা বলেনি, কখনও কারও সাথে বেঈমানি করেনি, প্রত্যেকের মঙ্গল কামনাই তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। এ সকল ব্যক্তিবর্গ তার কথাকে অবশ্যই সত্য বলে বিশ্বাস করবে – যদিও বাহ্যিক নিদর্শনসমূহ তার বিপরীতেই থাকুক না কেন!!
সুতরাং পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী যে, অন্তর চক্ষুতে অন্ধ ব্যক্তিবর্গ ঐ মহাপ্লাবনে ভেসে গেছে, এমনকি তাদের নাম-নিশানা পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকেনি। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় স্তরের ব্যক্তিবর্গ মহাপ্লাবন থেকে রেহাই পেয়ে তারাই পরবর্তীতে বিশ্বময় মানব বংশ বিস্তারের মাধ্যম হয়েছে। তারা হচ্ছে ঐ স্তরের লোক, যারা আল্লাহর নবী হযরত নূহ (আঃ) এর উপর ঈমান এনে নৌকায় আরোহণ করে ধন্য হয়েছিল। বিপরীতে নিজেদেরকে বড় ভাবা সমাজের গণ্যমান্য চিন্তাবিদ, অধিপতি এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ আমূলে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের জ্ঞান তাদেরকে রক্ষা করতে পারে নাই। তাদের গবেষণা আর অভিজ্ঞতাগুলো নিরধারিত প্রতিশ্রুতিকে বিন্দুমাত্র সরাতে পারেনি।
আদ জাতির ইতিহাস লক্ষ্য করুন। এমন এক জাতি, যারা বিল্ডিং নির্মাণ (architecture & construction) জ্ঞানে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিল, তারা পাহাড়ের ভিতরে পাহাড় কেটে কেটে বাড়ি নির্মাণ করত। নিরাপত্তা বিষয়ে তারা এমন ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছিল যে, না আভ্যন্তরীণ কোন শত্রু তাদের উপর ধাওয়া করার শঙ্কা ছিল, না বাইরে থেকে কেউ এসে তাদের উপর চড়াও হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মোটকথা নিজেদের বাসস্থান ও এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা তৈরি করে নিশ্চিন্তে তারা তাদের ঘরবাড়িগুলোতে জীবনযাপন করছিল। এমন সময় যদি তাদেরকে বলা হয় যে, তোমাদের এই সুউচ্চ ও পাহাড়সম ঘরবাড়িগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। তবে বাহ্যিক পরিস্থিতির উপর ভরসাকারী, আকাশসম এ বিশাল অট্টালিকাগুলোর উপর গবেষণাকারী, নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত ম্যাটেরিয়ালের সাইন্স নিয়ে গবেষণাকারীগণ কথাটিকে কিভাবে বিশ্বাস করে নিবে!!
কিন্তু ইতিহাস এখনও তাদের অন্ধ সাব্যস্ত করেছে। আদ জাতির সার্বিক উন্নয়নশীল, অত্যাধুনিক শক্তি, ভূমিকম্পনরোধক এবং সর্বপ্রকার আশংকা থেকে মুক্ত এ সুউচ্চ বিল্ডিংগুলো থাকা সত্ত্বেও তাদের গর্বের অট্টালিকাসমূহকে নিমিষে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে পরবর্তী লোকদের জন্য এক মহাদৃষ্টান্ত দাঁড় করানো হয়েছে। অথচ আল্লাহপাক তাদেরকে নিরাপত্তামূলক ঘরবাড়ীগুলোর বাইরে এনেও ধ্বংস করতে পারতেন। কিন্তু এর মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত আগত সকল গবেষক আর বিশেষজ্ঞদেরকে এটাই শিক্ষা দিয়েছেন যে, তোমাদের গবেষণা আর উন্নতি আল্লাহর থেকে পাঠানো বাস্তবতাকে কোন সময় প্রতিহত করতে পারবে না।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে নমরুদ চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রজ্জলিত আগুনের বিশাল কুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল। বাহ্যিক চক্ষুস্মান ব্যক্তিবর্গ মনে করেছিল যে, আমরা আমাদের প্রভু বিদ্রোহকারী, মূর্তি চূর্ণকারী ইব্রাহীমকে আগুনে নিক্ষেপ করে তার হাড্ডিগুলো পর্যন্ত ছাই বানিয়ে দিয়েছি!!! কিন্তু বাস্তবতা ছিল তাদের ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত।
আল্লাহ তা’আলার দুশমন এবং আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত ঈসা (আঃ) কে হত্যাকারী ইহুদীরা যখন ঈসা (আঃ) কে কাষ্ঠে চড়িয়ে মনে করেছিল যে, আমরা ইসাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছি। কিন্তু বাহ্যিক চক্ষুস্মানগণ এখানেও ধোঁকায় পড়েছিল। এখন পর্যন্ত তারা এই ধোঁকার মাঝেই নিমজ্জিত। কিন্তু আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন অন্তরচক্ষুর অধিকারীদেরকে ছয়শত বছর পর ঠিকই জানিয়ে দিয়েছেন যে, ইসাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়নি; বরং তাকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং অন্তরচক্ষুর অধিকারীরা একথায় বিশ্বাস করে নিয়েছে। যদিও পরিস্থিতি তারা সচক্ষে দেখেনি।
সুতরাং আমরা যেন বিশ্বাসী পুরুষ ও মহিলা হিসাবে, আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বুঝতে গিয়ে শুধু পশ্চিমা মিডিয়া ও তাদের দালাল মিডিয়ার তথ্য ও ব্যাখ্যা উপর নির্ভরশীল না হই, আমরা যেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের উপর নির্ভর করি যা আমাদের অন্তর চক্ষুকে খুলে দিবে।
ইনশাল্লাহ, ২০১৪ সালে আল্লাহ বেশ কিছু সত্য উম্মচিত করবেন যা গোটা মুসলিম জাহানকে চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। দুনিয়া জানবে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বছরের পর বছর ইসলামের শত্রুরা কি প্রচার করেছে, কি অভিযান চালিয়েছে আর কি ফলাফল এসেছে।
----