3-"তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ মাহদি ও দাজ্জাল"
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ১৯] দাজ্জাল ও পানি নিয়ে যুদ্ধ
সম্ভবত এখনও মানুষ বুঝতে সক্ষম হবে না যে, দাজ্জাল পানি নিয়ে যুদ্ধ করবে কেন। পানি তো সব জায়গায় পাওয়া যায়। বিষয়টি বুঝতে হলে বর্তমান পৃথিবীতে পানির বাস্তবতা বুঝতে হবে। পৃথিবীতে সুপেয় পানির দুটি বড় ভাণ্ডার আছে। একটি হল তুষারময় পর্বত। এই ভাণ্ডারের পানির পরিমাণ ২৮ মিলিয়ন কিউবেক কিলোলিটার। দ্বিতীয়টি পাতাল। এই ভাণ্ডারটির পানির পরিমাণ ৮ মিলিয়ন ইউবেক কিলোলিটার। এভাবে পৃথিবীতে বিদ্যমান পানযোগ্য পানির বড় পরিমাণটি হল বরফ, যা গলে পৃথিবীর বিভিন্ন নদীর মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে ভূগর্ভস্থ পানি তার তুলনায় কম। বরফের এই মজুদ এন্টার্টিকা ও গ্রিনল্যান্ডে বেশি। আর এই দুই স্থানের উপর কোন মুসলিম রাষ্ট্রের কোন অধিকার নেই। বাকি থাকল ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ। এক্ষেত্রেও দুধরনের অঞ্চল থাকে। একটি সমতল অঞ্চল আরেকটি পার্বত্য। সমতল এলাকায় শহরাঞ্চলের পানির উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত করা কঠিন কিছু নয়। কেননা, শহরাঞ্চলের পানির সমুদয় স্টক কোনো না কোনো জলাধার বা সরকারী পাম্প থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে আগত পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। সেজন্য শহুরে মানুষ পানির জন্য পুরোপুরিভাবে সেখানকার প্রশাসনের দায়ভার ও অনুগ্রহের উপর নির্ভরশীল। দাজ্জালের ফেতনা গ্রামের তুলনায় শহর এলাকায় বেশি কঠোর হবে এবং শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ নাগরিক উক্ত ফেতনার শিকার হয়ে যাবে। তবে পল্লী অঞ্চলের পানির উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার জন্যও দাজ্জালি শক্তিগুলো তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
ভবিষ্যতে পৃথিবীতে পানি নিয়ে যুদ্ধ হবে এমন গুজব আপনি শুনে থাকবেন।
জর্ডান, ফিলিস্তিন, লেবানন ও সিরিয়ার সঙ্গে ইসরাইলের, ইরাকের সঙ্গে তুরস্কের, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পানি নিয়ে বিরোধ-বিবাদ জীবন-মৃত্যুর সমান মর্যাদা রাখে। দাজ্জালি শক্তিগুলো যদি মুসলিম বিশ্বের উপর প্রবাহমান নদী সাগরগুলোর উপর ড্যাম তৈরি করে এবং সেই ড্যামগুলোর উপর তাদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তা হলে তারা নদীগুলোর প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে এই জগতটিকে মরুভূমিতে পরিণত করে দিতে পারবে। নদী যখন বন্ধ হয়ে যাবে, তখন ভূগর্ভস্থ পানি অনেক নিচে চলে যাবে। তারপর এমন একটি সময় আসবে, যখন মানুষের কাছে পানযোগ্য কোন পানি থাকবে না। ফলে মানুষ ফোঁটা ফোঁটা পানির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়বে। এখন আমরা সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিন এর পানির অবস্থা, ইরাকের, মিসরের এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পানি নিয়ে আলোচনা করছি।
সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিনঃ তাবরিয়া উপসাগর বর্তমান পূর্ব ইসরাইলে জর্ডান সিমান্তের সন্নিকটে অবস্থিত। এসময়ও তাতে মিষ্টি পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে তার দৈর্ঘ্য উত্তর থেকে দক্ষিনে ২৩ কিলোমিটার। দৈর্ঘ্য বেশির ভাগ উত্তর দিকে, যার পরিমাণ ১৩ কিলোমিটার। তার সর্বোচ্চ গভীরতা ১৫৭ ফুট। মোট ভূখণ্ডের পরিমাণ ১৫৬ কিলোমিটার। বর্তমানে তাতে নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। বর্তমানে তাবরিয়া উপসাগর ইসরাইলের মিষ্টি পানির সবচেয়ে বড় মাধ্যম। আর এই সাগরের পানির প্রধান মাধ্যম হল জর্ডান নদী, যেটি গোলান পর্বতমালার ধারা জাবালুস-শায়খ থেকে এসেছে। ইসরাইল এখন যে কাজটি করেছে, তা হল তারা আগে ভাগেই তাবরিয়া উপসাগরের গতি ঘুরিয়ে ইসরাইলের দিকে নিয়ে গেছে। এর দ্বারা তারা নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করছে। অবশিষ্ট পানিগুলো তারা মরুভূমিতে নিয়ে ফেলছে, যাতে মুসলমানদেরকে পানি থেকে বঞ্চিত করা যায়। এর ফলে জর্ডানের ভূমি বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর ফলে তাবরিয়া উপসাগরও শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল সিরিয়া থেকে গোলানের পর্বতমালাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। জাবালুশ-শায়খ গোলানের পাহাড়ি ধারার সবচেয়ে উঁচু চূড়া, যেখান থেকে একদিকে বাইতুল মুকাদ্দাস এবং অপরদিকে দামেস্ক একেবারে তার নিচে পরিদৃশ্য হয়। তার উচ্চতা ৯২৩২ ফুট। বর্তমানে জাবালুশ-শায়খের উপর লেবানন, সিরিয়া ও ইসরাইলের
কব্জা প্রতিষ্ঠিত। কিছু এলাকা জাতিসংঘের অসামরিক অঞ্চল। পানির দিক থেকে জাবালুশ-শায়খ মুক্ত অঞ্চল। এভাবে ভৌগলিক দিক থেকে এবং পানির বিবেচনায়ও এই পাহাড়ি ধারা উক্ত অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া সেই হাদিসগুলোকেও সামনে রাখতে হবে, যেগুলোতে তাবরিয়া উপসাগর, বাইতুল মুকাদ্দাস ও আফীক ঘাঁটির উল্লেখ রয়েছে। সর্বোপরি একথাটিও মনে রাখতে হবে যে, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা যে মহাযুদ্ধের ধারণা লালন করে যে, মহাযুদ্ধ মেগড –এর মাঠে অনুষ্ঠিত হবে, এই মাঠের অবস্থানও তাবরিয়া উপসাগরের কাছাকাছি পশ্চিমে। আফীক এর যে ঘাঁটিতে দাজ্জাল মুসলমানদের যে অবরোধটি করবে, তার অবস্থানও তাবরিয়া উপসাগরের দক্ষিণে।
ইরাকঃ ইরাকে বড় দুটি নদী প্রবাহমান। দজলা ও ফোরাত। উভয়টি এসেছে তুরস্ক থেকে। তুরস্ক ফোরাত নদীর উপর ‘আতাতুর্ক ড্যাম’ তৈরি করেছে, যেটি পৃথিবীর বড় ড্যামগুলোর একটি, যার পানি ধারনের স্থান ৮১৬ বর্গ কিলোমিটার। এই ভাণ্ডারটি ভরতে হলে ফোরাত নদীকে বর্ষা মৌসুমে এক মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে তাতে ঢালতে হবে। তার অর্থ হল, তুরস্ক তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য ফোরাত নদীর পানি এক মাস পর্যন্ত ইরাক যেতে দিবে না। আর ইসলাম প্রশ্নে তুরস্কের আগের সরকারগুলোর অবস্থান সবারই জানা। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম বর্তমান এরগোদান সরকার। আর তাকে সরানোর সব ধরনের চেষ্টা বর্তমানে অব্যাহত। হযরত আবু জায়িরার এক বর্ণনায় ফোরাত নদীর তীরে দাজ্জালের যুদ্ধের কথা এসেছে।
তিনি বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর নিকট দাজ্জালের আলোচনা উত্থাপিত হলে তিনি বললেন, “তার আবির্ভাবের সময় মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। একদল তার অনুগামী হয়ে যাবে। একদল অভিভাবকের ভূমিকা নিয়ে পরিজনের সাথে ঘরে বসে থাকবে। একদল এই ফোরাতের তীরে এসে শক্তপায়ে দাঁড়িয়ে যাবে। দাজ্জাল তাদের সাথে যুদ্ধ করবে আর তারা দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি তারা শামের (সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, প্যালেস্টাইন ও দখলকৃত প্যালেস্টাইন নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল) পশ্চিমাঞ্চলে লড়াই করবে। তারা একটি সেনা ইউনিট প্রেরণ করবে, যাদের মাঝে চিত্রা বা ডোরা বর্ণের ঘোড়া থাকবে। এরা ওখানে যুদ্ধ করবে। ফল এই দাঁড়াবে যে, এদের একজনও ফিরে আসবে না”।
(মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৪১)
মিশরঃ মিশরের সবচেয়ে বড় নদীটি হল নীলনদ। কিন্তু এটিরও উৎপত্তি আফ্রিকার উগান্ডা সেন্ট্রালের ভিক্টোরিয়া ঝিল। নীলনদের পানির সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল রুয়ান্ডা নদী। ২০১১ সালে ইথিউপিয়া সরকার ৪.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে “গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেজিস্টেন্স ড্যাম” নামে ইথিওপিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান নীল নদের উপর ড্যাম নির্মাণ শুরু করে, যার নির্মাণ কাজ শেষ হবার কথা ২০১৭ সালে।
শুরু থেকেই মিসরের সরকার অতি নির্ভরশীল নীল নদের উপর এই ড্যাম নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। সর্বশেষ ৩রা জুন ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট মুরসি প্রয়োজনে এই ড্যাম ধ্বংস করার জন্য যুদ্ধ করার ঘোষণা দেন এবং এর কয়েক সপ্তাহ পরেই ক্ষমতাচ্যুত হন। এখন আমরা মহাযুদ্ধের পূর্বে ক্ষয়ক্ষতি বা ধ্বংসের ব্যাপারে কিছু হাদিসকে খুব সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করব। শহর নগরীর ধ্বংস বা ক্ষয়ক্ষতি যে সব হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতে ‘খারাবুন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এই শব্দটি পুরোপুরি হোক বা আংশিক সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা ধবংসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
হযরত মাছজুর ইবনে গায়লান হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, “সবার আগে ধ্বংস হওয়া ভূখণ্ড হল বসরা (বর্তমান ইরাকে) ও মিশর”।
বর্ণনাকারী জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি কারণে তাদের ধ্বংস নেমে আসবে; ওখানে তো অনেক বড় সম্মানিত ও বিত্তবান ব্যক্তিরা আছেন?’
উত্তরে আবদুল্লাহ ইবনে সামিত (রাঃ) বললেন, “রক্তপাত, গণহত্যা ও অত্যাধিক ক্ষুধা। আর মিসরের সমস্যা হল নীলনদ শুকিয়ে যাবে আর এটিই মিসরের ধবংসের কারণ হবে”।
(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৯০৭)
যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক দখলের পর থেকে আজ পর্যন্ত সেখানকার রক্তপাত, গণহত্যা ও অত্যাধিক ক্ষুধা সম্পর্কে প্রায় সব চৌকস ঈমানদারগণই ওয়াকিবহাল। আর জুলাই ২০১৩ তে মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির পরে মিসরের রক্তপাত ও গণহত্যা সম্পর্কেও প্রায় সব চৌকস ঈমানদারগণই ওয়াকিবহাল। এখন অপেক্ষা নীলনদের করুনদশার।
হযরত ওহব ইবনে মুনব্বিহ সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন,
“মিশর ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত জাজিরাতুল আরব (বর্তমান সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও ইয়েমেন) নিরাপদ থাকবে। কুফা (বর্তমান ইরাকে) ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত মহাযুদ্ধ সংঘটিত হবে না। মহাযুদ্ধ সংগঠিত হয়ে গেলে বনু হাশিমের এক ব্যক্তির হাতে কুস্তুন্তুনিয়া (বর্তমান ইস্তাম্বুল) জয় হবে”।
(আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৮৮৫)
এখানেও মহাযুদ্ধের পূর্বে সর্বপ্রথম মিশর ও ইরাকের ধ্বংস বা ক্ষতির কথা বলা হয়েছে এবং এই ভূখণ্ডগুলোর (ইরাক ও মিশর) ধ্বংস বা ক্ষতির আগ পর্যন্ত জাজিরাতুল আরব (বর্তমান সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান ও ইয়েমেন) এর নিরাপদে থাকার কথা বলা হয়েছে। আর এই জাজিরাতুল আরবেই মুসলিম বিশ্বের দুই প্রাণ প্রিয় নগরী মক্কা ও মদিনা অবস্থিত।
হযরত মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বাইতুল মাকদিসের আবাদ হওয়া মদিনার ক্ষতির কারণ হবে। মদিনার ক্ষতি মহাযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে। মহাযুদ্ধ কুস্তুন্তুনিয়ার (ইস্তাম্বুলের) বিজয়ের কারণ হবে। কুস্তুন্তুনিয়ার বিজয় দাজ্জালের আবির্ভাবের কারণ হবে”।
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদিসের বর্ণনাকারীর (অর্থাৎ - স্বয়ং তাঁর) উরুতে কিংবা কাঁধের উপর
চাপড় মেরে বললেন, “তোমার এই মুহূর্তে এখানে উপবিষ্ট থাকার বিষয়টি যেমন সত্য, আমার এই বিবরণও তেমনই বাস্তব”।
(সুনানে আবী দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১০; মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৪৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা)
‘বাইতুল মুকাদ্দাসের আবাদ হওয়া’ দ্বারা উদ্দেশ্য ওখানে ইহুদীদের শক্তি প্রতিষ্ঠা হওয়া (ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই ঘটনাটি ঘটে গেছে)। এখন ইহুদীদের নাপাক দৃষ্টি পবিত্র মদিনার উপর নিবদ্ধ। প্রকৃত ঈমানদারগণ ইহুদীদের এই ষড়যন্ত্র বুঝে ফেলেছে। এভাবে তখন থেকে শুরু হওয়া কুফর ও ইসলামের লড়াই এখন দ্রুতগতিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তমূলক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানঃ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বেশির ভাগ নদী এসেছে ভারত থেকে। ভারত সেগুলোর উপর ড্যাম তৈরি করছে। ভারতে নির্মিত ফারাক্কা ড্যাম এর কারণে বাংলাদেশের উপর প্রভাব সম্পর্কে আর নতুন করে লিখার কিছু নেই। আর বাংলাদেশের সাথে তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে চলমান নাটক সম্পর্কেও সবাই ওয়াকিবহাল। চন্নাব নদীর উপর বাগলিহার ড্যাম নির্মাণ এবং নিলাম নদীর উপর কাসনগঙ্গা ড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের পানির গতিরোধ করে ভূখণ্ডটির পানির উপর নিয়ন্ত্রনের প্রয়াস সম্পন্ন করেছে। আর দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের মুজাহিদদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
হযরত নাহীক ইবনে সারীম (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে”।
(আল ইসাবা, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৭৬)
এখানে মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী জাতি। তার
মানে এটি সেই যুদ্ধ – “গাজওয়াতুল হিন্দ”, যেখানে মুজাহিদরা এই উপমহাদেশে আক্রমণ চালাবে, আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন, ক্ষমা করে দেবেন, বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা জেরুজালেমে ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা (আঃ) সাক্ষাত পাবে এবং ঈসা (আঃ) নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে।
( সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২; আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০৯ ও ৪১০)
----
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ২০] ইমাম মেহেদী নেতৃত্বে খ্রিস্টিয়ানদের সঙ্গে ও ঈসা(আঃ) এর দাজ্জালের সঙ্গে মহাযুদ্ধ কি তরবারি দিয়ে হবে?
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে শামের সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে”।
(সুনানে আবি দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৬৯)
আলগুতা সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। এখানকার মওসুম সাধারণ উষ্ণ থাকে। তাপমাত্রা জুলাইয়ে সর্বনিম্ন ১৬.৫ এবং সর্বোচ্চ ৪০.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকে। জানুয়ারীতে থাকে সর্বনিম্ন ৯.৩ ডিগ্রী আর সর্বোচ্চ ১৬.৫ ডিগ্রী।
মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী এর হাতে থাকবে।
যেহেতু এখানে মহাযুদ্ধের বিশদ আলোচনা এই লিখার উদ্দেশ্য নয়, তাই আমরা সরাসরি মুসলিম শরীফের একটি হাদিসে চলে যাব যেখানে মহাযুদ্ধের ভয়াবহতার কিছুটা দৃশ্যপট বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন,
‘এমন একটি পরিস্থিতির উদ্ভব না হওয়া পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যখন উত্তরাধিকারও বন্টিত হবে না, গনিমতের জন্য আনন্দও করা হবে না’। এরপর তিনি সিরিয়ায় দিকে আঙ্গুল তুলে আঙ্গুল তুলে এর ব্যাখ্যা প্রদান করলেন। বললেন, ‘সিরিয়ার ইসলামপন্থীদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে বিরাট এক বাহিনী প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। ইসলামপন্থীরাও তাদের মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়ে যাবে’।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি রোমানদের (খ্রিস্টানদের) কথা বলতে চাচ্ছেন? আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন,
‘হ্যাঁ, সেই যুদ্ধটি হবে ঘোরতর। মুসলমানরা জীবনের বাজি লাগাবে। তারা প্রত্যয় নিবে, বিজয় অর্জন না করে ফিরব না। উভয়পক্ষ লড়াই করবে। এমনকি যখন রাত উভয়ের মাঝে আড়াল তৈরি করবে, তখন উভয়পক্ষ আপন আপন শিবিরে ফিরে যাবে। কোন পক্ষই জয়ী হবে না। এভাবে একদল আত্মঘাতী জানবাজ শেষ হয়ে যাবে।
তারপর আরেকদল মুসলমান শপথ নিবে। হয় জয় ছিনিয়ে আনব, নতুবা জীবন দিয়ে দিব। তারা যুদ্ধ করবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। রাত নেমে এলে উভয়পক্ষই উভয়পক্ষই জয় না নিয়ে শিবিরে ফিরে যাবে। এই জানবাজ দলটিও নিঃশেষ হয়ে যাবে।
চতুর্থ দিন অবশিষ্ট মুসলমানগণ যুদ্ধের জন্য শত্রুর মোকাবিলায় দাঁড়িয়ে যাবে। এবার আল্লাহ শত্রুপক্ষের জন্য পরাজয় অবধারিত করবেন। মুসলমানরা ঘোরতর যুদ্ধ করবে – এমন যুদ্ধ, যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াবে যে, মৃতদের পাশ দিয়ে পাখিরা উড়বার চেষ্টা করবে; কিন্তু মরদেহগুলো এত দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকবে কিংবা লাশগুলো এত দুর্গন্ধ হয়ে যাবে যে, পাখিগুলো মরে মরে পড়ে যাবে। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈন্যদের পরিজন তাদের গণনা করবে। কিন্তু শতকরা একজন ব্যতীত কাউকে জীবিত পাবে না। এমতাবস্থায় গনিমত বণ্টনে কোন আনন্দ থাকবে কি? এমতাবস্থায় উত্তরাধিকার বণ্টনের কোন সার্থকতা থাকবে কি?
পরিস্থিতি যখন এই দাঁড়াবে, ঠিক তখন মানুষ আরও একটি যুদ্ধের সংবাদ শুনতে পাবে, যা হবে এটির চেয়েও ভয়াবহ। কে একজন চিৎকার করে করে সংবাদ ছড়িয়ে দেবে যে, দাজ্জাল এসে পড়েছে এবং তোমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে তোমাদের পরিবার পরিজনকে ফেতনায় নিপাতিত করার চেষ্টা করছে। শুনে মুসলমানরা হাতের জিনিসপত্র সব দিয়ে ছুটে যাবে। দাজ্জাল আগমনের সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তারা আগে দশজন অশ্বারোহী প্রেরণ করবে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি এই দশজন ব্যক্তির নাম, তাদের পিতার নাম, তাদের ঘোড়াগুলোর কোনটির কি রং সব জানি। সে যুগে ভূপৃষ্ঠে যত অশ্বারোহী সৈনিক থাকবে, তারা হবে শ্রেষ্ঠ সৈনিক”।
(সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২২৩; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫২৩; মুসনাদে আবী ইয়া’লা, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ২৫৯)
এই হাদিসে বলা হয়েছে, যুদ্ধ শুধু দিনে লড়া হবে। রাতে কোন যুদ্ধ হবে না। তার অর্থ কি এই যে, এই সব যুদ্ধ পুরানো রীতিতে শুধু তীর আর তরবারি দ্বারা লড়া হবে? রাতে যুদ্ধ না হওয়ার কারণ এছাড়া আর কি হতে পারে?
মানুষ মনে করে, হযরত মাহদির আমলে আধুনিক প্রযুক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং যুদ্ধ তীর আর তরবারি দ্বারা লড়া হবে। সম্ভবত এই ধারণার উদ্ভব ঘটেছে, হাদিসে ব্যবহৃত ‘সাইফুন’ শব্দ থেকে। ‘সাইফুন’ শব্দের অর্থ তরবারি। কিন্তু শুধু একে দলিল বানিয়ে নিশ্চিতভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না যে, হযরত মাহদির যুগে তরবারি দ্বারা যুদ্ধ হবে। কেননা, ‘সাইফুন’ শব্দটি শুধু ‘অস্ত্র’ অর্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন, পবিত্র কুরআনে ‘ত্বইরন’ শব্দের অর্থ ‘পাখি’। আবার বর্তমান যুগে আরবিতে ‘ত্বইরন’ শব্দটি ‘উড়োজাহাজ’ এর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া সেই যুগে যুদ্ধ তীর তরবারি দ্বারা সংঘটিত না হয়ে আধুনিক মারনাস্ত্র দ্বারা হওয়ার পক্ষে অনেক আভাস-ইঙ্গিতও হাদিসে রয়েছে। যেমন-
১। কয়েকটি হাদিসে বলা হয়েছে, হযরত মাহদির যুগের যুদ্ধগুলোতে, যেমন ফোরাতের তীরের যুদ্ধের বর্ণনায় এবং উপরের যুদ্ধের বর্ণনায় বলা হয়েছে, প্রানহানির সংখ্যা এমন হবে যে প্রতি ১০০ জনে ৯৯ জন ব্যক্তি মারা যাবে। যা শুধুমাত্র আধুনিক আনবিক অস্ত্র বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারেই সম্ভব।
২। যে হাদিসে দাজ্জালের বাহনের কথা বলা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, দাজ্জালের গাধা হবে খুব দ্রুতগামী, কান হবে অনেক লম্বা। এই বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়, হাদিসে গাধা দ্বারা কোন প্রাণীকে বোঝানো হয়নি; বরং এর দ্বারা বাহনকে বোঝানো হয়েছে, যা তীব্র গতিসম্পন্ন এবং বাহনের দুই পাশে উড়োজাহাজের ডানার ন্যায় লম্বা কিছু হতে পারে। এবং আমরা জানি, বাহনের গতি দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়েছে প্রযুক্তির উপর ভর করেই।
৩। হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বর্ণিত বিস্তারিত হাদিসে আছে, আ’মাক যুদ্ধে আল্লাহ কাফেরদের উপর উপর ফোরাতের কূল থেকে খোরাসানি ধনুকের সাহায্যে তীর বর্ষণ করবে। অথচ আ’মাক (সিরিয়ায় আলেপ্পোতে তুরস্কের সীমানার কাছাকাছি গ্রাম) থেকে ফোরাতের নিকটতম তীরের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। সাধারণ কোন তীর ধনুকের দ্বারা ৭৫ কিলোমিটার পার হওয়া সম্ভব নয়। এখানে ধনুকের উদ্দেশ্য তোপ বা ইংরেজিতে “ল্যান্ড টু ল্যান্ড মিজাইল” হতে পারে।
৪। আরেক জায়গায় হাদিসে, যুদ্ধকালীন সময়ে জাজিরাতুল আরবের অন্যতম স্থান ইয়েমেনের ধবংসের কারণ বলেছেন, ফড়িং এর আক্রমণ। আমরা জানি ফড়িং অত্যন্ত দ্রুত উড়তে সক্ষম। হয়তো এর দ্বারা তিনি যুদ্ধবিমানকে বোঝাতে চেয়েছেন।
এছাড়াও আরও অনেক ইঙ্গিত রয়েছে, যেগুলো দ্বারা প্রতিয়মান হচ্ছে, অন্তত দাজ্জালের ধ্বংসযজ্ঞ বিস্তৃত না হওয়া পর্যন্ত আধুনিক যুদ্ধকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করা যায় না। বাকি আল্লাহ ভালো জানে।
সার কথা হল, যুদ্ধ তরবারি দ্বারাই হবে এই মর্মে নিজের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থির করা এবং এই মর্মে হাদিস বর্ণনা করা ঠিক নয়। কারণ, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে তীর তরবারি দ্বারাই যুদ্ধ হতো। এমতাবস্থায় তিনি যদি এমন কোন সরঞ্জামের কথা উল্লেখ করতেন, যা সে সময় বোঝা সম্ভব ছিল না, তাহলে মানুষের মস্তিস্ক প্রকৃত উদ্দেশ্য হতে সরে যেত এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেটি বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষ সেটি যথাযথভাবে বুঝতে ব্যর্থ হতো।
আবার এমনও হতে পারে, মুজাহিদরা একের পর এক আরবের তেলকুপগুলো ধ্বংস করে প্রযুক্তির ব্যবহারকে কঠিন করে তুলবে। যেখানে উভয়পক্ষ বাহন হিসাবে ঘোড়া ব্যবহারে বাধ্য হবে। বর্তমান পশ্চিমা মিডিয়া ইউটিউবের মাধ্যমে মুজাহিদদের ক্যাম্পের ট্রেনিং এর যে সব ভিডিও প্রকাশ করেছে, অনেক জায়গাতে ঘোড়ায় চড়ার ট্রেনিং দিতে দেখা গেছে।
মূল কথা, নিশ্চিতভাবে কিছু বলা ঠিক হবে না।
------------------------------
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ২১] দাজ্জালের ধোঁকা ও প্রতারণা
যেমনটি আগে বলা হয়েছে, দাজ্জালের প্রতারণা হবে বহুমুখী। মিথ্যাচার, প্রতারণা, গুজব ও প্রোপাগান্ডা এত বেশি হবে যে, বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও তার ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হয়ে পড়বে যে, লোকটি মাসিহ, নাকি দাজ্জাল?
সাধারণত মানুষের ধারণা হল, দাজ্জাল শুধু কুতসিত একটি চেহারা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। বিষয়টি যদি এত সহজ হতো, তা হলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনই কারণ ছিল না। সত্য হল, কুৎসিত মুখাবয়ব সত্ত্বেও তার কর্মকান্ড বিশ্বের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করা হবে যে, মানুষ ভাবতে বাধ্য হয়ে পড়বে, যদি এই লোকটি দাজ্জাল হতো, তাহলে এমন ভালো কাজ কখনও করত না। জগতে আবির্ভূত হয়ে সে এত বেশি ফেতনার জন্ম দিবে, যার সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন। তবে বিভিন্ন হাদিসের আলোকে এখানে একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র উপস্থাপন করছি যে, দাজ্জালের কর্মপদ্ধতি কোন ধরনের হতে পারে।
১। দাজ্জালের আবির্ভাবের আগের বছরগুলোতে পৃথিবীতে বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও গণহত্যা চলতে থাকবে। বেকারত্ব, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্য ও সামাজিক অবিচারের রাজত্ব চলবে। পরিবারে শান্তি ও নিরাপত্তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। সর্বত্র পাপ ও মন্দের জয়জয়কার হবে। কোথাও কোথাও কিছু সৎকর্ম ও সচ্চরিত্র চোখে পড়বে। মানুষ এমন লোকেরও প্রশংসা করবে, যে ৯৯ ভাগ পাপ ও অন্যায়ে লিপ্ত; মাত্র ১ ভাগ সৎকাজ করছে। নেতাদের থেকে নিরাশ হয়ে মানুষ এমন কোন মুক্তিদাতার সন্ধানে থাকবে, যাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরণ করা হবে।
২। এবার দাজ্জালের চেলা মিডিয়া বা অন্য কোন উপায়ে এক নেতাকে মানবতার মুক্তিদাতা বানিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করবে এবং প্রমাণ করবে যে, ইনি বেকারদের কর্মসংস্থান দিয়েছেন, দুর্ভিক্ষকবলিত অঞ্চলগুলোতে পানাহারের উপকরণ পৌঁছে দিয়েছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বিদ্বেষ ও শত্রুতা দূর করে তাদেরকে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের পথে তুলে দিয়েছেন, পৃথিবী থেকে অপরাধপ্রবণ লোকদের নির্মূল করেছেন, ঘরে ঘরে ন্যায় বিচার পৌঁছে দিয়েছেন, যার ফলে এখন পৃথিবীর সকল জাতিকে এক চোখে দেখা হচ্ছে। এভাবে সে নিজেকে খোদা দাবি করার আগে বিশ্ববাসীর সমর্থন ও সহমর্মিতা অর্জন করে নেবে। বলা বাহুল্য, এই যুগে যদি কোন ব্যক্তি এতগুলো মহৎ কর্ম আঞ্জাম দিতে সক্ষম হয়, তা হলে পাশ্চাত্য মিডিয়ায় আস্থাশীল বিশ্ব তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে বাধ্য হবে। এভাবে মানুষের সমর্থন ও সহমর্মিতা তার সঙ্গী হয়ে যাবে।
৩। তারপর দাজ্জাল সর্বপ্রথম মানুষের মন মস্তিষ্কে এই বুঝ ঢুকিয়ে দিবে যে, সে নিজেই রব এবং সে নিজেকে ‘রব’ দাবি করে বসবে।
----
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ২২] দাজ্জালকে জয়ী করার লক্ষ্যে মাহদি বিরোধী সম্ভাব্য ইবলিসি চক্রান্তসমূহ
এটি ইবলিসের পুরনো রীতি যে, সে সত্যকে সংশয়যুক্ত বানানোর লক্ষ্যে নিজের তৈরি এজেন্টদেরকে সত্যের দাবিসহ মাঠে নামিয়ে দেয় এবং সত্যকে মিথ্যা বানানোর চেষ্টা চালায়। ইবলিসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এই হবে যে, হযরত মাহদির আগমনের পূর্বে সে একাধিক নকল মাহদি দাড় করিয়ে দিবে, যাতে কিছু লোক তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সত্য থেকে দূরে সরে যায় এবং যখন আসল মাহদির আগমন ঘটবে, তখন মানুষ আপনা থেকেই সংশয়ের শিকার হয়ে পড়বে যে, কে বলবে, ইনি আসল মাহদি, না ভুয়া মাহদি। ‘বিভ্রান্তকারী নেতৃবৃন্দ বিষয়ক’ হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এক্ষেত্রে ইবলিসের প্রচেস্টাসমূহ অনেকটা এরকম হতে পারেঃ
১। মিথ্যা মাহদির দাবিদারদেরকে দাড় করাবে। তাদের মাঝে হযরত মাহদির গুণাবলী আছে বলে প্রচার করে মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়া হবে। এই ভুয়া মাহদির দাবিদার একাধিক হবে। আর একথা বলার অবকাশ থাকে না যে, এই মাহদিদেরকে অপার বিদ্যা, সুদর্শন আকার গঠন ও একদল ভক্ত মুরীদসহ জনসন্মুখে উপস্থিত করা হবে এবং বড় বড় জুব্বা-কাবাওয়ালা মানুষ এই মিথ্যা মাহদিদেরকে আসল মাহদি বলে প্রমাণিত করতে সচেষ্ট হবে। ‘কাদিয়ানী’ সম্প্রদায়ের সৃষ্টিকারী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে প্রথম ইমাম মাহদি, পরে মাসিহ এবং সবশেষে নবীই দাবি করে বসে। আর বর্তমানে এই কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতি পশ্চিমাদের এবং উপমহাদেশে তাদের দালাল মিডিয়ার সমর্থন সম্পর্কে প্রায় সব সচেতন মুসলিমই ওয়াকিবহাল। ১৯৭৯ সালেও এক ব্যক্তি নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করে মক্কা শরীফের মধ্যে এক ফিতনার সৃষ্টি করেছিল।
২। ইবলিসি শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হতে পারে যে, তারা আসল মাহদির অপেক্ষায় থাকবে এবং তার এজেন্ট ও প্রপোগান্ডার মাধ্যমে তাকে মিথ্যা প্রমাণিত করার চেষ্টা করবে। এর জন্য তারা প্রতিটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের সেবা গ্রহণের চেষ্টা চালাবে, যেমনটি এযুগেও আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বিষয়টি সহজে বুঝবার জন্য একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি।
যে কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির কিছু সমর্থক সহযোগী থাকে, আবার কিছু বিরুদ্ধবাদীও থাকে। আপনি যে কোন মতাদর্শের নেতাকে দেখুন, দেখবেন, কিছু লোক তার জন্য নিবেদিত প্রাণ আবার কিছু মানুষ তার ঘোর সমালোচক। এমনকি তাদের কাফেরদের এজেন্ট আখ্যায়িত করার লোকেরও অভাব হবে না। প্রত্যেক মতাদর্শের লোকেরা আপন আপন নেতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে থাকে। কেউ যদি তার নেতাকে জিজ্ঞেস করে, অমুক ব্যক্তির আজকাল খুব নামডাক শোনা যাচ্ছে। শুনেছি, তিনি অনেক বড় একজন আল্লাহর ওলী। অনেক ত্যাগী আলেম। তো হযরত তার ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তার ব্যাপারে এই হযরত যে অভিমত ব্যক্ত করবেন, তার পুরো অঙ্গনে সেই অভিমতই অনুসৃত হবে। হযরত যদি বলে দেন, সরকারের লোক; তার থেকে দূরে থাকো, তাহলে দেখবেন, লোকটি যুগের আবদালই হোক না কেন, ফেরেশতারা তার চলার পথে পালক বিছিয়ে দিক না কেন, হজরতের ফতোয়ার পর তার গোটা ভক্তমহল তাকে “সরকারের দালাল” বলে আখ্যায়িত করবে।
এটি এমন এক ব্যাধি, যাতে সমাজের সেই শ্রেণীটি বেশি আক্রান্ত, যার প্রতিজনের হাতে সত্যের পতাকা রয়েছে। বিস্ময়কর বিষয় হল, প্রতিজন সদস্যের পতাকা একজনেরটি অপরজনের থেকে ভিন্ন। তাছাড়া একই মতাদর্শের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যেকের দাবি, আমার পতাকাই সত্যের পতাকা।
আহ, তারা যদি নিজ নিজ আমিত্তের পতাকাগুলোকে অবনমিত করে ফেলত, টা হলে আল্লাহর কসম, সত্যের পতাকা তাদেরই হাতে বিশ্বময় পতপত করে উড়ত। হায়, যদি তারা আপন মন মস্তিস্ক ও চিন্তা চেতনার সীমাবদ্ধ সীমান্তগুলোকে অসীম করে ফেলত, তাহলে আজ জল ও স্থল, মরু ও মহাশূন্য সব তাদের ধ্বনিতে মুখরিত থাকতো। যদি তারা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে দালালির ফতোয়া আরোপের পরিবর্তে ইসলামের শত্রুদের প্রতি মনোনিবেশ করতো, তাহলে শুধু তাদেরই সারি থেকে কেন, সকল ক্ষেত্র থেকে শত্রুর এজেন্টরা নির্মূল হতো। দাজ্জালের এসব ভয়াবহ ধোঁকা ও প্রতারণার কথা ভেবে মুমিন জননী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর মতো মহান ব্যক্তিগণও কেঁদে উঠতেন। মহানবীর সাহাবাগণও ক্রন্দন করতেন।
এ ছিল তাদের পরকালের ভয়। অন্যথায় তাদের মতো ব্যক্তিত্বদের সমস্যার কিছু ছিল না। যে লোকটি আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াতপ্রাপ্ত, নূরে এলাহি দ্বারা যাকে পথ দেখানো হয়ে থাকে, তার আবার ভাবনা কিসের। চিন্তা তো থাকা দরকার গুনাহগারদের। কিন্তু আফসোস! আমরা কখনও ভেবে দেখার কষ্টটুকু পর্যন্ত স্বীকার করি না। আর এমনভাবে নিশ্চিন্তমনে জীবন অতিবাহিত করছি, যেন কোন ফিতনাই নাই।
----
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ২৩] দাজ্জাল ও কৃষক সমাজ
যারা দাজ্জালের প্রভুত্ব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে, দাজ্জাল তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যাবে। এ যুগে কৃষক সমাজ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারবে। বিষয়টিতে বিস্তারিত আলোচনায় প্রবেশ করার আগে একটি শব্দের মর্ম বুঝে নিন।
শব্দটি হল ‘পেটেন্ট’, যার অর্থ ‘আবিষ্কৃত দ্রব্য তৈরি বা বিক্রয়ের একক অধিকার’। এটি একটি আইন, যা মালিকের মালিকানা স্বত্তকে প্রমাণিত করে। এটি নতুন এক আন্তর্জাতিক কৃষিনীতি, যাকে কৃষক সমাজের উন্নতি ও স্বচ্ছলতার ক্ষেত্রে বিপ্লব নাম দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই নীতি কৃষকের হাত থেকে উৎপাদিত শস্যের এক একটি দানা কেড়ে নেওয়ার গভীর এক চক্রান্ত।
ইহুদী কোম্পানিগুলো যদি কোন শস্যবীজকে পেটেন্ট করে নেয়, তা হলে তার এই অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সে এটির মালিক হয়ে গেছে। যেমন – তারা যদি একটা নাম দিয়ে কোন মুসলিম রাষ্ট্রের কোন বিশেষ প্রজাতির চালকে পেটেন্ট করে নেয়, তাহলে সেই মুসলিম দেশের প্রতিজন কৃষক সেই বিশেষ প্রজাতির চালের বীজ উক্ত কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে বাধ্য হবে। এমতাবস্থায় যদি তারা নিজেরা বীজ উৎপাদন করে, তা হলে এই অপরাধের দায়ে তাদেরকে জরিমানা আদায় করতে ও জেলের বাতাস খেতে হবে। যেহেতু এই ধরনের বীজ কৃত্রিম উপায়ে জেনেটিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়, তাই এই ধরনের বীজ একবছরই ফসল উৎপন্ন করতে সক্ষম। পরবর্তী বছর যদি পুনরায় এই চালের চাষ করতে হয়, তাহলে নতুন বীজ ক্রয় করতে হবে। সেই সঙ্গে ফসলের রোগ বালাই দমনে ওই কোম্পানির ওষুধই কাজ করবে।
এই আইনটি দেখতে খুবই সরল মনে হয়। কিন্তু বিষয়টি ‘যার লাঠি তার মহিষ’ ধরনের। এই আইনের উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক ইহুদী কোম্পানিগুলো বিশ্ব বাজারের উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার পর এবার পৃথিবীর উৎপাদিত শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই আইন তৈরি করেছে, যাতে কাল যদি কেউ তাদের কথা মান্য করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তাকে খাদ্যের প্রতিটি কণার জন্য মুখাপেক্ষী বানিয়ে দেওয়া যায়।
পেটেন্ট বিলের মাধ্যমে এভাবে তারা ধীরে ধীরে উৎপাদিত শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠিত করে চলছে। অল্পদিনের মধ্যেই তারা সমগ্র পৃথিবীর শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে হলে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ‘ফার্মারস কোর্ট’ এ পেটেন্ট নিয়ে কৃষকদের সাথে পেটেন্টকারী কোম্পানির কত কেস চলছে।
খাদ্য উৎপাদনকে নিজের মুঠোয় নেওয়া ছাড়াও ইহুদীদের আরও একটি ধ্বংসাত্মক মিশন হল, তারা জীবাণু অস্ত্রের মাধ্যমে যে কোন ফসল ধ্বংস করে দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করছে। হয়তো ইতিমধ্যে কিছু জীবাণু অস্ত্র তৈরিও করে ফেলেছে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু বর্ণনা করেছেন, সে সব অবশ্যই পূর্ণ ও বাস্তবায়িত হবে। বাহ্যিক পরিস্থিতি এখনই তার অনুকুল হোক আর না হোক। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরিস্থিতি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকুল হতে চলেছে। কাজেই এখনও সে সব ভয়াবহতা ও দুর্যোগ সম্পর্কে উদাসিন থাকা বিবেক ও দ্বীনদারির পরিচয় নয়।
----
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ২৪] দাজ্জাল ও সম্পদ কুক্ষিগতকরণ
বর্তমানে পৃথিবীর সমস্ত খনিজ উপাদানের উপর প্রত্যক্ষভাবে হোক কিংবা পরোক্ষভাবে হোক ইহুদীদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত। আপনি হাদিসে পড়েছেন, দাজ্জালের কাছে সম্পদের অসংখ্য পাহাড় থাকবে। তারই প্রস্তুতি হিসাবে ইহুদীরা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদকে নিজেদের
নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচ্ছে। পৃথিবী থেকে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডকে বিলুপ্ত করে সোনাকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে তারা বিশ্ববাসীর হাতে রং বেরঙয়ের কাগজের টুকরা (কারেন্সি নোট, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি) ধরিয়ে দিয়েছে।
এগুলোকে ইহুদী দাসত্বের শিকলে ফেঁসে যাওয়া বিশ্ব নোট কিংবা সম্পদ মনে করে থাকে। তবে এই আত্মপ্রবঞ্চনা ও ঘোর শীঘ্রই কেটে যাবে। বরং এখন তো মানুষের হাত থেকে নোটও ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং হাতে প্লাস্টিকের কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অদূরদর্শী মানুষ প্লাস্টিকের কার্ডটি হাতে নিয়ে নিজেকে কোটিপতি, মিলিয়ন-বিলিয়নপতি ভাবছে। কম্পিউটারের কীবোর্ডের সামনে বসে হাতের আঙ্গুলের ইশারায় কোটি টাকার হিসাবকারী সেদিন কি করবে, যেদিন কিবোর্ড টিপতে টিপতে আঙ্গুল ক্লান্ত হয়ে যাবে, কিন্তু নিজের অনলাইন একাউন্টের হিসাব মিলবে না?
এমন পরিস্থিতির এমন একটা ঝলক গেল কিছুদিন আগে বিশ্ব অর্থমন্দার আলোকে বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। যেটি ছিল ইহুদী মস্তিস্কের সৃষ্ট ফসল এবং দাজ্জালি শক্তির আন্তর্জাতিক পরিকল্পনার একটি অংশ। কোন কোন দেশ শেয়ার বাজারের দরপতনের মতো ঘটনায়ও দেখেছেন কিভাবে চোখের সামনে ডিজিটাল স্ক্রিনে কেনা শেয়ারের বিপরীতের মোটমূল্য নামতে থাকে। তাই মুসলমান ব্যবসায়ীদের প্রতি পরামর্শ, আপনারা নিজেদের কাছে রঙ বেরঙ এর কাগজের টুকরো জমানোর পরিবর্তে সোনা রুপা জমান। অন্যথায়, অতিশীঘ্র সমুদয় সম্পদ থেকে হাত ধুয়ে নিঃস্ব হয়ে যেতে পারেন।
ইহুদীরা ইতিমধ্যেই বড় বড় কোম্পানিগুলোকে নিজেদের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। এখন তারা এর পরের ধাপে চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন শপিং মলের লিমিটেড কম্পানি খুলে বড় বড় শহরগুলোতে দৈনন্দিন বাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এই দুটি প্রতিষ্ঠান সমগ্র পৃথিবীকে বর্তমানে নিজেদের দাস বানিয়ে রেখেছে এবং বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন ও গঠনের পরিকল্পনা এখানেই প্রস্তুত হয়। আপনি যদি এই দুই প্রতিষ্ঠানের ঋণ চালু করা এবং পরিশোধ করার পদ্ধতিগুলো গভীরভাবে জানেন, তাহলে দাজ্জালের
আবির্ভাবের আগে কিভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিকে অর্থনৈতিক দাস বানাতে হয়, বুঝতে পারবেন।
অপরাপর সম্পদের পাশাপাশি ইহুদীদের দাজ্জালি শক্তি মানবসম্পদের
কুক্ষিগতকরণেও পিছিয়ে নাই। তাই তারা তাদের শত্রু মুসলমানদের হয় পঙ্গু বানিয়ে ফেলছে, না হয় নিজেদের নিয়ন্ত্রিত দেশে ডেকে নিয়ে তাদেরকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে। আলেম বলুন আর মুসলমান প্রযুক্তিবিদ বা চিন্তাবিদ বলুন, এমন প্রতিজন মুসলমানের উপর তারা চোখ রাখছে। এদের মধ্যে বহুসংখ্যক মুসলমানদের মাথা ক্রয় করে নিয়েছে। তৈরি করছে দরবারী আলেম আর মুসলিম নাম সদৃশ ইসলাম বিরোধী চিন্তাবিদ। যাদেরকে ক্রয় করতে পারেনি তাদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ লেবেল দিয়ে হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এমনকি এক্ষেত্রে তারা নিজ দেশের নাগরিকের ক্ষেত্রেও পিছ পা হয়নি। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশেও সত্যাশ্রয়ী আলেমগণের গণহত্যা এই ধারারই একটি অংশ বিশেষ। যার কারণে রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করে গেছেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আলেমদের জীবনে এমন একটি সময় আসবে, যখন তাদেরকে এমনভাবে হত্যা করা হবে, যেভাবে চোরদেরকে হত্যা করা হয়। আহ, সেদিন আলেমরা নির্বোধের ভান ধরত যদি”।
(আস সুনানুল অয়ারিদাতু ফিলফিতান খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৬১; আত তাকরীব খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৩১; আল মীযান খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ৩৩৪)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, “আমি সেই সত্ত্বার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, নিঃসন্দেহে আলেমদের জীবনে এমন একটি সময় আসবে, যখন তাদের কাছে লাল সোনার চেয়েও মৃত্যু বেশি প্রিয় হবে। তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের কবরের কাছে গেলে বলবে, হায়, এর জায়গায় যদি আমি হতাম”।
(মুসতাদরাকে হাকেম, পৃষ্ঠা ৮৫৮১)
যদিও উম্মতের এই বিজ্ঞ আলেমদের হত্যাকাণ্ডকে নানা মহল আপন আপন দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যায়ন করছে। অথচ এই হত্যাকাণ্ডকে হাদিসে রাসুলের আলোকে মূল্যায়িত করা আবশ্যক ছিল। বর্তমানে সত্যের মোকাবিলায় মিথ্যা চূড়ান্ত যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে। ইবলিসিয়াত সর্বত্র প্রকাশ্যে নগ্ন নাচ নাচতে চাইছে। মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের বোধ বিশ্বাস ও চেতনাকে হৃদয় থেকে মুছে দিয়ে মানুষদের থেকে দাজ্জালিয়াত ও ইহুদিয়াতের “ওয়ার্ল্ড অর্ডার” এর সম্মতি আদায়ের প্রচেস্টা ও পাঁয়তারা চলছে।
এমতাবস্থায় যারা ইবলিশের ইঙ্গিত ও পরামর্শে কাজ করছে, তারা সত্যের এই সুউচ্চ মিনার ও আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীকগুলোকে সহ্য না করারই কথা, যাদের আঙ্গুলের একটি ইশারায়, কলমের একটি খোঁচায় দাজ্জালের শক্ত প্রাচীরে ফাটল ধরিয়ে দিতে সক্ষম। মিথ্যার আতঙ্ক এই আলেমগন এ যুগেও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সেই মর্মই বর্ণনা করতে বদ্ধপরিকর, যার ঘোষণা উচ্চারিত হয়েছিল আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে সাফা পাহাড়ে।
কাজেই দাজ্জালের ‘এডভান্স ফোর্স’ এদের কি করে সহ্য করতে পারে!
----
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ২৫] দাজ্জাল ও খাদ্য উপকরণ
দাজ্জাল আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এমন একটি পরীক্ষা হবে, যার মাধ্যমে ঈমানদারদেরকে যাচাই করা হবে, তারা আল্লাহর ওয়াদার উপর কতটুকু বিশ্বাস রাখে। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তাদের জন্য আল্লাহ অনেক মর্যাদা ও প্রতিদান বরাদ্দ রেখেছেন। এ কারণেই দাজ্জালকে সব ধরনের উপকরণ প্রদান করা হবে। দাজ্জাল সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, তার কাছে বিপুল পরিমাণ
খাদ্য উপকরণ থাকবে। সে যাকে ইচ্ছা খাদ্য দিবে, যাকে ইচ্ছা না খাইয়ে মারবে।
বর্তমানে পৃথিবীতে বাৎসরিক আয়ের দিক দিয়ে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী সবচেয়ে বড় কোম্পানিটির নাম ‘নেসলে’। এই প্রতিষ্ঠানটি ইহুদী মালিকানা এবং এদের মিশন সমগ্র পৃথিবীর খাদ্য উপকরণকে নিজেদের মুঠোয় নেওয়া। এই কোম্পানিটি বর্তমানে খাদ্য উপকরণ, পানীয়, চকলেট, সবধরনের মিষ্টান্ন দ্রব্য, কফি, গুড়োদুধ, শিশুদের দুধ, পানি, আইসক্রিম, সবধরনের আচার ও স্যুপসহ ২৯ টি ব্র্যান্ডের খাবার। ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক প্রসারতা লাভ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এরপরে প্রসারতার ধারাবাহিকতায় এটি আরও পাঁচটি বিশ্বখ্যাত বড় বড় খাবার কোম্পানিকে কিনে নেয়। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী এই কোম্পানির ৮৬ টি দেশে ৪৫০ টি কারখানায় ৩,২৮,০০০ শ্রমিকসহ মোট কর্মী সংখ্যা ৩,৩৯,০০০ জন। আর এই বস্তুবাদী ও ভোগবাদী জগত খাদ্য পানীয়র বেলায় নেসলের উপর নির্ভরশীল। আর মুখরোচক রকমারি খাবার মানুষকে অলস বানিয়ে দেয়, শরীরকে স্থূলাকার করে ফেলে আর নানা রোগেরজন্ম দেয়। অথচ পরিমিত সাধাসিধে খাবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবীদের সুন্নত। যা আজকাল একমাত্র তাকওয়াপূর্ণ পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রেই যা মেনে চলা সম্ভব।
নু’আইম ইবনে হাম্মাদ সংকলিত ‘আলফিতান’ –এ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে, ‘দাজ্জালের সঙ্গে ঝোল ও এমন গোশতের পাহাড় থাকবে, যা কখনো ঠাণ্ডা হবে না’।
বর্তমান যুগে পৃথিবীতে নানা স্তর অতিক্রম করে খাদ্য ও পানীয় নিরাপদ রাখার জন্য স্বতন্ত্র কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে আছে। এই সকল প্রতিষ্ঠান ‘ফুড প্রসেসিং ও প্রিসার্ভেশন’ নামে ১৮০৯ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ১৮০৯ সালে নিকোলাস অ্যাপার্ট সর্বপ্রথম খাদ্যের প্রিসার্ভেশন পদ্ধতি আবিস্কার করে। এই সকল প্রতিষ্ঠানের কাজই হল খাদ্য ও পানীয় বস্তুকে আধুনিক থেকে আধুনিকতর পদ্ধতিতে সংরক্ষিত করা বিষয়ে গবেষণা করা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো এ যাবত বহু সংখ্যক পদ্ধতি আবিস্কার করে ফেলেছে। সেই পদ্ধতিগুলোর কিছু পদ্ধতি এমন, যেগুলোতে খাদ্যকে এক বিশেষ মাত্রার তাপে গরম রেখে সংরক্ষণ করা হয়। স্যুপ, আচার, সবজি, গোশত, মাছ ও ডেইরি সংক্রান্ত বস্তুসমূহ এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এই যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গোশতগুলো গরম হবে এবং ঠাণ্ডা হবে না’ কথাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ।
প্রাকৃতিক খাদ্যদ্রব্য আল্লাহপাক মানুষের
প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিটি ভূখণ্ডে সেখানকার মানুষের মেজাজ,মৌসুম ও ভৌগলিক অবস্থান হিসাবে নানা প্রকার ফলমূল ও শাকসবজি উৎপন্ন করেন। এসকল
বস্তুসামগ্রী সেই দেশের নাগরিকদের মালিকানায় ছিল। নিজেদের ক্ষুধা নিবারণে তারা কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার কথা ছিল না। নিজেদের উৎপাদিত ফসল নিজেরাই ভোগ করত। কিন্তু আল্লাহর শত্রু ইহুদী গোষ্ঠীর বিষয়টি সহ্য হল না। তারা এই সব উৎপাদনকে নিজেদের হাতে নিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা প্রস্তুত করল। ঠিক এমন, যেন এই গোষ্ঠীটি আল্লাহর অবতারিত মান্না ও সালওয়ায় সন্তুষ্ট না হয়ে অর্থব্যবস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আল্লাহর নিকট সবজি ও ডালের আবেদন জানিয়েছিল, যাতে সম্পদ কুক্ষিগত করে নিজেদের দুষ্ট স্বভাবের প্রকাশ ঘটাতে পারে।
আর এর জন্য তারা ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এর মতো বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন সময় এমন আদেশ জারি করিয়ে নিল, যার আওতায় প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রীকে বিভিন্ন রিপোর্টে বিভিন্ন অজুহাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সাব্যস্ত করা হয়েছে। যার ফলে বিশ্ব ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রী থেকে দূরে চলে গেছে ও বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রস্তুতকৃত খাদ্য সামগ্রীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে আটা, ময়দা,
সুজি, তেল, ঘি, দুধ, জিরা, মরিচ, হলুদ, বিভিন্ন মসলা থেকে শুরু করে রেডি হালিম, রেডি চিকেন কারী, মাটন কারী, রেডি বিরিয়ানি, রেডি খিচুরি, রেডি ক্ষীর মিক্সসহ প্রায় সব
ধরনের খাদ্য উপকরণ আজ বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অধীনে বাজারজাতকৃত। অথচ আজ থেকে ১০০ বছর পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, এই সকল প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রী খেয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষরা দীর্ঘায়ু লাভ করেছেন।
তারা তথ্য প্রকাশ করল, মাটির পাত্রে খাবার খাওয়া ক্ষতিকারক। আর যায় কোথায়! অমনি মানুষ সমাজ থেকে মাটির থালা বাসন পাত্রের ব্যবহার তুলে দিল। কিন্তু মজার বিষয় হল, সেই বাসন ফাইভস্টার হোটেলে পৌঁছে গেল আর বলা হল, এগুলোতে খাওয়ার মজাই আলাদা। তাই বর্তমানে মুসলমান ডাক্তারদের কর্তব্য হল, আপনারা জাতিকে সে সকল অপকারিতা সম্পর্কে অবহিত করেন, আন্তর্জাতিক কুফরি শক্তির ষড়যন্ত্রের ফলে জাতি আজ যার শিকার। যদিও বর্তমানে সময়টি এমন যে, সত্য বললে আগুন আর মিথ্যার সামনে ডলারের বৃষ্টি বর্ষিত হয়, তবুও কারও যদি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকে যে, দাজ্জালের সময়টিতে যেটি আগুন হিসাবে পরিদৃশ্য হবে, সেটিই মূলত শীতল পানি হবে, তা হলে মুসলমান ডাক্তারদের সেই পথটিই অবলম্বন
করা দরকার, যেটি তাদের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হবে। আমাদেরকে সব সময়ের জন্য স্মরণ রাখতে হবে, সত্য বলার অপরাধে যে আগুন বর্ষিত হয়, এগুলোই আসলে ফুলবাগান। আর মিথ্যার সামনে মাথানত করার ফলে যে ডলারের বৃষ্টি বর্ষিত হয়, এগুলোই মূলত আগুন।
বস্তুত আমরা খাদ্য উপকরণের ক্ষেত্রে যতই
প্রকৃতি থেকে দূরে সরে কোম্পানি নির্ভর হয়ে পড়ছি, ততই আমরা দাজ্জালকে আল্লাহর প্রদত্ত বিশ্বের উপর ব্যাপক ক্ষমতার কাছে সহজ করে দিচ্ছি। কারণ, দাজ্জাল তার বিশ্বব্যপী ব্যাপক ক্ষমতার গুনে এ সব কোম্পানির উপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে আর নিজেকে রিজিকদাতা হিসাবে দাবি করবে।
----
[চূড়ান্ত পরীক্ষাঃ ২৬] দাজ্জাল ও মিডিয়াযুদ্ধ
খলীফা আব্দুল হামিদ দ্বিতীয় (১৮৪২-১৯১৮, ইসলামী খেলাফতের ৯৯ তম খলীফা এবং তুরস্কের উসমানিয়্যা সাম্রাজ্যের ৩৪ তম সুলতান) পশ্চিমা মিডিয়াগুলো সম্পর্কে একটা মন্তব্য করেছিলেন। তা হল, ‘এগুলো শয়তানের সন্তান’। কিন্তু তিনি যদি এ যুগের মানুষ হতেন, তাহলে একে ‘দাজ্জালের চোখ ও কণ্ঠ’ নাম দিতেন।
দাজ্জাল আরবি ‘দাজলুন’ থেকে ব্যুৎপন্ন। ‘দাজলুন’ অর্থ আচ্ছাদিত করা। দাজ্জাল অর্থ অনেক আচ্ছাদনকারী। দাজ্জালকে এজন্য দাজ্জাল বলা হয় যে, সে নিজের মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে সত্যকে ঢেকে ফেলবে। প্রতারণার মাধ্যমে সে বড় বড় লোকদেরকে বিভ্রান্ত করে ফেলবে। তার ধোঁকা ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে মানুষ দেখতে না দেখতে ঈমান থেকে হাত ধুয়ে বসবে।
পুরো ইলেকট্রনিক মিডিয়া (স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেট) ও প্রিন্ট মিডিয়া জগতকে কয়েকভাগে ভাগ করা যায়।
১) সংবাদ মাধ্যম (নিউজচ্যানেল, ছাপানো নিউজ পেপার, অনলাইন নিউজ পেপার)
২) বিনোদন মাধ্যম (কমার্শিয়াল চ্যানেল, চলচ্চিত্র ও নাট্য শিল্প সংস্থা)
৩) যোগাযোগ মাধ্যম (সহজলভ্য ইন্টারনেট ও সুলভ মূল্যে মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন ও নিম্নকলরেট)
৪) প্রচার মাধ্যম (বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল, নিউজ পেপার ও বিলবোর্ডের অ্যাড)
সংবাদ মাধ্যমঃ পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমগুলোর কর্মধারাও অনেকটা এরকম। তারা যে বাস্তবতাকে পৃথিবীর দৃষ্টি থেকে লুকানো প্রয়োজন বোধ করছে, তার গাঁয়ে তারা সংশয় ও সন্দেহের এমন চাদর জড়িয়ে দেয় যে, মানুষ তার তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয় না।
পক্ষান্তরে যে বিষয়টিকে তারা প্রমাণিত করার ইচ্ছা করে, মিথ্যার হাজারো সুদর্শন গেলাফ চড়িয়ে তাকে সপ্রমাণিত করে ছাড়ে। যেমন- তারা যদি আজ সংবাদ প্রচার করে, সমগ্র অস্ট্রেলিয়া সমুদ্রে ডুবে গেছে, তা হলে এই ‘পশ্চিমা মিডিয়ায় আস্থাশীল বিশ্ব’ এর জন্য সংবাদটি বিশ্বাস না করে উপায় থাকবে না। আর বর্তমানে এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলো সারা বিশ্বে নিজেদের অবস্থান এমনভাবে গত এক শতকে পাকা করে নিয়েছে যে, বিশ্বের প্রতিটি ভূখণ্ডেই স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোও এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলোর সংবাদের উপর ভিত্তি করেই আন্তর্জাতিক সব সংবাদ প্রচার করে। ফলে যখন কোন ভূখণ্ডে একটি ঘটনা ঘটে, স্থানীয়ভাবে ওই ভূখণ্ডে ঐ ঘটনা সম্পর্কে যে সংবাদই প্রচার হোক না কেন, বিশ্ব সেটাই জানবে যা কিনা এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলো প্রচার করবে।
সুতরাং, দাজ্জাল যখন সশরীরে এসে নিজের খোদাই দাবি করবে, এই ইহুদি-খ্রিস্টানদের নিয়ন্ত্রণাধীন এই পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থাগুলো সারা বিশ্বে সগৌরবে তা প্রচার করবে এবং এক শ্রেণীর দুর্বল ঈমানের মুসলমান নামের দাবিদার প্রথম ধাক্কাতেই তা বিশ্বাস করে ঈমান হারিয়ে ফেলবে।
বিনোদন মাধ্যমঃ সকল প্রকার বিনোদন চাই তা সিনেমাই হোক বা নাটকের মতো স্বল্প দৈর্ঘ্য সিনেমাই হোক, এক কথায় এগুলোর গুরু হল হলিউড - সরাসরিই হোক বা ঘুরিয়ে পেচিয়েই হোক। হলিউডকে ইবলিসের মতবাদের দুর্গ আখ্যায়িত করাই অধিক সঙ্গত। দাজ্জালি ব্যবস্থাপনার পথকে সুগম করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। এমন একটি বস্তু, যার অস্তিত্ব
জগতে নাই, তাকে বাস্তবতার রূপ দিয়ে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করা এবং মডার্ন চরিত্রের মানুষদের মস্তিষ্কে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে এর কোন বিকল্প নেই। এই প্রতিষ্ঠানটি ইহুদীদের প্রস্তুতকৃত পরিকল্পনাসমূহের পক্ষে জনমত তৈরি করছে।
বিশেষ করে ইদানিং বিভিন্ন সিনেমায় দেখানোর চেষ্টা করছে, সারা বিশ্বে প্রচুর গণ্ডগোল, অশান্তি আর বেইনসাফী। আর এগুলোর উপশমে/পরিত্রাণে হাজির হচ্ছেন এক মহানায়ক। কখনও মানুষ রূপে বা ভিনগ্রহ থেকে এলিয়েন রূপে। আর কার্টুন সমূহে তো আছেই সুপারম্যান, ব্যাটম্যান আর বেন টেন নামে প্রবল শক্তির অধিকারী একজন যে কোন বিপদ হতে মুক্তিদাতা। আর এর পাশাপাশি ব্যভিচার আর অশ্লীলতাকে বিশ্বব্যপী শিল্পের রূপ দেওয়ার ব্যাপারে এই হলিউডেরই সহদোর মূর্তিপূজারীদের বলিউডের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিষয়টি এখন আর
খোলাসা করে বলার কিছু নেই। আক্ষেপের বিষয় হল, বিভিন্ন ভূখণ্ডের বুদ্ধিজীবী নামধারীরা এই সকল মিডিয়ার নর্তকী-গায়িকার আঙুলের ইশারায় পুতুলের মতো নাচছে। কিন্তু তারপরও প্রগতিবাদী ও মুক্তচিন্তার বাহক ভাবছে। অথচ বাস্তবতা হল, তাদের বিবেক বুদ্ধি সেই কবে হলিউড আর নিজ ভূখণ্ডে হলিউডের শাগরেদ কমার্শিয়াল চ্যানেল, চলচ্চিত্র ও নাট্য শিল্প সংস্থার কাছে নিলাম হয়ে গেছে।
যোগাযোগ মাধ্যমঃ এই খাতে সহজলভ্য ইন্টারনেট ও সুলভ মূল্যে মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন ও নিম্নকলরেট একটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে এবং রাখবে। ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ এর কনসেপ্টকে মাথায় রেখে বিশ্বের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যেখানে তাতক্ষনিকভাবে প্রতিটি সংবাদ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। যদিও প্রথমে মানুষের দৈনন্দিন কাজের সুবিধার্থে এই তারহীন ফোনব্যাবস্থার শুরু আর মার্কিন সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল কাজে ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেটের আবিস্কার। কিন্তু কালের বিবর্তনে আর প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সুযোগে বানিজ্যিকভাবে এই সকল প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে সহজলভ্যতা ও কলরেটকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে এখন তা প্রয়োজনীয়তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এখন এগুলো অবদান রাখতে শুরু করেছে যুবক যুবতীর অবৈধ সম্পর্কে টিকিয়ে রাখতে। মাল্টিমিডিয়া সেটে ফোনে কথা বলার সুবিধার পাশাপাশি ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এখন এখন আর প্রয়োজনীয় ইমেইল যোগাযোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন তা গান, মুভি আর ফেসবুক চ্যাটিং এর ভিন্ন বিশ্ব। খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই পারছেন শরীয়তের সীমার ভিতরে থেকে এই সব প্রযুক্তি ব্যাবহার করতে। দুর্বল ঈমানের যুবক যুবতীরা ঘরে বসে কোন নড়াচড়া ছাড়াই দাঁড়িয়ে, বসে কিংবা শুয়ে গড়ে তুলছে পাপের পাহাড়।
প্রচার মাধ্যমঃ এই মিডিয়া জগতকে প্রচার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার পণ্যের প্রচার করতে গিয়ে আবারও যেন মনের অজান্তেই শয়তানের দাসে পরিণত হয়েছে। বিলবোর্ডসহ নিউজ পেপার ও বিভিন্ন চ্যানেলে অ্যাড দিতে গিয়ে যেন নারীকে পণ্যের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। ব্যভিচার আর
অশ্লীলতাকে পুঁজি করে তৈরি করছে অ্যাড। স্বল্প সময়ের এই এক একটি অ্যাড এ ঈমান-আকিদা ও শরীয়তের বিধান তথা ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাংঘর্সিক অনেক কথাই থাকে যা মনের অজান্তে কোমল মতি শিশুদের মনে ঢুকে যায় এবং সেগুলোকেই সত্য ও সঠিক বলে ধরে নেয়। যার ফলে পরে তার জন্য ধর্মীয় শিক্ষাকে গ্রহণ করা বা মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, এমন কি কখনও কখনও চ্যালেঞ্জ করে ঈমানহারা হয়ে পড়ে।
----