Let your mind to be opened to explore the truth
This is my way (ISLAM); I invite to Allah with insight :12-No Sura Yousuf: Verse-108.”

1-"তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ মাহদি ও দাজ্জাল"

"তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ মাহদি ও দাজ্জাল"
মূলঃ মাওলানা আসেম ওমর
অনুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মাদ মুহিউদ্দিন অবলম্বনে

====================================================

[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ০১] দাজ্জালঃ ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের দৃষ্টিভঙ্গি


দাজ্জাল বিষয়ক হাদিসগুলো বর্ণনা করার আগে দাজ্জাল সম্পর্কে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের
দৃষ্টিভঙ্গি ও তাদের ধর্মীয় (বর্তমানে বিকৃত) গ্রন্থগুলোতে বিকৃত ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে ধারণা দেওয়া আবশ্যক মনে করি। তাতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য কাফের গোষ্ঠী ইহুদীদের ইঙ্গিতে যা কিছু করছে, তার প্রেক্ষাপট ও প্রকৃত উদ্দেশ্য
বুঝে আসবে। দাজ্জাল সম্পর্কে ইহুদীদের দৃষ্টিভঙ্গি হল, সে ইহুদীদের সম্রাট হবে। সকল ইহুদীকে বাইতুল মুকাদ্দাসে আবাদ (প্রতিষ্ঠিত) করবে। সমগ্র বিশ্বের উপর ইহুদীদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে।
পৃথিবীতে ইহুদীদের জন্য শঙ্কা অবশিষ্ট থাকবে না। সকল সন্ত্রাসবাদীকে নির্মূল
করে ফেলবে এবং সর্বত্র শান্তি, নিরাপত্তা ও সুবিচারের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।
তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ ইজাখিলে আছেঃ
হে ইহুদিকন্যা, তুমি আনন্দের সাথে চিৎকার দাও। ওহে জেরুজালেমের কন্যা,
তুমি খুশিতে বাগবাগ হয়ে যাও। ঐ দেখ তোমাদের রাজা আসছেন। তিনি ন্যায় পরায়ণ। তিনি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসছেন। আমি ইউফ্রিম থেকে গাড়িকে আর জেরুজালেম থেকে ঘোড়াকে আলাদা করে ফেলব। যুদ্ধের পালক উপড়ে ফেলা হবে। তার শাসন সমুদ্র থেকে জমিন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। (জাকারিয়াঃ৯ঃ৯ঃ১০)
অনুরূপভাবে আমি ইসরাইলের প্রতিটি সম্প্রদায়কে সমগ্র পৃথিবী থেকে এনে একত্রিত করব, চাই তারা যেখানেই বসতি স্থাপন করুক। আমি তাদেরকে তাদেরই ভূখণ্ডে সমবেত করব। এই ভূখণ্ডে আমি তাদেরকে এক জাতির আকারে গড়ে তুলব ইসরাইলের পাহাড়ের উপর, যেখানে একজনমাত্র রাজা তাদের উপর রাজত্ব করবেন (ইজাখিলঃ৩৭ঃ২১ঃ২২)
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ১৯৮৩ সালে চার্চের জেম বেকারের সঙ্গে আলাপ
প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “আপনি একটু চিন্তা করুন, রোমান সাম্রাজ্যের পুনর্গঠনের পর
(পাশ্চাত্য ইউরোপ যা ১৯৯৩ সালে আরও সুসংগঠিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নামে একক পতাকা, একক মুদ্রা, ভিসাহীন ভ্রমণ) মাসীহ (দাজ্জাল) পুনরায় সেই লোকগুলোর উপর আক্রমণ চালাবে, যারা তাদের নগরী জেরুজালেমকে ধ্বংস করেছিল। তারপর তিনি সেই বাহিনীগুলোর উপর আক্রমণ চালাবেন, যারা মেগডন ও আরমাগেডনের উপত্যকায় সমবেত হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জেরুজালেম পর্যন্ত এত রক্ত প্রবাহিত হবে যে, রক্ত ঘোড়ার লাগামের সমান হয়ে যাবে। এসব উপত্যকা যুদ্ধ সরঞ্জাম, জীবজন্তু, মানুষের জীবন্ত
দেহ ও রক্তে ভরে যাবে
প্রাক্তন মার্কিন সিনেটর পল ফান্ড লে বলেছেন, “একটি বিষয় আমার বুঝে আসছে না যে, মানুষ মানুষের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ কিভাবে করবে! কিন্তু সেদিন খোদা মানবীয় স্বভাবকে এই অনুমতি দিয়ে দিবেন যে, তোমরা তোমাদেরকে পুরোপুরি প্রকাশ করে দাও। বিশ্বের উন্নত সবকটি শহর লন্ডন, প্যারিস, টোকিও, নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলস ও শিকাগো অস্তিত্বের পাতা থেকে মুছে যাবে
টিভি বিশেষজ্ঞ হিস্টন বলেছেন, “বিশ্বের ভাগ্য সম্পর্কে মাসীহে দাজ্জালের ঘোষণা একটি আন্তর্জাতিক প্রেস কনফারেন্স থেকে প্রচার করা হবে। উক্ত কনফারেন্স স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টিভির পর্দায় দেখা যাবে
প্রাক্তন মার্কিন সিনেটর মার্ক হেটফিল্ড বলেছেন, “পবিত্র ভূমিতে (জেরুজালেমে) ইহুদীদের পুনরাগমনকে আমি এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি যে, এটি মাসীহ যুগের আগমনের লক্ষণ, যে যুগে গোটা মানবতা একটি আদর্শ সমাজের কল্যাণে সুখময় জীবন লাভ করবে
----

 

[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ০২] দাজ্জালঃ ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের দৃষ্টিভঙ্গি


ফোর্সিং গডস হ্যান্ডসনামক গ্রন্থের লেখিকা গ্রেস হল গেল বলেছেন, ‘...আমাদের গাইড
কুব্বাতুস-সাখরার (টুম স্টোন) প্রতি ইঙ্গিত করে বলল, আমাদের তৃতীয় হাইকেলটি আমরা ওখানে নির্মাণ করব। হাইকেল নির্মাণে আমাদের সকল পরিকল্পনা প্রস্তুত আছে। নির্মাণ সামগ্রী পর্যন্ত এসে পড়েছে। সেগুলো একটি গোপন স্থানে রাখা হয়েছে। বহুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান যেগুলোতে ইসরাইলি কাজ চলছে হাইকেলের জন্য দুর্লভ সব
জিনিসপত্র তৈরি করছে। একটি ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান রেশমের সুতা তৈরি করছে।
সেগুলো দিয়ে ইহুদি পণ্ডিতদের পোশাক প্রস্তুত করা হবে। (হতে পারে এগুলোই সেই তীজান বা সীজানওয়ালা চাদর, যার উল্লেখ হাদিসে এসেছে)।
লেখিকা আরও লিখেছেন, ‘আমাদের গাইড বলল, একথা ঠিক যে, আমরা শেষ সময়ের
কাছাকাছি চলে এসেছি, যেমনটি আমি বলেছিলাম যে, কট্টর ইহুদিরা মসজিদটিকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে, যার ফলে মুসলিম বিশ্ব আতঙ্কিত হয়ে উঠবে। এটি হবে ইসরাইলের সঙ্গে একটি পবিত্র যুদ্ধ। এ বিষয়টি মধ্যখানে এসে হস্তক্ষেপ করতে মাসিহকে (দাজ্জাল) বাধ্য করবে। ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে একটি ইসরাইলি সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে হাইকেলে সুলাইমানির চিত্র দেখানো হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, এর উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানদের উপাসনালয়গুলোকে মুক্ত করা এবং তদসম্মুখে হাইকেল নির্মাণ করা।
সংবাদপত্রে বলা হয়েছিল, এই হাইকেল নির্মাণের মোক্ষম সময়টি এসে পড়েছে।
সংবাদপত্রে ইসরাইলি সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল, তারা যেন অধর্মীয়
ইসলামি দখলদারিত্বকে মসজিদের স্থান থেকে অপসারণ করে। পত্রিকাটি আরও দাবি করেছে, তৃতীয় হাইকেল নির্মাণ খুবই সন্নিকটে। গ্রেস হল সেন আরও লিখেছেন, ‘আমি লেন্ডা ও ব্রাউনের (ইহুদি) আবাসভুমিতে (ইসরাইলে) অবস্থান করি। একদিন সন্ধ্যায় আলাপকালে বললাম, উপাসনালয় নির্মাণের জন্য মসজিদে আকসা ধ্বংস করে দিলে একটি ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। উত্তরে সঙ্গে সঙ্গে উক্ত ইহুদি বলল, আপনার আশঙ্কা যথার্থ। এমন যুদ্ধই
তো আমরা কামনা করি। কারণ, সেই যুদ্ধে আমরা জয়ী হব। তারপর আমরা সমস্ত
আরবকে ইসরাইলের মাটি থেকে তাড়িয়ে দেব। আর তখনই আমরা আমাদের
উপাসনালয়টিকে নতুনভাবে নির্মাণ করব
ইলহামের কিতাবের ষোলতম তথ্যে আছে, ফোরাত নদী শুকিয়ে যাবে। এভাবে প্রাচ্যের
সম্রাটগণ অনুমতি পেয়ে যাবে যে, এই নদী পার হয়ে তোমরা ইসরাইল পৌঁছে যাও।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিকসন তাঁর ভিক্টরি উইদাউট ওয়ারনামক গ্রন্থে লিখেছেন, ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমেরিকা সমগ্র বিশ্বের শাসকে পরিণত হবে এবং এই বিজয় তারা যুদ্ধ ছাড়াই অর্জন করবে। তারপর মাসিহ (দাজ্জাল) নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করে নিবেন। যেন উল্লেখিত সন পর্যন্ত মাসিহর সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়ে যাবে আর আমেরিকার দায়িত্ব এসব ব্যবস্থাপনাকে সম্পন্ন করা পর্যন্ত। তারপর মাসিহ রাজ্য পরিচালনা করবে। লাখ লাখ মৌলবাদী খ্রিস্টানের বিশ্বাস হলো, ঈশ্বর ও ইবলিসের মধ্যকার সর্বশেষ যুদ্ধটি তাদের জীবদ্দশাতেই শুরু হবে। তবে তাদের অধিকাংশের কামনা হলো, এই যুদ্ধ শুরু হবার আগেই তাদেরকে তুলে নিয়ে জান্নাতে পৌছিয়ে দেওয়া হোক। খ্রিষ্টান মৌলবাদীরা সামরিক প্রস্তুতিতে এত সোৎসাহ সহযোগিতা কেন করছে, এই দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই তাঁর রহস্য উদঘাঁটিত
হয়ে যাচ্ছে। এই পলিসি দ্বারা তারা দুটি লক্ষ্য অর্জন করেছে। প্রথমত, তারা আমেরিকানদেরকে তাদের ঐতিহাসিক ভিত্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত,
তাদেরকে সেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছে, যেটি ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে এবং যার
ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে। ভিসন থমাস তার এক গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আরব বিশ্ব খ্রিস্টানদের
একটি শত্রুজগত। খ্রিস্টানরাও কোন একজন মুক্তিদাতার অপেক্ষায় অপেক্ষামাণ। আর
ইহুদিরা এক্ষেত্রে বেশি বিচলিত। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৬৭ সালে বাইতুল মুকাদ্দাস দখলের আগে ইহুদিরা দুআ করত, হে খোদা, এ বছরটি আমাদেরকে জেরুজালেমে থাকতে দাও। আর এখন তারা প্রার্থনা করছে, হে খোদা, আমাদের মাসিহ যেন শীঘ্র এসে পড়েন।
মোটকথা, যে সব ভবিষ্যৎবাণী ঈসা ইবনে মরিয়ম সম্পর্কে বর্ণিত আছে, ইহুদীরা সেগুলোকে দাজ্জালের জন্য প্রমাণ করতে চায়। এক্ষেত্রে তারা খ্রিস্টানদেরকেও
ধোঁকা দিচ্ছে যে, আমরা প্রতিশ্রুত মাসিহর অপেক্ষায় করছি আর মুসলমানরা হল মাসিহর বিরোধী। অথচ বাস্তবতা তার বিপরীত। মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয়েই ঈসা ইবনে মরিয়মের অপেক্ষায় অপেক্ষামাণ। পক্ষান্তরে ইহুদীরা যার অপেক্ষা করছে, সে হল দাজ্জাল, ঈসা ইবনে মরিয়ম যাকে হত্যা করবেন। কাজেই বর্তমান পরিস্থিতিতে খ্রিস্টানদের উচিত ছিল মুসলমানদের সঙ্গ দেওয়া ইহুদীদের নয়। কেননা, ইহুদীরা তাদের পুরনো শত্রু।

 

[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ০৩] দাজ্জালের আগে পৃথিবীর অবস্থা


হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
দাজ্জালের আবির্ভাবের আগের কয়েকটি বছর হবে প্রতারণার বছর। এসময়টিতে সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী আর
মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী আখ্যায়িত করা হবে।
দুর্নীতিবাজকে আমানতদার আর আমানতদারকে দুর্নীতিবাজ মনে করা হবে। আর মানুষের মধ্যে থেকে রুয়াইবিজারা কথা বলবে
 জিজ্ঞাসা করা হল, ‘রুয়াইবিজাকি জিনিস? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “অপরাধপ্রবণ লোকেরা জনসাধারণের বিষয়-আশয় নিয়ে কথা বলবে
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ১৩৩২; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ৩৭১৫, আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)

হাদিসটি বর্তমান যুগের জন্য কতখানি উপযোগী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তথাকথিত সভ্যজগতএর বিবৃত মিথ্যাকে কত শিক্ষিতমানুষও সত্য বলে মেনে নিয়েছে। সেই মিথ্যার ফিরিস্তি এতই ব্যাপক ও বিস্তৃত যে, যদি তা কাগজে লিপিবদ্ধ
 করা হয়, তাহলে লিপিবদ্ধকারীর জীবন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু মিথ্যার তালিকা শেষ হবে না। আর কত সত্য এমন আছে, যার গায়ে ন্যায়প্রিয়পশ্চিমা মিডিয়া ও তাদের তল্পিবাহক অন্যান্য মিডিয়া তাদের প্রতারণার এমন কলঙ্ক লেপে দিয়েছে যে, জীবন ক্ষয় করে পরিষ্কার করলেও বিমোচিত হবে না। এই হাদিসে একটি আরবি শব্দ আছে খাদাআ। শব্দটির একটি অর্থ বৃষ্টি বেশি হওয়া। ইবনে মাজার ব্যাখ্যায় এর বিশ্লেষণ করা হয়েছে, ‘এই বছরগুলোতে বৃষ্টি বেশি হবে, কিন্তু ফসলের উৎপাদন কম হবে। এই বছরগুলোর জন্য এটি হল একটি ধোঁকা
উমাইর ইবনে হানী থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 একটি সময় আসবে, যখন মানুষ দুটি তাঁবুতে (দলে) বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি তাবু হবে ঈমানের, যেখানে কোন নিফাক (কপটতা/দ্বিমুখীতা) থাকবে না। অপর তাঁবুটি হবে নিফাকের, যেখানে কোন ঈমান থাকবে না। যখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে, তখন সেদিন থেকে বা তার পরদিন থেকে দাজ্জালের অপেক্ষা করো
(সুনানে আবু দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৯৪; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১৩)

আল্লাহপাকের হেকমত অনেক সূক্ষ্ম। তিনি যাকে দ্বারা ইচ্ছা হয় কাজ নিয়ে নেন। মুসলমানরা নিজেরা তো এই উভয়
(মুমিনওয়ালা ও মুনাফিকওয়ালা) তাঁবু তৈরি করে নিতে পারে না। তাই আল্লাহ পশ্চিমা এক নেতার মাধ্যমে কাজটির শুভ সূচনা করিয়ে নিয়েছেন। আফগানিস্তানের মতো একটি দরিদ্র দেশকে ৯/১১ এর জন্য দায়ী করে কোন তথ্য প্রমাণের ধার না ধরে আক্রমণ করার সময় ইহুদি মতাদর্শের সেবক সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করেছিল, “ হয়
 আপনি আমাদের সাথে আর নয় তো আপনি সন্ত্রাসীদের সাথে?” বিপুল সংখ্যক মানুষ এই তাঁবুতে ঢুকে পড়েছে। এখনও কিছু অবশিষ্ট আছে। আল্লাহ এই কাজটিও পরিপূর্ণ করে দেবেন এবং অবশ্যই করবেন। তাতে পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে যাবে, কে ঈমানওয়ালা আর কার অন্তরে ঈমানওয়ালাদের তুলনায় আল্লাহর শত্রুদের প্রতি বেশি ভালোবাসা লুকিয়ে রয়েছে। তাই প্রত্যেককে নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দরকার যে, আমি কোন তাঁবুতে আছি কিংবা আমার সফর কোন তাঁবুর দিকে। নীরব দর্শনার্থীদের না ইবলিস ও তার দলভুক্তদের প্রয়োজন আছে, না আল্লাহর তাদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক আছে। এই যুদ্ধ সিদ্ধান্তমূলক লড়াই। কাজেই প্রত্যেককে কোন না কোন পক্ষ অবলম্বন করতেই হবে। এটি এমন একটি সময়, যখন প্রতিজন ব্যক্তি, প্রতিটি সংগঠন, প্রতিটি দল সেদিকে ঝুঁকে যাবে, যার সঙ্গে তার হৃদ্যতা ও আন্তরিকতা থাকবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেছেনঃ যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তারা কি ভেবে বসেছে যে, আল্লাহ তাদের বিদ্বেষভাব প্রকাশ করে দেবেন না?” (সূরা মুহাম্মাদঃ২৯)

প্রতিটি দেশ ইহুদীদের দ্বারা পরিচালিত ইহুদী স্বার্থের অনুকূলে একাট্টা হয়ে যাবে এবং বহু সংগঠন একটি অপরটির সাথে মিশে যাবে। যেসব সংগঠনেরব্যাকডোরইহুদীদের হাতে, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে ইহুদী মিশন বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং ইহুদী মতাদর্শের সেবক নেতাদের মুখ থেকে যে আওয়াজ উত্থিত হবে, উক্ত সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও
ব্যক্তিবর্গের মুখ থেকেও একই ধ্বনি উচ্চারিত হবে। বিশেষ করে, বর্তমানে আল্লাহ প্রতিটি মুসলিম অধ্যুষিত ভূখণ্ডে বিভিন্ন নামে ঈমান, আকিদা ও ইসলামী শরীয়তের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এমন সব ইস্যু নিয়ে আসছেন, যে প্রতিটি মুসলিমধারী পুরুষ এবং মহিলা বাধ্য হচ্ছেন ব্যক্তি পর্যায়ে, সামাজিক পর্যায়ে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ঈমান ও নিফাকের আদলে পৃথক হতে। আর কাফের মুশরিকরাও সেই সব ইস্যুতে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে জোর
গলায়। ফলে ইমানওয়ালা আর মুনাফিকদের পরিচয় হয়ে উঠছে প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, “একদিন আমি হুজায়ফার সঙ্গে হাতিমে ছিলাম। সে সময় তিনি একটি হাদিস বর্ণনা করলেন। পরে বললেন, ইসলামের
 আংটাগুলো একটি একটি করে ভেঙ্গে যাবে আর বহু বিভ্রান্তকারী নেতার আবির্ভাব ঘটবে। তার পরপরই তিনজন দাজ্জাল আবির্ভূত হবে। আমি  বললাম, হে আবু আব্দুল্লাহ, এই কথাগুলো আপনি আল্লাহর রাসুল থেকে শুনেছেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি এই কথাগুলো আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ থেকে শুনেছি। আর আমি তাকে একথাও বলতে শুনেছি যে, দাজ্জাল ইস্পাহানের ইহুদিয়া নামক অঞ্চল থেকে আত্মপ্রকাশ করবে
(মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৭৩)

এই বর্ণনাটি অনেক দীর্ঘ, যার অংশ বিশেষ এই তিনটি আর্তনাদ উত্থিত হবে, যা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিমের সবাই শুনতে পারে.....। হে
 আব্দুল্লাহ, যখন তুমি দাজ্জালের সংবাদ শুনবে, তখন পালিয়ে যেও। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি হুজায়ফাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা যাদেরকে পিছনে রেখে যাব, তাদের হেফাজত কিভাবে করব? হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বললেন, তাদেরকে আদেশ করে যাবেন, যেন তারা পাহাড়ের চূড়ায় চলে যায়। হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তারা যদি সবকিছু ত্যাগ করে যেতে না পারে? তখন হুজায়ফা (রাঃ) বললেন,
তাদেরকে আদেশ করে যাবেন, যেন তারা সবসময় ঘরেই থাকে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, যদি তারা এ- ও করতে না পারে, তাহলে? হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বললেন, হে ইবনে ওমর! সময়টি হবে আতঙ্ক, ফেতনা, অনাচার ও লুটপাটের। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে হুজায়ফা, সেই দুর্যোগ থেকে কোন মুক্তি আছে কি? হযরতহুজায়ফা (রাঃ) বললেন, কেন থাকবে না? এমন কোন ফেতনা নেই, যার থেকে মুক্তি নেই। অপর এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের ব্যাপারে দাজ্জাল ছাড়া আরও যে ফেতনাটির
 কথা উল্লেখ করেছেন, সেটি হল বিভ্রান্তকারী নেতৃবর্গ। হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মতের ব্যাপারে আমি যে বিষয়টিকে বেশি ভয় করি, তা হল, বিভ্রান্তকারী নেতৃবর্গ। দাজ্জালের সময় এই চরিত্রের নেতাদের ছড়াছড়ি থাকবে।
দাজ্জালি শক্তির চাপ কিংবা প্রলোভনে এসে তারা নিজেরাও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং অনুগত অনুসারীদেরও সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখার কারণ হবে। হযরত আসমা বিনতে ইয়াজিদ আনসারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমার ঘরে অবস্থানরত ছিলেন।
সে সময় তিনি দাজ্জালের বিষয়ে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, “তার আগে তিনটি বছর অতিবাহিত হবে। প্রথম বছরটিতে আকাশ একতৃতীয়াংশ বৃষ্টি আটকে রাখবে আর মাটি একতৃতীয়াংশ ফসল ধরে রাখবে। দ্বিতীয় বছর আকাশ দুইতৃতীয়াংশ বৃষ্টি আটকে রাখবে আর মাটি দুইতৃতীয়াংশ ফসল ধরে রাখবে। তৃতীয় বছর আকাশ পূর্ণ বৃষ্টি আটকে রাখবে আর মাটি পূর্ণ ফসল ধরে রাখবে। ফলে সব ধরনের গবাদিপশু ধ্বংস হয়ে যাবে। (আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং ৪০৬; মুসনাদে আহমাদ) অপর এক বর্ণনায় আছেঃ তুমি আকাশকে বৃষ্টি বর্ষণ করতে দেখবে; অথচ সে বৃষ্টি বর্ষণ করবে না। তুমি জমিনকে ফসল উৎপন্ন করতে দেখবে; অথচ জমি ফসল উৎপন্ন করবে না
(মুসনাদে ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৬৯)
এর অর্থ এও হতে পারে যে, বৃষ্টিও বর্ষিত হবে, ফসলও উৎপন্ন হবে। কিন্তু তথাপি মানুষের কোন উপকার হবে না এবং মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে যাবে।

 

[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ০৪] দাজ্জালের গঠন-প্রকৃতি

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “পৃথিবীতে যত নবী রাসূল প্রেরিত হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ উম্মতকে মিথ্যাবাদী কানা দাজ্জাল
সম্পর্কে সতর্ক করেছে। দাজ্জাল কানা-ই হবে। আর তোমাদের রব অবশ্যই কানা নন। আর দাজ্জালের দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে কাফিরুন’”
(সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৫৯৮)

হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জালের ডান চোখ কানা হবে, যেন সেটি ফুলে থাকা আঙুর। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৬৫৯০)

হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জালের বাঁ চোখ কানা হবে। মাথার চুলগুলো হবে ঘন ও এলোমেলো। তার সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নাম থাকবে। কিন্তু মূলত তার জাহান্নাম হল জান্নাত আর জান্নাত হল জাহান্নাম
(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৪৮)

দাজ্জালের চুল সম্পর্কে ফাহুল বারীতে আছেঃ তাঁর মাথাটা যেন কোনও গাছের কতগুলো ডাল। অর্থাৎ - চুল পরিমাণে বেশি ও এলোমেলো হওয়ার কারণে মাথাটিকে গাছের ডাল পালার মত মনে হবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, “দাজ্জালের একটি চোখ বসানো থাকবে। অপর চোখে মোটা দানা থাকবে। তাঁর দুই চোখের মাঝে কাফিরুনলিখা থাকবে, যেটি লেখাপড়া জানা অজানা সব মুমিন পড়তে পারবে
(মিশকাত শরীফ, খণ্ড ৩, হাদিস নং ৫২৩৭)

মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় একথাও আছে যে, “তাঁর সঙ্গে দুজন ফেরেশতা থাকবে। তারা দুজন নবীর আকারে তার হাতে থাকবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি চাইলে উক্ত দুই নবী ও তাদের পিতাদেরও নাম বলতে পারবো। তাদের একজন দাজ্জালের ডান দিকে, একজন বাঁ দিকে থাকবে। এটি হবে পরীক্ষা।
দাজ্জাল বলবে, আমি তোমাদের রব নই কি? আমি কি মৃতকে জীবিত করতে পারি না? আমি কি মৃত্যু দিতে পারি না? উত্তরে এক ফেরেশতা বলবে, তুমি মিথ্যা বলছ। তার এই উক্তি দ্বিতীয় ফেরেশতা ছাড়া আর কেউ শুনতে পাবে না। ফলে দ্বিতীয় ফেরেশতা তার উত্তরে বলবে, তুমি ঠিকই বলেছ। দ্বিতীয় ফেরেশতার এই উক্তি সবাই শুনতে পাবে এবং ধরে নিবে, এই ফেরেশতা দাজ্জালকে সত্যায়ন করছে। এটিও হবে একটি পরীক্ষা
(মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২২১)

দাজ্জাল সুনির্দিষ্ট এক ব্যক্তি হবে। কারণ, হাদিসে সুস্পষ্টভাবে এ বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। কাজেই কোন রাষ্ট্রকে দাজ্জাল মনে করা ঠিক নয়। যেমনটি খাওয়ারিজ ও জাহমিয়া প্রভৃতি ভ্রান্ত দলসমূহ মনে করে থাকে। কাজী ইয়াজ (রহঃ) বলেছেন, ‘ইমাম মুসলিম প্রমুখ দাজ্জালের কাহিনীতে এই যে হাদিসগুলো বর্ণনা করেছেন, এগুলো প্রমাণ করছে, দাজ্জালের অস্তিত্ব যথার্থ এবং সে সুনির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি হবে
----

 

[চূড়ান্তপরীক্ষাঃ ০৫] দাজ্জালের উভয় চোখ ত্রুটিপূর্ণ হবে

দাজ্জালের চোখ সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা এসেছে। কোথাও তার ডান চোখ কানা বলা হয়েছে।কোথাও বাম চোখ। এবিষয়ে মুফতি মুহাম্মদ রফীউসমানী সাহেব আলামতে কেয়ামাত ওয়া নুযূলে মাসিহনামক গ্রন্থে লিখেছেন, “সার কথা হল, দাজ্জালের দুই চোখই ত্রুটিপূর্ণ হবে। বায়েরটি একদম জ্যোতিহীন ও মোছানো আর ডানেরটি কোঠর থেকে বের হওয়া থাকবে আঙ্গুরের মতো। হাফিজ ইবনে হাজর আসকালানি (রহঃ) তাফিয়ার ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, দাজ্জালের ডান চোখটি বাইরে বের হওয়া থাকবে। (ফাতহুল বারী, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা ৩২৫)
বর্তমান যুগে বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির লোগোতে আপনি একটি চোখ দেখতে পাবেন। কোথাও চোখটি শাদা, যেন চমকানো তারকা। আবার কোথাও চোখটির রং সবুজ দেখানো হয়, যেন সবুজ সিসা। হযরত উবাই ইবনে কাব (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জালের চোখ সিসার মতো সবুজ হবে
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ২১১৮৪, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৬৭৯৫)
এটি কি নিছক কাকতলীয় ঘটনা যে, এই কোম্পানিগুলো একটি ত্রুটিপূর্ণ চোখকে তাদের কোম্পানির মনোগ্রাম হিসাবে বেছে নিয়েছে? নাকি বুঝে শুনে এখন থেকেই তারা জনগণকে এই ত্রুটিপূর্ণ চোখটির সঙ্গে পরিচিত করে তুলছে? আলোচ্য হাদিসে আছে, দাজ্জালের কপালে কাফিরুনলিখা থাকবে। এখানে কথাটির প্রকৃত অর্থই উদ্দেশ্য। কাজেই এই দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক নয় যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য কোন কোম্পানির নাম কিংবা কোন রাষ্ট্রের পতাকা। ইমাম নববি মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে লিখেছেন, বিজ্ঞ আলেমগনের মতে সঠিক হল, উল্লেখিত লিখাটি বাস্তব। আল্লাহপাক একে দাজ্জালের মিথ্যাবাদী হওয়ার অকাট্য চিহ্ন হিসাবে স্থির করেছেন। প্রতিজন মুমিন এই লেখাটি পড়তে পারবে। প্রশ্ন জাগে, সবাই যখন পড়তে পারবে, তখন মানুষ তার ফেতনায় আক্রান্ত হবে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর হল, সেই হাদিস, যাতে বলা হয়েছে, পরিচয় পাওয়া সত্বেও বহু মানুষ আপন জাগতিক স্বার্থের খাতিরে দাজ্জালের সঙ্গ দিবে। আরেকটি উত্তর এই হতে পারে যে, পড়তে পারা আর লেখার মর্ম বুঝে সেই অনুযায়ী কাজকরা এক কথা নয়। বর্তমান যুগেও বহু মুসলমান এমন আছে, যারা কুরআনের বিধানাবলী পড়ে, কিন্তু সেই অনুযায়ী আমল করে না। জানে, কিন্তু মানে না। সবাই জানে, সুদি ব্যবস্থা সরাসরি আল্লাহর সাথে যুদ্ধ। কিন্তু বহু মানুষ কার্যত সুদের সাথে জড়িত। দাজ্জালের যুগেও বহু মানুষ মুদ্রা ও জাগতিক সৌন্দর্যের বিনিময়ে নিজের ঈমান বিক্রি করে ফেলবে। তারা ঈমান পরিত্যাগ করে দুনিয়াকে বরণ করে নেবে। কাজেই যারা আল্লাহর নামে জীবন বিলানোর পরিবর্তে দাজ্জালের সম্মুখে মাথানত করে ফেলবে, তারা দাজ্জালের কপালের কাফিরুনলিখাটি দেখতে পাবে না। বরং তাকে তারা যুগের মাসিহমানবতার মুক্তির সনদআখ্যা দেবে এবং এর পক্ষে যুক্তি প্রমাণ খুঁজে বেড়াবে। যারা দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, তাদেরকে তারা বিভ্রান্ত বলবে। তারপরও নিজেদের ব্যাপারে দাবি করবে, আমরা মুসলমান। অথচ ইসলামের সঙ্গে তাদের কোনোই সম্পর্ক থাকবে না। এসব এ জন্যই হবে যে, বদ আমল ও আত্মিক ব্যাধির কারণে তাদের ঈমানি শক্তি রহিত হয়ে যাবে।
এই উত্তর আমি নিজের পক্ষ থেকে দিচ্ছি না। এটি আমার মন গড়া কথা নয়। বরং বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববি (রহঃ) এই ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হাফিজ ইবনে হাজর (রহঃ) ফাতহুল বারীতে লিখেছেনঃ সেদিন আল্লাহ লেখাপড়া জানা ব্যতিরেকেই মুমিনদের জন্য বুঝ তৈরি করে দিবেন
ইমাম নববি লিখেছেনঃ সেদিন আল্লাহ মুমিনদের জন্য উক্ত লেখাটি প্রকাশ করে দেবেন আর বদকার লোকদের জন্য গোপন করে রাখবেন
----

 

[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ০৬] দাজ্জালের ফেতনা অনেক বিস্তৃত হবে

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাগনের মজলিসে যখনই দাজ্জালের আলোচনা করতেন, তখনই তাঁদের মধ্যে ভীতি সঞ্চারিত হয়ে যেত এবং কান্না শুরু করতেন। কিন্তু এর কারণ কি যে, আজ মুসলমানরা এই ব্যাপারে কোনোই চিন্তা করছে না? সম্ভবত তার কারণ হল, আজ মানুষ এই ফেতনাটিকে সেই অর্থে বুঝবার চেষ্টা করছে না, যে অর্থে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুঝিয়েছেন। আজ যদি কোন মুসলমান এই হাদিসটি শোনে, দাজ্জালের কাছে খাদ্যের পাহাড় ও পানির নহর থাকবে, তখন সে হাদিসটি এমন অবস্থায় শোনে যে, তাঁর পেট পরিপূর্ণ থাকে এবং পানির কোন অভাবই থাকে না। ফলে সে দাজ্জালের সময়কার পরিস্থিতিকেও নিজের ভরা পেট ও ভেজা গলার সময়কার অবস্থারই উপর অনুমান করে। এই হাদিসগুলো শোনার সময় তাঁর চোখের সামনে এ দৃশ্যটি মোটেও ভাসে না যে, তখনকার পরিস্থিতি এমন হবে যে, দিনের পর দিন নয়, সপ্তাহের পর সপ্তাহ কেটে যাবে, রুটির একটুকরোও জুটবে না। অনাহার মানুষকে কাহিল করে তুলবে। পানির অভাবে কণ্ঠনালীতে কাঁটা বিঁধবে। আপনি বাইরে থেকে ফিরে যখন ঘরে পা রাখবেন, তখন দেখতে পাবেন, আপনার কলিজার টুকরো যে সন্তানটির একটি মাত্র ইশারাতে তাঁর প্রতিটি বাসনা ও দাবি পূরণ হয়ে যেত, আজ তীব্র পিপাসায় তাঁর জীবনটা বের হয়ে গেছে। কয়েক দিনের অনাহার তাঁর গোলাপের মতো সুন্দর মুখ থেকে জীবনের সব সৌন্দর্য-ঔজ্জ্বল্য ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। দৃশ্যটি দেখামাত্র আপনার অন্তর খাঁ খাঁ করে উঠল। কিন্তু আপনি অসহায়, অক্ষম। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সন্তানের দিক থেকে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলেন। কিন্তু সেদিকে তাকালেন, অদিকে পড়ে আছে আক্ষেপ আর যন্ত্রণার আরেকখানি প্রতিচ্ছবি মা আম্মাজান, হ্যাঁ, আপনার আম্মাজান! সেই মা, যিনি আপনাকে ক্ষুধার্ত পেটে কখনও ঘুমতে দেননি। যিনি আপনার ইঙ্গিতেই আপনার পিপাসার কথা বুঝে ফেলতেন। যিনি নিজের সমস্ত সবাদ-আহ্লাদকে আপনার জন্য কুরবান করে দিয়েছিলেন। আজ আপনার সেই মা চোখের দৃষ্টিতে হাজারো প্রশ্ন ভরে নিয়ে যুবক পুত্রের দিকে তাকিয়ে আছেন এই আশায় যে, বাছা আমার আজ একটুকরো রুটি আর এক কাতরা পানি কোথাও থেকে সংগ্রহ করে এনেছে। কিন্তু পুত্রের মুখের লেখা পড়তে সক্ষম মা আপনার মুখাবয়বে লেখা জবাবটা পড়ে নিলেন। পুত্রের অসহায়ত্বের ফলে মায়ের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আপনার কলিজাটা মুখে বেরিয়ে আসবার উপক্রম হল। আপনি ভেতরে ভেতরেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যেতে লাগবেন।
কষ্টটা সহ্য করতে না পেরে এবার আপনি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এই আশায় যে, সম্ভবত ওদিকে কেউ নাই। কিন্তু না, আছে। ওখানে একজন পড়ে আছে আপনার জীবন সফরের সঙ্গিনী, পরীক্ষার প্রতিটি মুহূর্তে যে আপনাকে সাহস জুগিয়েছেন। কিন্তু আজ ঠোঁট দুটো তাঁর শুকনো। আর দেখতে না দেখতেই প্রেম আপনার অশ্রুতাপে গলে যেতে শুরু করল। অবশেষে আপনিও তো মানুষ। আপনার বুকেও তো গোশত পিণ্ডই ধুকধুক করে। সন্তানের স্নেহ, মায়ের মমতা ও স্ত্রীর প্রেম সবাই মিলে আপনার হৃদয়টাকে তামার মতো গলিয়ে দিল। কোথাও কোন আশ্রয় নেই, কোথাও কোন সহায় সহযোগিতা নেই। কেউ নেই আপনার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াবার। কি ভাবে থাকবে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি দরজায় এই একই দৃশ্য। কেউ নেই সাহায্য করবার সকলেরই সাহায্য দরকার! এমন সময় বাইরে থেকে সুস্বাদু খাবারের সুঘ্রাণ আর পানির কলকল শব্দ কানে ভেসে এল। আপনি ও আপনার পরিজন সবাই দৌড়ে বাইরে গেলেন। মনে হল, কষ্টের দিন বুঝি শেষ হয়ে গেছে। মানুষের এই বনে কোন মাসিহাএসে পড়েছেন। আগত মাসিহাঘোষণা করছে, ‘ক্ষুধা পিপাসায় কাতর লোকেরা! এই সুঘ্রাণযুক্ত সুস্বাদু খাবার, এই ঠাণ্ডা পানি তোমাদেরই জন্য। ঘোষণাটি শোনামাত্র আপনার, আপনার পরিজন ও নগরীর অন্যান্য বাসিন্দাদের আধা জীবন যেন এমনিতেই ফিরে এসেছে। মাসিহা আবার বলতে শুরু করল, এই সবকিছুই তোমাদেরই জন্য। কিন্তু তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, এই খাবার পানির মালিক আমি? তোমরা কি এই বাস্তবতাকে স্বীকার করছ যে, এ সব বস্তু
সামগ্রী আমার অধীনে? এই দ্বিতীয় ঘোষণাটি শোনার পর খাবার পানির প্রতি অগ্রসরমান আপনার পা কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেল। আপনি কিছু ভাবতে শুরু করলেন। আপনার স্মৃতি বলল, এই শব্দগুলো তো চেনা চেনা মনে হচ্ছে। আপনার মনে পড়ে গেল, এই মাসিহাটা কে? কিন্তু সেই মুহূর্তে পেছন থেকে আপনার সন্তানের কান্না তীব্র হতে লাগল। মায়ের আর্তনাদ কানে এসে বাজল। স্ত্রীর করুণ আহাজারি কানে এসে ঢুকল। আপনি ছুটে গেলেন। আপনার কলিজার টুকরা আপনার সন্তানটি মৃত্যু ও জীবনের মাঝে ঝুলছে। যদি কয়েক ফোঁটা পানি জুটে যায়, তাহলে শিশুটির জীবন বেঁচে যেতে পারে। এখন একদিকে আপনার সন্তান, মা ও স্ত্রীর ভালবাসা, অপরদিকে ঈমান বিধ্বংসী একটি প্রশ্নের উত্তর। একদিকে আনন্দপূর্ণ ঘর, অন্যদিকে বিলাপের আসর। যেন একদিকে আগুন, অন্যদিকে মন মাতানো ফুল বাগান। বলুন, বিবেকের বন্ধ জানালাগুলো খুলে দিয়ে ভাবুন, বিষয়টি কি এতই সহজ, যতটা আপনি মনে করছেন? বোধ হয় না। বরং তখনকার পরিস্থিতি হবে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ফেতনা! হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, “আদমের সৃষ্টি থেকে শুরু করে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সময়ে আল্লাহর নিকট দাজ্জাল অপেক্ষা বড় ফেতনা দ্বিতীয়টি নেই
(মুসতাদরাকে হাকেম , খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৭৩)
আরেক বর্ণনায় আছে, “আদম সৃষ্টি থেকে শুরু করে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সময়ে দাজ্জাল অপেক্ষা জঘন্য সৃষ্টি দ্বিতীয়টি আর নেই
(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৬৬)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন নামাজে তাশাহহুদ পাঠ করবে, তখন সে যেন চারটি বিষয় থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে। বলবে, হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের শাস্তি, কবরের শাস্তি, জীবন ও মৃত্যুর ফেতনা ও দাজ্জালের ফেতনা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি
(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১২)
দেখুন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে দাজ্জাল থেকে রক্ষা করার জন্য কত চিন্তা করতেন যে, আমাদেরকে নামাজের মধ্যে দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় চাওয়ার দুআ শিখিয়ে দিয়েছেন। হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “দাজ্জাল যখন বের হবে, তখন তার সঙ্গে পানি ও আগুন থাকবে। কিন্তু মানুষ যাকে আগুন বলে দেখবে, সেটিই হবে শীতল পানি। আর যাকে পানি বলে দেখবে, সেটিই হবে শীতল পানি। আর যদি দাজ্জালকে পায়, সে যেন সেই বস্তুটিতে অবতরণ করে, যাকে সে আগুন বলে দেখবে। কেননা, সেটিই হল সুমিষ্ট ঠাণ্ডা পানি
(সহিহ বুখারি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১২৭২)
অপর এক হাদিসে দাজ্জালের সঙ্গে গোশত ও রুটির পাহাড় থাকবে বলে উল্লেখ রয়েছে। তার অর্থ হল, যে লোক তার সম্মুখে মাথানত করবে, তার কাছে সম্পদ ও খাদ্যপন্যের সমারোহ থাকবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তাকে অমান্য করবে, তার উপর সব ধরনের অবরোধ আরোপ করে তার জীবনকে কোণঠাসা ও সংকটাপন্ন করে ফেলবে।
----

 

[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ০৭] দাজ্জাল কোথা থেকে আত্মপ্রকাশ করবে?

ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ বর্ণনা করেন, আমি আনাস ইবনে মালেককে বলতে শুনেছি, “ইস্ফাহানের সত্তর হাজার ইহুদী দাজ্জালের অনুসারী হবে। তাদের গায়ে সবুজ বর্ণের চাদর (বা জুব্বা) থাকবে
(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৬৬)

যেমনটি পেছনে বলে এসেছি, ইসরাইলে বিশেষ এক ধরনের পোশাক তৈরির কাজ চলছে, যেগুলো তাদের ধর্মনেতারা দাজ্জালের আবির্ভাবের পর পরিধান করবে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদিন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নিকট আগমন করলেন। আমি তখন বসে বসে কাঁদছিলাম। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার দাজ্জালের কথা মনে পড়ে গেছে। শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যদি সে আমার জীবদ্দশায় আত্মপ্রকাশ করে, তা হলে তোমার পক্ষে আমিই যথেষ্ট হব। আর যদি আমার পরে আত্মপ্রকাশ করে, তবুও তোমার আতঙ্কিত হওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। কেননা, তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কানা হবে আর তোমার রব কানা নন। সে ইস্ফাহানের ইহুদিয়া নামক অঞ্চল থেকে আত্মপ্রকাশ করবে
(মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ১৭৫)

হযরত আমর ইবনে হুরাইছ হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জাল পৃথিবীর এমন একটি অঞ্চল থেকে আত্মপ্রকাশ করবে, যেটি প্রাচ্যে অবস্থিত এবং যাকে খোরাসান বলা হয়। তার সঙ্গে অনেক দল মানুষ থাকবে। তাদের একটি দলের লোকদের চেহারা স্ফীত ঢালের মতো হবে
(মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭; সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৫৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৭)

দাজ্জালের সঙ্গে এমন একদল মানুষ থাকবে, যাদের মুখমণ্ডল এরূপ স্ফীত ঢালের মতো হবে। প্রশ্ন হল, সত্যিই কি তাদের মুখমণ্ডল এরূপ হবে? নাকি তারা কিছু পরিধান করে তাদের মুখমণ্ডল এরূপ বানিয়ে রাখবে? কোনটি সঠিক আল্লাহই তা ভালো জানেন।

এই হাদিসে খোরাসানকে দাজ্জালের আবির্ভাবের স্থান বলা হয়েছে। এর আগের বর্ণনায় বলা হয়েছে ইস্ফাহান। এই দুই বর্ণনায় মূলত কোন বিরোধ নেই। কারণ, ইস্ফাহান ইরানের একটি প্রদেশ আর ইরান একসময় খোরাসানের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

খোরাসান সম্পর্কে সেই বাহিনীর বর্ণনাও আছে, যারা ইমাম মাহদির সহায়তার আগমন করবে। কাজেই আমরা যদি মাহদি বাহিনীর লক্ষনগুলো সমগ্র খোরাসানে অনুসন্ধান করি, তাহলে তা আফগানিস্তানের সেই ভূখণ্ডটিতে পরিদৃষ্ট হবে, যেখানে বর্তমানে পাখতুন বসতি বেশি। তাই
লক্ষনদৃষ্টে বলা যায়, হযরত মাহদির সহায়তাকারী বাহিনীটি খোরাসানের সেই অঞ্চল থেকে গমন করবে, যেটি বর্তমানে তালেবান আন্দোলনের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত।

অপর এক বর্ণনায় দাজ্জালের আবির্ভাবস্থল হিসাবে ইরাক ও শামের মধ্যবর্তী একটি জায়গার কথা বলা হয়েছে। ফলে এখানে বাহ্যত বিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই বিরোধের সমাধান হল, দাজ্জালের আগমন ইস্ফাহান থেকেই ঘটবে। তবে তার প্রচার ও খোদায়ী দাবীর ঘটবে ইরাকে। এই হিসাবেও
একে আবির্ভাবনামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এখানে দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের স্থান ইস্ফাহানের ইহুদিয়া নামক একটি জায়গার কথা বলা হয়েছে। বুখতেনাচ্চর যখন বাইতুল মুকাদ্দাসের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল, তখন বহু সংখ্যক ইহুদি এই অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। সেই থেকে এই অঞ্চলের নাম হয়েছে ইহুদিয়া। ইহুদীদের মাঝে ইস্ফাহানের একটি বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এক হাদিসে বলা হয়েছে, দাজ্জালের সঙ্গে সত্তুর হাজার ইহুদি থাকবে।
----

 

[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ০৮] দাজ্জাল বিষয়ে ইরাক সম্পর্কে একটি বিস্ময়কর বর্ণনা

হায়ছাম ইবনে মালেক আত-তায়ী বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জাল দুই বছর ইরাক শাসন করবে। তাতে তার সুশাসন প্রশংসিত হবে এবং মানুষ তার দিকে ধাবিত ও আকৃষ্ট হবে। দুই বছর পর একদিন সে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিবে। তখন জনতাকে উদ্দেশ্য করে সে বলবে, এখনও কি সময় আসেনি, তোমরা তোমাদের প্রভুর পরিচয় লাভ করবে? এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করবে, আমাদের প্রভু কে? দাজ্জাল বলবে, আমি। আল্লাহর এক বান্দা তার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাকে হত্যা করে ফেলবে
(আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩৯)

ইমরান ইবনে হুসাইন বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে-ই দাজ্জালের আবির্ভাবের সংবাদ শুনবে, সে-ই যেন তার থেকে দূরে থাকে। আল্লাহর শপথ, এমন ঘটনা ঘটবে যে, কোন লোক এমন অবস্থায় তার কাছে আসবে, সে নিজেকে মুমিন ভাবছে, কিন্তু এসে তার
কর্মকাণ্ডে সন্দেহে নিপাতিত হয়ে তার অনুসারী হয়ে যাবে
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৭৬২)

দাজ্জালের ফেতনা সম্পদ, সৌন্দর্য ও শক্তি মোট কথা সব বিষয়ে হবে। আর জগত তার সবটুকু সৌন্দর্য নিয়ে শহরে নগরে অবস্থান করে থাকে। যে অঞ্চল শহর থেকে যত দূরে হবে, সেখানে দাজ্জালের ফেতনা তত কম হবে। উম্মে হারামের হদিসেও এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। উক্ত হাদিসে বলা হয়েছে, মানুষ দাজ্জাল থেকে এত পলায়ন করবে যে,তারা পাহাড়ে চলে যাবে।
----

 

[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ০৯] দাজ্জাল মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করবে না

হযরত আবু বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জালের প্রভাব মদিনায় প্রবেশ করবে না। সে সময় মদিনায় সাতটি ফটক থাকবে। প্রতিটি ফটকে দুজন করে ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবে
(সহিহ বুখারি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৫৫)

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এমন কোন নগরী নেই যেখানে দাজ্জাল প্রবেশ করবে না দুই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনা ব্যতীত। মদিনার প্রতিটি প্রবেশ দ্বারে সেদিন দুজন করে ফেরেশতা থাকবে, যারা তার থেকে দাজ্জালের প্রভাবকে প্রতিহত করবে
(মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৮৪)

হযরত মিহজান ইবনে আদরা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি তিনবার বলেছেন, “ইয়াওমুল খালাসি ওয়ামা ইয়াওমুল খালাসি। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, ‘ইয়াওমুল খালাসকি জিনিস? উত্তরে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জাল আসবে এবং অহুদ পাহাড়ের উপর আরোহণ করবে। তারপর তার সাথীদের বলবে, তোমরা কি ঐ শাদা ভবনটি দেখতে পাচ্ছ? এটি আহমদ-এর মসজিদ। তারপর সে মদিনার দিকে এগিয়ে আসবে। সে তার প্রতিটি পথে খাপখোলা তরবারি হাতে একজন ফেরেশতাকে দণ্ডায়মান দেখতে পাবে। সে সাফখাতুল জুরুফের দিকে যাবে এবং নিজ তাঁবুর গাঁয়ে আঘাত হানবে। তারপর মদিনা তিনটি কম্পনে প্রকম্পিত হবে, যার ফলে প্রত্যেক মুনাফিক পুরুষ ও নারী, ফাসেক পুরুষ ও নারী মদিনা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। এটিই হল ইয়াওমুল খালাসবা মুক্তির দিন’”
(মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৮৬)

দাজ্জাল মসজিদে নববীকে শাদা ভবনআখ্যা দিবে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সময় একথাটি বলেছিলেন, তখন মসজিদে নববী সম্পূর্ণ শাদা মাটির তৈরি ছিল। আর এখন যদি মসজিদে নববীকে দূর থেকে কিংবা কোন উঁচু জায়গা থেকে দেখা হয়, তাহলে অন্যান্য ইমারতের মাঝে তাকে পুরোপুরি একটি শাদা ভবনের মতোই মনে হয়। স্যাটেলাইটের সাহায্যে মসজিদে নববীর একটি চিত্র ধারণ করা হয়েছিল। তাতে মসজিদকে শাদা-ই দেখা যাচ্ছে। অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, দাজ্জালের সময় মদিনায় সাতটি ফটক থাকবে। তো সাত ফটক দ্বারা উদ্দেশ্য মদিনায় প্রবেশের সাতটি পথও হতে পারে। বর্তমানে মদিনা প্রবেশের সাতটি বড় রাস্তা বিদ্যমান রয়েছেঃ
১। জেদ্দা থেকে আসা পথ।
২। মক্কা থেকে আসা পথ।
৩। রাবিগ থেকে আসা পথ।
৪। বিমানবন্দর থেকে আসা পথ।
৫। তাবুক থেকে আসা পথ।
৬ ও ৭। এছাড়া আরও দুটি রাস্তা আছে, মফস্বল অঞ্চল থেকে মদিনায় প্রবেশ করা যায়। মুমিনদের জন্য খুবই চিন্তার বিষয়।
----

 

[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ১০] দাজ্জালের দুনিয়াতে অবস্থানকাল ও নিজেকে রব প্রমাণে যুবককে হত্যা ও জীবিত করা

হযরত নাওয়াস ইবনে সামআন (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, একদিন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তখন কথা বলার সময় তাঁর কণ্ঠস্বর কখনও নিচু হয়ে যাচ্ছিল, কখনও উঁচু হয়ে যাচ্ছিল। (তাঁর বক্তব্যের ধারায়) আমাদের মনে ধারনা জন্মাল, দাজ্জাল খেজুর বাগানের মধ্যে আছে। পরে সন্ধ্যায় যখন আমরা তাঁর খেদমতে হাজির হলাম, তখন তিনি আমাদের চেহারায় চিন্তার ছাপ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি হয়েছে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি দাজ্জালের আলোচনা করলেন। আপনার স্বর কখনও নিচু হচ্ছিল, কখনও উঁচু হচ্ছিল। ফলে আমাদের মনে ধারনা জন্মাল, দাজ্জাল বোধ হয় খেজুর বাগানে আছে। উত্তরে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘ও যদি আমার উপস্থিতিতে আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে তোমাদের পক্ষে আমিই যথেষ্ট হব। আর যদি আমার পরে আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে তোমাদের প্রত্যেককে আপন আপন দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর আল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানের হেফাজতকারী। দাজ্জাল তরতাজা যুবক হবে। তার চোখ বোজা থাকবে। সে আব্দুল ওযযা ইবনে কাতান এর মতো হবে। তোমাদের যেই তাকে পাবে, সেই যেন সূরা কাহফের প্রথম দিককার কটি আয়াত পাঠ করে। ইরাক ও শামের মধ্যখানে যে রাস্তাটি আছে, সে ঐ পথে আত্মপ্রকাশ
করবে। সে ডানে বাঁয়ে বিপর্যয় ও অরাজকতা ছড়াবে। হে আল্লাহর বান্দাগন, তোমরা দাজ্জালের মোকাবিলায় দৃঢ়পদ থেকো। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, দুনিয়াতে সে কতদিন থাকবে? নবীজি (সাঃ) উত্তর করলেন, ‘চল্লিশ দিন। প্রথম একটি দিন এক বছরের সমান হবে। দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের সমান হবে। তৃতীয় দিনটি এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো সাধারণ দিনের মতো হবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তার ভ্রমনের গতি কেমন হবে? আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সেই বৃষ্টির মতো, বাতাস যাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। সে একটি সম্প্রদায়ের কাছে আসবে এবং তাদেরকে তাকে রব মেনে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবে। তারা তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং সে যা যা বলবে, সব মেনে নেবে। ফলে দাজ্জাল (তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে) আকাশকে আদেশ করবে, ফলে বৃষ্টি হবে। সে মাটিকে আদেশ করবে, ফলে মাটি ফসল
উৎপাদন করে দেবে। সন্ধ্যার সময় যখন তাদের পশুপাল ফিরে আসবে, তখন (পেট ভরে খাওয়ার কারণে) তাদের চুটগুলো উত্থিত থাকবে এবং স্তন দুধে পরিপূর্ণ হবে। তাদের পাগুলো (বেশি খাওয়ার ফলে) ছড়ানো থাকবে। তারপর দাজ্জাল অপর একটি সম্প্রদায়ের কাছে যাবে এবং তাদেরকে তাকে রব মেনে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবে। কিন্তু তারা তার আমন্ত্রণ
প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের কাছ থেকে ফিরে যাবে, যার ফলে তারা দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে পড়বে এবং ধন সম্পদ সব নিঃশেষ হয়ে যাবে। দাজ্জাল একটি অনুর্বর জমির পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে এবং তাকে আদেশ করবে, তুমি তোমার ধন ভাণ্ডার বের করে দাও। জমি তার ধনভাণ্ডারকে বের করে দিয়ে তার পেছনে এমনভাবে চলতে শুরু করবে, যেমন মৌমাছিরা তাদের নেতার পিছনে চলে থাকে। তারপর সে তাগড়া এক যুবককে ডেকে আনবে এবং তরবারির এক আঘাতে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলবে। খণ্ড দুটি এত দূরে গিয়ে নিক্ষিপ্ত হবে, লক্ষ্যে-ছোড়া-তীর যত দূরে গিয়ে নিক্ষিপ্ত হয়। এবার দাজ্জাল তাকে (দুই টুকরো হয়ে যাওয়া যুবককে) ডাক দিবে। সঙ্গে সঙ্গে যুবক উঠে তার কাছে চলে আসবে। এই ধারা চলতে থাকবে। এরই মধ্যে আল্লাহ ঈসা (আঃ) কে পাঠিয়ে দেবেন
(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৫০)

অপর এক বর্ণনায় আছে, “দাজ্জাল উক্ত যুবকের উপর অনেক নির্যাতন চালাবে। তার কোমরে ও পিঠে বেদম প্রহার করবে। তারপর জিজ্ঞেস করবে, এবার বল, আমার উপর ঈমান এনেছ কি? যুবক বলবে, তুমি দাজ্জাল।
এবার দাজ্জাল তাকে করাত দ্বারা দুই পায়ের মধ্যখান দিয়ে চিড়ে ফেলতে আদেশ দেবে। তার আদেশ পালিত হবে। যুবককে তার পায়ের মধ্যখান দিয়ে চিড়ে ফেলা হবে। তারপর দাজ্জাল তাকে জোড়া লাগিয়ে জিজ্ঞেস করবে, এবার মানছ কি আমাকে? যুবক বলবে, এখন তো আমি আরও নিশ্চিত হয়েছি যে, তুমি দাজ্জাল। তারপর যুবক জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলবে, লোক সকল, আমার পরে এ আর কারও সাথে এরূপ আচরণ করতে পারবে না। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তারপর দাজ্জাল যুবককে জবাই করার জন্য পাকড়াও করবে। কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে তার গলাটাকে পুরোপুরি তামায় পরিণত করে দেওয়া হবে। ফলে দাজ্জাল তাকে কাবু করতে পারবে না। এবার দাজ্জাল তার হাত পা ধরে ছুড়ে মারবে। মানুষ মনে করবে, তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ দাজ্জাল তাকে যেখানে নিক্ষেপ করেছে, সেটি হল জান্নাত। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর সমীপে এই যুবকের শাহাদাত শ্রেষ্ঠ শাহাদাত বলে গণ্য হবে
(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৫৬; মুসনাদে আবী ইয়ালা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩৪)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক বর্ণনা করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করলে ঈমানদার ব্যক্তিদের মধ্যে এক ব্যক্তি তার কাছে যাবে। তার সাথে দাজ্জালের প্রহরীদের দেখা হবে। তারা তাকে বলবে, 'কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা করছ?' সে বলবে,' আমি এই আবির্ভূত ব্যক্তির কাছে যেতে ইচ্ছা করছি।' প্রহরীরা বলবে, 'আমাদের রবের প্রতি কি তোমাদের ঈমান নেই?' সে বলবে, 'আমাদের রবের ব্যাপারে তো কোনরূপ গোপনীয়তা নেই।' তারা বলবে, 'একে হত্যা কর।' কিন্তু এদের মধ্যে কেউ কেউ বলাবলি করবে, 'তোমাদের রব কি তোমাদেরকে তার অগোচরে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করতে নিষেধ করেননি?' সুতরাং তারা তাকে দাজ্জালের কাছে নিয়ে যাবে। যখন মুমিন ব্যক্তি দাজ্জালকে দেখবে তখন বলবে, 'হে লোক সকল! এই তো সেই দাজ্জাল যার প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন।' এরপর দাজ্জালের নির্দেশে তার দেহ হতে মাথা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। তার পেট ও পিঠ উন্মুক্ত করে পিটানো হবে আর বলা হবে, 'তুমি কি আমার প্রতি ঈমান স্থাপন কর না?' উত্তরে মুমিন ব্যক্তি বলবে, 'তুমিই তো সেই মিথ্যাবাদী মাসীহ দাজ্জাল।' সুতরাং তার নির্দেশে মুমিন ব্যক্তির মাথার সিঁথি হতে দুপায়ের মধ্য পর্যন্ত করাত
দিয়ে চিরে দুটুকরা করা হবে। দাজ্জাল তার দেহের এ দুই অংশের মধ্য দিয়ে এদিক হতে ওদিকে গমন করবে। এরপর সে মুমিন ব্যক্তির দেহকে সম্বোধন করে বলবে,' পূর্বের মত হয়ে যাও।' তখন সে আবার পরিপূর্ণ মানব হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। আবার সে বলবে, 'এখন কি তুমি ঈমান পোষণ কর?'
মুমিন মানবটি বলবে,'তোমার সম্পর্কে এখন আমি আরো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম।' সে মানবদেরকে ডেকে বলবে, 'হে মানবমণ্ডলী! আমার পর এ আর কারো কিছু করতে পারবে না।' দাজ্জাল পুনরায় তাকে হত্যা করতে চাইবে। কিন্তু আল্লাহ তার ঘাড়কে গলার নিচের হাড় পর্যন্ত পিতলে মুড়িয়ে দেবেন। ফলে সে তাকে হত্যা করার আর কোন উপায় পাবে না। বাধ্য হয়ে সে তার দুহাত ও দুপা ধরে ছুঁড়ে ফেলবে। মানুষে ধারণা করবে দাজ্জাল তাকে আগুনে নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সে বেহেশতে নিক্ষিপ্ত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'এই ব্যক্তি বিশ্ব জগতের রব আল্লাহর কাছে মানবের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত স্তরের শহীদের মর্যাদা লাভ করবে।'
( মুসলিম)
----

 

[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ১১] দাজ্জালের অবস্থানে সময় থেমে যাবে কি?

সময়ের থেমে যাওয়া দাজ্জালের জাদুর ক্রিয়া হবে কিংবা সে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এমনটি করবে। কেননা, সাহাবা কিরাম যখন জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল, এই অবস্থায় আমরা নামাজ কত ওয়াক্ত পড়ব? তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিয়েছিলেন, সময় অনুমান করে নামাজ আদায় করতে থাকবে। দাজ্জালি শক্তিগুলো সময়ের গতিকে রোধ করার লক্ষ্যে অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আপনি হয়তো শুনে থাকবেন, ‘টাইম মেশিননামে এমন একটি প্রযুক্তি আবিস্কারের চেষ্টা চলছে, যার সাহায্যে মানুষকে বিগত সময়ে পৌঁছে দেওয়া যায়। মানুষ মূলত বর্তমান সময়েই অবস্থান করবে; কিন্তু মেশিনটির সাহায্যে মনে হবে, এখনও বিগত সময়ের মধ্যেই রয়েছে। এর স্পষ্ট চিত্র হয়তো শীঘ্রই বিশ্ববাসীর সামনে চলে আসবে। সাহাবাগনের দাজ্জালের গতি ও দুনিয়াতে তার অবস্থানের মেয়াদকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা তাদের সামরিক চিন্তার প্রমাণ বহন করে। প্রশ্নটি করে তারা জানতে চেয়েছিলেন, আমাদেরকে দাজ্জালের সাথে কতদিন যুদ্ধ করতে হবে। যেহেতু যুদ্ধে চলাচল এবং দৌড়ঝাঁপ একটি অতিশয় গুরুত্তপূর্ন বিষয়, তাই তারা জিজ্ঞেস করেছিলেন, দাজ্জালের গতি কেমন হবে? দাজ্জালের মেয়াদকালের প্রথম দিনটি এক বছরের সমান হবে। দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের সমান হবে আর তৃতীয় দিনটি দিনটি হবে এক সপ্তাহের সমান। অবশিষ্ট ৩৭ দিন সাধারণ দিবসের মতো হবে। এই হিসাবে দাজ্জালের দুনিয়াতের অবস্থানের মেয়াদকাল এক বছর দুই মাস চৌদ্দ দিনের সমান হয়।
একদিন এক বছরের সমান হবে। কোন কোন বিশ্লেষক দিবসের দীর্ঘ হওয়ার অর্থ এই লিখেছেন যে, পেরেশানির কারণে দিনটি দীর্ঘ বলে মনে হবে।কিন্তু মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববি (রহঃ) লিখেছেন, হাদিস বিশেষজ্ঞদের মতে হাদিস দ্বারা বাহ্যত যা বোঝা যাচ্ছে, বাস্তবে তা-ই এর মর্ম। অর্থাৎ প্রথম তিনটি দিন এতটাই দীর্ঘ হবে, যা হাদিসে বলা হয়েছে। অবশিষ্ট দিনগুলো সাধারণ দিনেরই মতো হবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই উক্তিই তার প্রমাণ বহন করে। তা ছাড়া সাহাবা কিরাম এই যে প্রশ্ন করেছেন, “ উক্ত দিনগুলোতে আমরা নামাজ কত ওয়াক্ত পড়ব আর তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিয়েছিলেন, সময় হিসাব করে নামাজ আদায় করবে” – এ বিষয়টিও প্রমাণ করে যে, এখানে প্রকৃত দীর্ঘতা-ই বোঝানো হয়েছে। দাজ্জাল তার ডানে ও বাঁয়ে অনাচার ও বিপর্যয় ছড়াতে থাকবে’ – একথার অর্থ হল, সে যেখানেই যাবে, সেখানেই অনাচার ও বিপর্যয় তৈরি হবে। তার ডানে বাঁয়ে তার এজেন্টরা বিপর্যয় তৈরি করতে থাকবে। যেমনটি আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি যে, প্রধান সেনাপতি বিশেষ বিশেষ জায়গায় যান। অবশিষ্ট জায়গাগুলোতে তার অধীনদের পাঠিয়ে দেন। এই দাবীর পক্ষে সেই বর্ণনাগুলো প্রমাণ বহন করছে, যেগুলোতে বলা হয়েছে, দাজ্জাল যখন এক যুবক সম্পর্কে সংবাদ পাবে, সে তাকে মন্দ বলছে, তখন সে তার লোকদেরকে বার্তা পাঠাবে, অমুক যুবককে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসো। নুআঈম ইবনে হাম্মাদ আলফিতানেএই বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে, দাজ্জাল ছাড়াও তার লোকেরা মুমিনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যাপৃত থাকবে আর দাজ্জাল স্থানে স্থানে গিয়ে তাদের দেখভাল করবে।
---


 
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free