দাজ্জাল সম্পর্কে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের দৃø 290
দাজ্জাল বিষয়ক হাদিসগুলো বর্ণনা করার আগে দাজ্জাল সম্পর্কে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের দৃষ্টিভঙ্গি ও তাদের ধর্মীয় (বর্তমানে বিকৃত) গ্রন্থগুলোতে বিকৃত ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে ধারণা দেওয়া আবশ্যক মনে করি। তাতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য কাফের গোষ্ঠী ইহুদীদের ইঙ্গিতে যা কিছু করছে, তার প্রেক্ষাপট ও প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝে আসবে।
দাজ্জাল সম্পর্কে ইহুদীদের দৃষ্টিভঙ্গি হল, সে ইহুদীদের সম্রাট হবে। সকল ইহুদীকে বাইতুল মুকাদ্দাসে আবাদ (প্রতিষ্ঠিত) করবে। সমগ্র বিশ্বের উপর ইহুদীদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে। পৃথিবীতে ইহুদীদের জন্য শঙ্কা অবশিষ্ট থাকবে না। সকল “সন্ত্রাসবাদী” কে নির্মূল করে ফেলবে এবং সর্বত্র শান্তি, নিরাপত্তা ও সুবিচারের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।
তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ ইজাখিলে আছেঃ
“হে ইহুদিকন্যা, তুমি আনন্দের সাথে চিৎকার দাও। ওহে জেরুজালেমের কন্যা, তুমি খুশিতে বাগবাগ হয়ে যাও। ঐ দেখ তোমাদের রাজা আসছেন। তিনি ন্যায় পরায়ণ। তিনি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসছেন। আমি ইউফ্রিম থেকে গাড়িকে আর জেরুজালেম থেকে ঘোড়াকে আলাদা করে ফেলব। যুদ্ধের পালক উপড়ে ফেলা হবে। তার শাসন সমুদ্র থেকে জমিন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে”। (জাকারিয়াঃ৯ঃ৯ঃ১০)
“অনুরূপভাবে আমি ইসরাইলের প্রতিটি সম্প্রদায়কে সমগ্র পৃথিবী থেকে এনে একত্রিত করব, চাই তারা যেখানেই বসতি স্থাপন করুক। আমি তাদেরকে তাদেরই ভূখণ্ডে সমবেত করব। এই ভূখণ্ডে আমি তাদেরকে এক জাতির আকারে গড়ে তুলব ইসরাইলের পাহাড়ের উপর, যেখানে একজনমাত্র রাজা তাদের উপর রাজত্ব করবেন”। (ইজাখিলঃ৩৭ঃ২১ঃ২২)
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান ১৯৮৩ সালে চার্চের জেম বেকারের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “আপনি একটু চিন্তা করুন, রোমান সাম্রাজ্যের পুনর্গঠনের পর (পাশ্চাত্য ইউরোপ যা ১৯৯৩ সালে আরও সুসংগঠিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নামে একক পতাকা, একক মুদ্রা, ভিসাহীন ভ্রমণ) মাসীহ (দাজ্জাল) পুনরায় সেই লোকগুলোর উপর আক্রমণ চালাবে, যারা তাদের নগরী জেরুজালেমকে ধ্বংস করেছিল। তারপর তিনি সেই বাহিনীগুলোর উপর আক্রমণ চালাবেন, যারা মেগডন ও আরমাগেডনের উপত্যকায় সমবেত হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, জেরুজালেম পর্যন্ত এত রক্ত প্রবাহিত হবে যে, রক্ত ঘোড়ার লাগামের সমান হয়ে যাবে। এসব উপত্যকা যুদ্ধ সরঞ্জাম, জীবজন্তু, মানুষের জীবন্ত দেহ ও রক্তে ভরে যাবে”।
প্রাক্তন মার্কিন সিনেটর পল ফান্ড লে বলেছেন, “একটি বিষয় আমার বুঝে আসছে না যে, মানুষ মানুষের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ কিভাবে করবে! কিন্তু সেদিন খোদা মানবীয় স্বভাবকে এই অনুমতি দিয়ে দিবেন যে, তোমরা তোমাদেরকে পুরোপুরি প্রকাশ করে দাও। বিশ্বের উন্নত সবকটি শহর – লন্ডন, প্যারিস, টোকিও, নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলস ও শিকাগো অস্তিত্বের পাতা থেকে মুছে যাবে”।
টিভি বিশেষজ্ঞ হিস্টন বলেছেন, “বিশ্বের ভাগ্য সম্পর্কে মাসীহে দাজ্জালের ঘোষণা একটি আন্তর্জাতিক প্রেস কনফারেন্স থেকে প্রচার করা হবে। উক্ত কনফারেন্স স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টিভির পর্দায় দেখা যাবে”।
প্রাক্তন মার্কিন সিনেটর মার্ক হেটফিল্ড বলেছেন, “পবিত্র ভূমিতে (জেরুজালেমে) ইহুদীদের পুনরাগমনকে আমি এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি যে, এটি মাসীহ যুগের আগমনের লক্ষণ, যে যুগে গোটা মানবতা একটি আদর্শ সমাজের কল্যাণে সুখময় জীবন লাভ করবে”
দাজ্জালঃ ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের দৃষ্টিভঙ্গি (২/২)
“ ফোর্সিং গডস হ্যান্ডস” নামক গ্রন্থের লেখিকা গ্রেস হল গেল বলেছেন, ‘...আমাদের গাইড কুব্বাতুস-সাখরার (টুম স্টোন) প্রতি ইঙ্গিত করে বলল, আমাদের তৃতীয় হাইকেলটি আমরা ওখানে নির্মাণ করব। হাইকেল নির্মাণে আমাদের সকল পরিকল্পনা প্রস্তুত আছে। নির্মাণ সামগ্রী পর্যন্ত এসে পড়েছে। সেগুলো একটি গোপন স্থানে রাখা হয়েছে। বহুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান – যেগুলোতে ইসরাইলি কাজ চলছে – হাইকেলের জন্য দুর্লভ সব জিনিসপত্র তৈরি করছে। একটি ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান রেশমের সুতা তৈরি করছে। সেগুলো দিয়ে ইহুদি পণ্ডিতদের পোশাক প্রস্তুত করা হবে’। (হতে পারে এগুলোই সেই তীজান বা সীজানওয়ালা চাদর, যার উল্লেখ হাদিসে এসেছে)।
লেখিকা আরও লিখেছেন, ‘আমাদের গাইড বলল, একথা ঠিক যে, আমরা শেষ সময়ের কাছাকাছি চলে এসেছি, যেমনটি আমি বলেছিলাম যে, কট্টর ইহুদিরা মসজিদটিকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেবে, যার ফলে মুসলিম বিশ্ব আতঙ্কিত হয়ে উঠবে। এটি হবে ইসরাইলের সঙ্গে একটি পবিত্র যুদ্ধ। এ বিষয়টি মধ্যখানে এসে হস্তক্ষেপ করতে মাসিহকে (দাজ্জাল) বাধ্য করবে’।
১৯৯৮ সালের শেষের দিকে একটি ইসরাইলি সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে হাইকেলে সুলাইমানির চিত্র দেখানো হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, এর উদ্দেশ্য হলো, মুসলমানদের উপাসনালয়গুলোকে মুক্ত করা এবং তদসম্মুখে হাইকেল নির্মাণ করা। সংবাদপত্রে বলা হয়েছিল, এই হাইকেল নির্মাণের মোক্ষম সময়টি এসে পড়েছে। সংবাদপত্রে ইসরাইলি সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল, তারা যেন অধর্মীয় ইসলামি দখলদারিত্বকে মসজিদের স্থান থেকে অপসারণ করে। পত্রিকাটি আরও দাবি করেছে, তৃতীয় হাইকেল নির্মাণ খুবই সন্নিকটে।
গ্রেস হল সেন আরও লিখেছেন, ‘আমি লেন্ডা ও ব্রাউনের (ইহুদি) আবাসভুমিতে (ইসরাইলে) অবস্থান করি। একদিন সন্ধ্যায় আলাপকালে বললাম, উপাসনালয় নির্মাণের জন্য মসজিদে আকসা ধ্বংস করে দিলে একটি ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। উত্তরে সঙ্গে সঙ্গে উক্ত ইহুদি বলল, আপনার আশঙ্কা যথার্থ। এমন যুদ্ধই তো আমরা কামনা করি। কারণ, সেই যুদ্ধে আমরা জয়ী হব। তারপর আমরা সমস্ত আরবকে ইসরাইলের মাটি থেকে তাড়িয়ে দেব। আর তখনই আমরা আমাদের উপাসনালয়টিকে নতুনভাবে নির্মাণ করব’।
ইলহামের কিতাবের ষোলতম তথ্যে আছে, ফোরাত নদী শুকিয়ে যাবে। এভাবে প্রাচ্যের সম্রাটগণ অনুমতি পেয়ে যাবে যে, এই নদী পার হয়ে তোমরা ইসরাইল পৌঁছে যাও।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিকসন তাঁর “ভিক্টরি উইদাউট ওয়ার” নামক গ্রন্থে লিখেছেন, ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমেরিকা সমগ্র বিশ্বের শাসকে পরিণত হবে এবং এই বিজয় তারা যুদ্ধ ছাড়াই অর্জন করবে। তারপর মাসিহ (দাজ্জাল) নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করে নিবেন। যেন উল্লেখিত সন পর্যন্ত মাসিহর সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়ে যাবে আর আমেরিকার দায়িত্ব এসব ব্যবস্থাপনাকে সম্পন্ন করা পর্যন্ত। তারপর মাসিহ রাজ্য পরিচালনা করবে।
লাখ লাখ মৌলবাদী খ্রিস্টানের বিশ্বাস হলো, ঈশ্বর ও ইবলিসের মধ্যকার সর্বশেষ যুদ্ধটি তাদের জীবদ্দশাতেই শুরু হবে। তবে তাদের অধিকাংশের কামনা হলো, এই যুদ্ধ শুরু হবার আগেই তাদেরকে তুলে নিয়ে জান্নাতে পৌছিয়ে দেওয়া হোক। খ্রিষ্টান মৌলবাদীরা সামরিক প্রস্তুতিতে এত সোৎসাহ সহযোগিতা কেন করছে, এই দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই তাঁর রহস্য উদঘাঁটিত হয়ে যাচ্ছে। এই পলিসি দ্বারা তারা দুটি লক্ষ্য অর্জন করেছে। প্রথমত, তারা আমেরিকানদেরকে তাদের ঐতিহাসিক ভিত্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, তাদেরকে সেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছে, যেটি ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে এবং যার ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে। ভিসন থমাস তার এক গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আরব বিশ্ব খ্রিস্টানদের একটি শত্রুজগত’।
খ্রিস্টানরাও কোন একজন মুক্তিদাতার অপেক্ষায় অপেক্ষামাণ। আর ইহুদিরা এক্ষেত্রে বেশি বিচলিত। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৬৭ সালে বাইতুল মুকাদ্দাস দখলের আগে ইহুদিরা দু’আ করত, হে খোদা, এ বছরটি আমাদেরকে জেরুজালেমে থাকতে দাও। আর এখন তারা প্রার্থনা করছে, হে খোদা, আমাদের মাসিহ যেন শীঘ্র এসে পড়েন।
মোটকথা, যে সব ভবিষ্যৎবাণী ঈসা ইবনে মরিয়ম সম্পর্কে বর্ণিত আছে, ইহুদীরা সেগুলোকে দাজ্জালের জন্য প্রমাণ করতে চায়। এক্ষেত্রে তারা খ্রিস্টানদেরকেও ধোঁকা দিচ্ছে যে, আমরা প্রতিশ্রুত মাসিহর অপেক্ষায় করছি আর মুসলমানরা হল মাসিহ’র বিরোধী। অথচ বাস্তবতা তার বিপরীত। মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয়েই ঈসা ইবনে মরিয়মের অপেক্ষায় অপেক্ষামাণ। পক্ষান্তরে ইহুদীরা যার অপেক্ষা করছে, সে হল দাজ্জাল, ঈসা ইবনে মরিয়ম যাকে হত্যা করবেন। কাজেই বর্তমান পরিস্থিতিতে খ্রিস্টানদের উচিত ছিল মুসলমানদের সঙ্গ দেওয়া – ইহুদীদের নয়। কেননা, ইহুদীরা তাদের পুরনো শত্রু।
source: http://amin-baig.blogspot.com/2013/08/blog-post_1886.htm
Wednesday, November 27, 2013
ইরাকঃ ইমাম মাহদির হাতে বাইয়াত ও যুদ্ধে সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে হাদিস ও সেখানে দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের বর্তমান কার্যক্রম
যেহেতু বৃহত্তর ইরাকের একটি দল ইমাম মাহদির সঙ্গী হবে এবং ইমাম মাহদির আগমনের পূর্বে ও পরে বিভিন্ন ঘটনা ও যুদ্ধের সাথে এই ভূখণ্ডের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা এসেছে, তাতে বুঝা যায় যে, এগুলো শেষ জামানার অংশ হিসাবে হতে হবে। আসুন, আমরা একটু মিলিয়ে নেই, হাদিসের ধারাবাহিকতায় আমরা কোন জামানায় বসবাস করছি। অন্যথায়, বৃহত্তর ইরাকে থেকে যে দলই বের হোক না কেন আর যত ঘটনা ও যুদ্ধই হোক না কেন, তার গুরুত্ব অনুধাবন করা যাবে না।
হযরত হুজায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“নবুওয়াত ব্যবস্থা তোমাদের মাঝে ততদিন থাকবে, যতদিন আল্লাহ তাআলা মঞ্জুর করেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা, তখন তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর) তোমাদের মাঝে নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে এবং তা আল্লাহ তাআলা যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (খুলাফায়ে রাশিদিন এর যুগ)। অতঃপর তিনি তা উঠিয়ে নিবেন। তারপর হানাহানির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা আল্লাহ তাআলার যতদিন ইচ্ছা ততদিন থাকবে (রাজতন্ত্র)। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তার বিলুপ্তি ঘটবে। তারপর জবর দখল তথা আধিপত্য বিস্তারের রাজত্ব কায়েম হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াতে কিছুকাল বিরাজমান থাকবে (নানা ভূখণ্ডে বর্তমান একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকগণ) । তারপর যখন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, তখন এরও অবসান ঘটবে। অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত রাষ্ট্র-ব্যবস্থা কায়েম হবে। এ বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন”।
(মুসনাদে আহমদঃ ৪/২৭৩)
আর তাছাড়া অপর হাদিসে, হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) এবং মু’আজ বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“ইসলামের সূচনা হয়েছে নবুওয়াত ও রহমতের শাসনের মাধ্যমে। এরপর হবে খেলাফত ও রহমতের শাসন। এরপর হবে অত্যাচার লুটেরা বাদশাদের শাসন। এরপর হবে অহংকারী প্রভাবশালী বাদশাদের শাসন, তখন জমিনে অন্যায়, অবিচার, ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়বে। সেকালের লোকেরা রেশম (সিল্ক), ব্যভিচার (পরকীয়ার পাশাপাশি বয়ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ডের নামে চলমান বহুল প্রচলিত সামাজিকভাবে স্বীকৃত উঠতি বয়সী অবিবাহিতদের জেনা) এবং মদকে হালাল করে ফেলবে। আল্লাহর সাথে সাক্ষাত পর্যন্ত এর মাধ্যমেই তাদেরকে রিজিক দেওয়া হবে এবং সাহায্য করা হবে”।
(শুয়াইবুল ঈমান আল বায়হাকি, ৫/১৬)
উপরের হাদিসদ্বয়ের প্রেক্ষিতে আমরা যে যুগের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছি, তা হচ্ছে অন্যায়, অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদ ছড়িয়ে পড়ার যুগ। আল্লাহ তা’আলার জমিনে সর্বোচ্চ শাসন ব্যাবস্থা (sovereignty) একমাত্র আল্লাহর হওয়া উচিৎ। যদি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর কানুন ব্যতীত মানুষের তৈরি কোন কানুন বাস্তবায়নের অপচেস্টা চালানো হয়, তবে অবশ্যই জমিনে অন্যায় অবিচার ও ফেতনা ফ্যাসাদে ভরে যাবে।
১৯২৪ সালে উসমানি খেলাফতের ভেঙ্গে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ ৫৭ টি ভূখণ্ডে বিভক্ত হয়ে বর্তমানে একনায়কতন্ত্র ও রকমারি বাদ ও তন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত স্বৈর শাসকদের দ্বারা শাসিত। ‘অতঃপর নবুওয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা কায়েম হবে’ - মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তিই প্রমাণ করে সারা বিশ্বে ইসলামী শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে। রাজত্বের লাগাম মুসলিমদের হস্তগত হবে। কখনো এর ব্যতিক্রম হবে না। কারণ, বিভিন্ন বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তা যথা সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতিহাসে তার বহু প্রমাণ রয়েছে। এবং আমরা সেই রকমই একটি ‘ট্রাঞ্জিশনাল ফেজ’ এ আছি।
মূলত রাসুল (সাঃ) এর যুগে বৃহত্তর ইরাক বলতে এর সীমানা বর্তমান ইরাক ও কুয়েতকে বুঝায়। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে তৎকালীন মেসোপটেমিয়ার (ইরাকের পূর্ব নাম) অংশ হিসাবে বর্তমান কুয়েতের ইতিহাস পাওয়া যায়। বৃহত্তর ইরাকে ইসলাম আসার পরের ইতিহাসে দেখা যায়, কুয়েত ছিল বসরা প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত একটি অংশ যা কিনা বন্দরনগরী হিসাবে বানিজ্যিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বপ্রথম ১৭৫৭ সালে সাবাহ বিন জাবিরকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিজেদের জন্য আমির নিজুক্তির মধ্য দিয়ে “আল সাবাহ” রাজ পরিবারের সূচনা। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তুর্কি (তুরস্ক) সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সেখানকার তৎকালীন আমীর কুবারক আল সাবাহ তার দুই ভাইকে হত্যা করে তুর্কি (তুরস্ক) সাম্রাজ্যাধীন ইসলামিক খেলাফতের অংশ না হতে চেয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে নিরাপত্তা দানকারী বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে তাদের সাথে ১৮৯৯ সালে একটি ‘নিরাপত্তা চুক্তি’ সম্পাদন করে। পরবর্তীতে ১৯১৩ সালের “অ্যাংলো অটোম্যান কনভেনশন” চুক্তির মাধ্যমে তুর্কি (তুরস্ক) সাম্রাজ্য হতে বের হয়ে এসে ব্রিটিশদের ছায়াতলে বছরের পর বছর থাকার পরে ১৯৬১ সালে একটি সতন্ত্র ভূখণ্ড হিসাবে একটি রঙ্গিন জাতীয়তাবাদের পতাকা বাগিয়ে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে ইরাক অতীত ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে কুয়েতকে নিজেদের অংশ হিসাবে দাবী করলেও ১৯৬৩ সালের অক্টোবর মাসে একটি স্বাধীন ও সতন্ত্র ভূখণ্ড হিসাবে কুয়েতকে মেনে নেয়।
তৎকালীন সময়ে কুফা, বসরা ও বাগদাদ (পূর্ব নাম ‘জাওরা’) ছিল উল্লেখযোগ্য। কিন্তু কালের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে ভূখণ্ডের অন্যান্য এলাকাগুলোতে লোকালয় গড়ে উঠেছে। হাদিসের কখনও শুধু ইরাক এসেছে। কখনও সরাসরি কুফা, বসরা ও বাগদাদের কথা এসেছে। কখনও বা দজলা ও ফোরাত নদীর উপকুলের কথা বা সেখানে অবস্থিত অঞ্চলের নাম সরাসরি এসেছে। যাহোক, আমরা সতর্কতার জন্য বর্তমান ইরাক ও কুয়েতকেই বৃহত্তর ইরাক হিসাবে মাথায় রাখবো।
ইবনে উমর থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইরাকের দিকে হাত নির্দিষ্ট করে তিন বার বলতে শুনেছিঃ
“অবশ্যই ফেতনা ঐখান থেকে আসবে। আর শয়তানের শিং ওখান থেকে বের হবে”।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৬২৬৬, মুহাক্কিক সাকির আহমাদ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
আসুন, প্রথমে আমরা বৃহত্তর ইরাকের অন্যতম অংশ কুয়েত সম্পর্কে একটি অবাক করা বর্ণনা জেনে নেই যা ইমাম মাহদি বিষয়ক একটি গ্রন্থে। বর্ণনাটি নিম্নরূপঃ
“মেরুদণ্ডের সর্বশেষ হাড়ের চেয়েও ছোট হাড়ের ন্যায় একটি ভূখণ্ড যুদ্ধের কারণ হবে। সারা বিশ্ব তার জন্য এমনভাবে একত্র হবে যেন সেই ক্ষুদ্র ভূখণ্ড বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভূখণ্ড আর তাকে পাওয়ার জন্য সারা বিশ্ব এক হয়েছে। সেই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের শাসক পৃথিবীর সকল ফিতনা সৃষ্টিকারী শাসকদের নেতার কাছে তার পতাকাকে সমর্পণ করবে, যে (ফিতনা সৃষ্টিকারী শাসকদের নেতা) কিনা সর্ব পশ্চিমের সুদূরবর্তী সমুদ্র উপকূলবর্তী ভূখণ্ড থেকে আসবে। আর তখন এটাই হবে শেষের (শেষ জামানার) শুরু যেহেতু সে (ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের শাসক) গোটা বিশ্বের কাছে তার (ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের) সাহায্যের জন্য আর্জি জানাবে। সে (ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের শাসক) আবার তার সিংহাসন ফিরে পাবে আর এর মোকাবিলায় ইরাকের শেষ জামানা সম্পর্কিত ধ্বংস শুরু হবে। ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের সেই শাসক ইমাম মাহদির সৈন্য বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং সেই ক্ষুদ্র ভূখণ্ড আবার হুমকির সম্মুখীন হবে যেহেতু এর শাসক অনেক ফেতনার কারণ। ইমাম মাহদি এই (ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের) শাসককে হত্যার নির্দেশ দিবে এবং সেই ক্ষুদ্র হাড়টি (ক্ষুদ্র ভূখণ্ড) মূল শরীরে (মূল ভূখণ্ডে) ফেরত আসবে”।
(আসমাল মাসালিক লিয়্যাম মাহাদিয়্যা মালিকি লি কুল্লু-ইদ দুনিয়া বি ইম্রিল্লাহিল মালিক, লেখকঃ কালদা বিন জায়েদ বিন বারাকা)
১৯৯০ সালের ২ রা আগস্ট ইরাক কুয়েত (তাছাড়া কুয়েতি দিনার পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান নোট) দখল করে নেয় এবং ১৯ তম প্রদেশ হিসাবে ঘোষণা করে। ইরাক যুক্তি হিসাবে দেখায়, “Kuwait was a natural part of Iraq carved off as a result of British imperialism”।
একই দিন সর্ব পশ্চিমের সুদূরবর্তী সমুদ্র উপকূলবর্তী ভূখণ্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থানরত তৎকালীন কুয়েতি রাষ্ট্রদূত শেখ সাউদ নাসির আল সাবাহ মিডিয়াকে জানায়ঃ “We have appealed to all our friends around the world, including the USA, to come to our aid and assistance; we would like to have military assistance in order to survive.”
নানা ঘটনার পরিক্রমা পেরিয়ে ১৯৯১ সালের ১৭ই জানুয়ারি বোমারু বিমানের মাধ্যমে বাগদাদ নগরীর উপর বোমা বর্ষণের মাধ্যমে শুরু হয় ইরাককে কুয়েত ছাড়ার জন্য বল প্রয়োগ। ৩৪ টি দেশের পদাতিক বাহিনীর অংশগ্রহণে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী গঠন করা হয়। দেশসমূহঃ আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, মিশর, ফ্রান্স, গ্রীস, ইতালি, কুয়েত, মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নাইজার, নরওয়ে, ওমান, পাকিস্তান, পর্তুগাল, কাতার, দক্ষিন কোরিয়া, সৌদি আরব, সেনেগাল, সিয়েরা লিওন, সিঙ্গাপুর, সিরিয়া, স্পেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইংল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র নিজে। ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে পদাতিক আক্রমণ।
২৮ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে জোটের নেতৃত্বদানকারী সর্ব পশ্চিমের সুদূরবর্তী সমুদ্র উপকূলবর্তী ভূখণ্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসক নেতা জর্জ বুশ কুয়েতকে মুক্ত ঘোষণা করে এবং ‘আল সাবাহ’ রাজ পরিবারকে সিংহাসন ফিরিয়ে দেয়। আর ইরাকের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের দ্বার উন্মুক্ত হয়।
ইমাম মাহাদির আত্মপ্রকাশের পরে এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের রাজ বংশের আমিরের কার্যকলাপ, তার শেষ পরিণতি এবং এই ভূখণ্ডের রঙ্গিন জাতীয়তাবাদের পতাকা ছেড়ে ইমাম মাহদির ‘খেলাফতের কালো কালিমা খচিত সাদা পতাকা’ কিংবা ‘সাদা কালিমা খচিত কালো সামরিক পতাকা’ অধীনে আসার ঘটনা এখন সময়ের ব্যাপার।
আসুন, এবার আমরা ইমাম মাহদির আগমনের পূর্বে এই ইরাক নামক ভূখণ্ডের উপর অবরোধ আরোপ সংশ্লিষ্ট হাদিসগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেই।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“ইরাক তার ‘দিরহাম’ ও ‘কাফিজ’ (তেল মাপার আঞ্চলিক একক) এর প্রচলন থামিয়ে দিবে, সিরিয়া তার ‘মাদ’ (গম/চাল মাপার সিরীয় একক) ও ‘দিনার’ এর প্রচলন থামিয়ে দিবে আর মিশর তার ‘ইরদাব’ (গম/চাল মাপার মিসরীয় একক) ও ‘দিনার’ এর প্রচলন থামিয়ে দিবে। তোমরা আবার সেই অবস্থায় ফিরে যাবে যেখান থেকে শুরু করেছিল, তোমরা আবার সেই অবস্থায় ফিরে যাবে যেখান থেকে শুরু করেছিল, তোমরা আবার সেই অবস্থায় ফিরে যাবে যেখান থেকে শুরু করেছিল। আবু হুরায়রার রক্ত মাংস এর সাক্ষ্য বহন করে”।
(সহিহ মুসলিম, অধ্যায় ৪১, হাদিস নং ৬৯২৩)
আবু নাদ’রা বর্ণনা করেন, আমরা হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেন,
“সেই সময়টি অতি নিকটে, যখন ইরাকিদের ‘দিরহাম’ ও ‘কাফিজ’ এর উপর অবরোধ আরোপ করা হবে”। জিজ্ঞেস করা হল, এই অবরোধ কার পক্ষ থেকে আরোপ করা হবে? উত্তরে তিনি বললেন, “অনারবদের পক্ষ থেকে”। এরপর বললেন, “সেই সময়টিও বেশি দূরে নয়, যখন সিরিয়ার অধিবাসীদের ‘মাদ’ ও ‘দিনার’ এর উপরও অবরোধ আরোপ করা হবে”। জিজ্ঞেস করা হল, এই অবরোধ কার পক্ষ থেকে হবে? বললেন, “পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে”। কিছু সময় নীরব থাকার পর বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার শেষ উম্মতের মধ্যে এমন এক খলীফার (ইমাম মাহদির) আবির্ভাব ঘটবে, যে মানুষকে মুঠি ভরে ভরে সম্পদ দান করবে এবং কোন হিসাব গণনা করবে না”।
(সহিহ মুসলিম, অধ্যায় ৪১, হাদিস নং ৬৯৬১)
হাদিসের দিকে তাকালে দেখা যায়, এমনকি অবরোধ আরোপের সিরিয়াল পর্যন্ত দেওয়া আছে। এই লিখাটি শুধু ইরাক সম্পর্কিত হওয়ায় আমরা শুধু ৬ ই আগস্ট ১৯৯০ থেকে শুরু হওয়া ইরাকি অবরোধ নিয়ে আলোচনা করব (যদিও ২০১১ এর আগস্ট থেকে সিরিয়ার উপরও অবরোধ চলছে এবং এখনও মিশরের উপর কোন অবরোধ আরোপ হয়নি, ২০১৩ মিডিয়াতে সামান্য সম্ভাবনার আলাপ আলোচনা হয় মাত্র)।
সিরিয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে শুধু “পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে” বলা হলেও ইরাকের ক্ষেত্রে “অনারবদের পক্ষ থেকে” বলা হয়েছে এবং কুয়েত দখলের পরপরই ৬ ই আগস্ট ১৯৯০ তারিখে হাদিসের শাব্দিক প্রয়োগকে বাস্তবে রুপ দিয়ে প্রথম অনারব সংগঠন (পশ্চিম, পূর্বসহ সকল জাতীয়তার সংগঠন) “আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিষদ” কর্তৃক ইরাকের উপর অর্থনৈতিক ও সব ধরনের বানিজ্যের উপর বানিজ্যিক অবরোধ আরোপ করা হয়। হাদিসে বলা হয়েছে, “ইরাকিদের ‘দিরহাম’ ও ‘কাফিজ’ এর উপর অবরোধ আরোপ করা হবে”।
দিরহাম = অর্থ
কাফিজ = তেল মাপার আঞ্চলিক একক
১ দিনার = ৭২ টি বার্লি দানার সম ওজন সম্পন্ন স্বর্ণ মুদ্রা। বর্তমান ৪.৪৫গ্রাম সোনা।
১ দিরহাম = ০.৭ দিনার (৭০% স্বর্ণ দিনার)
২০০৩ সালে যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকেই ইরাকি সেন্ট্রাল ব্যাংক ইরাকি দিনার নোট থেকে ‘০০০’ তুলে দিয়ে সমমানের নতুন একক প্রচলনের চেষ্টা করছে। যার প্রথম চালান ২০১৪ তে আসার কথা।
উল্লেখ্য যে, ইতিহাসে ‘কাফিজ’ শব্দটি সব সময়ই তৈল মাপার একক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে দক্ষিন ইতালির উপর আরব প্রভাব থাকার কারণে তৈল মাপার এককের ক্ষেত্রে সিসিলিয়ান ভাষায় আরবি ভাষার “কাফিজ” শব্দের অনুরূপ “কাফিসু” (Kafisu /kafiso) শব্দ এসেছে।
এক টানা ১৩ বছর পর্যন্ত এই অবরোধের পর ২০০৩ সালের ২২ শে মে অধিকাংশ অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। অবরোধের যেই শর্তগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তৈল কোম্পানির অনুকূলে ছিল সেগুলো ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবত ছিল। আর অবরোধের যেই শর্তটি কুয়েত দখলের ক্ষতিপূরণ হিসাবে এখনও ইরাকের গ্যাস ও তৈল বিক্রির উপার্জন উপর থেকে ৫% কেটে নেয়, সেটি এখনও বলবত আছে।
কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং অধ্যাপক রিচার্ড গারফিল্ড তার সেপ্টেম্বর ৪, ২০০৩ এ প্রকাশিত “The Iraqi babies scam is still alive” নিবন্ধে যুদ্ধ ব্যতীত শুধু এই অবরোধের ফলে অতিরিক্ত ৩,৪৫,০০০ থেকে ৫,৩০,০০০ নারী, শিশু ও বেসামরিক ইরাকির মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন।
আসুন, এবার আমরা ইমাম মাহদির আগমনের পূর্বে যুদ্ধে এই অঞ্চলের সংশ্লিষ্টতা সম্বলিত হাদিসগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেই।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ’স সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন,
“সেই সময়টি অতি নিকটে, যখন পশ্চিমা জনগোষ্ঠী তোমাদেরকে ইরাকের মাটি থেকে বের করে দেবে”।
বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, পরে কি আমরা ফিরে আসব? উত্তরে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তা কামনা করছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, “পরে তোমরা ফিরে আসবে। আর তখন তোমরা (ইরাকে) সচ্ছল ও সাচ্ছন্দ্যময় জীবন লাভ করবে”।
(আল ফিতান,খণ্ড ৪; পৃষ্ঠা ৯০৭)
“শেষ জামানায় বাগদাদ আগুনে ধ্বংস হবে”।
(রিসালাতুল হুরুজ উল মাহদি, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৭৭)
হযরত আবু উছমান আন নাহদি বর্ণনা করেন, আমি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) এর সাথে কাতারবালে অবস্থান ক্রছিলাম। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই লোকালয়টির নাম কি?
আমি বললাম, কাতারবাল।
তারপর তিনি দুজাইলের দিকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করলেন, ওটির নাম কি?
আমি বললাম, দুজায়লা।
তারপর তিনি সুরাতের (বর্তমান সুরাহ’ দি) দিকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করলেন, ওটির নাম কি? আমি বললাম, এই অঞ্চলের নাম সুরাত। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,
“দজলা, দুজাইল, কাতারবাল ও সুরাতের মধ্যখানে একটি নগরী তৈরি হবে, যেখানে জগতের ধন-দৌলত ও অত্যাচারী লোকদের সমবেত করা হবে। নগরীর অধিবাসীরা ধ্বসে যাবে। এই নগরীটি লোহার পেরেকেরও চেয়ে বেশি দ্রুতগতিতে মাটির মধ্যে ধ্বসে যাবে”।
(তারীখে বাগদাদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩০)
দুজাইল বাগদাদ ও তিরকিতের মধ্যখানে সামারা নগরীর সন্নিকটে অবস্থিত।
আনাস বিন মালিক হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“হে আনাস, লোকেরা অনেক শহর তৈরি করবে এবং তাদের একটি হবে বসরা। তুমি যদি এর পাশ দিয়ে যাও কিংবা এতে প্রবেশ কর, তবে এর নদীর সাথে উপকূলবর্তী লোনা ভেজা এলাকা, এর আশে পাশের এলাকা, এর বাজার, এর প্রভাবশালীদের দরজা এড়িয়ে চোলো, আর গ্রাম্য এলাকা দিয়ে চলাচল করো। কারণ, এর কোথাও ভূমিধ্বস হবে, কোথাও প্রবল বর্ষণ হবে আবার কোথাও ভূমিকম্প হবে। এবং সেখানে কিছু লোক এমন হবে যে তারা সেখানে রাত কাটাবে আর পরদিন সকালে বানর ও শূকরে পরিণত হবে”।
(সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায় ৩৭, হাদিস নং ৪২৯৩)
অপর বর্ণনায় আছে,
“দজলা ও ফোরাত নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে জাওরা (বাগদাদ) শহর প্রতিষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রবল যুদ্ধ হবে। মেয়েদেরকে যুদ্ধবন্দী হিসাবে নেওয়া হবে আর পুরুষদেরকে ভেড়ার মতো জবাই করে হত্যা করা হবে”।
(মুন্তাখাব কানাজুল উম্মাল, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৮)
২০০১ এ খোরাসান আক্রমণের পর থেকে সর্ব পশ্চিমের সুদূরবর্তী সমুদ্র উপকূলবর্তী ভূখণ্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসক নেতা জর্জ বুশ ইরাক আক্রমণের জন্য নানারূপ অজুহাত খুঁজতে থাকে। দুই বছর যাবত পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন ভূখণ্ডের দালাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা ইরাককে বিশ্বে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরিকারী এবং সন্ত্রাসের মদদদাতা হিসাবে প্রচার করে মিডিয়া যুদ্ধ করতে থাকে।
অবশেষে একক সিদ্ধান্তে তথাকথিত গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান জাতি সংঘের তোয়াক্কা না করে ২০০৩ সালের ২০ শে মার্চ রাত ২:৩০ এ বাগদাদে বোমারু বিমান হামলার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ড নামক বর্তমান কালের দুই পশ্চিমা কর্ণধার ইরাক আক্রমণ করে। এরপরের দিনই যুক্তরাষ্ট্র (১,৪৮,০০০ সৈন্য), ইংল্যান্ড (৪৫,০০০ সৈন্য), অস্ট্রেলিয়া (২,০০০ সৈন্য) ও পোল্যান্ড (১৯৪ জন সৈন্য) কুয়েত সীমানার নিকটবর্তী পদেশ বসরাতে পদাতিক অভিযান শুরু করে।
পরবর্তীতে তাদের এই জোটের রঙ্গিন পতাকাবাহী ভূখণ্ডের সংখ্যা চল্লিশে গিয়ে পৌঁছেঃ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রুমানিয়া, এলসালভাদর, এস্তোনিয়া, বুলগেরিয়া, মালডোভা, আলবেনিয়া, ইউক্রেইন, ডেনমার্ক, চেক রিপাবলিক, দক্ষিন কোরিয়া, জাপান, টোঙ্গা, আজারবাইজান, বসনিয়া-হারজেগোভিনা, মেসিডোনিয়া, লাটভিয়া, পোল্যান্ড, কাজাখস্তান,আরমেনিয়া,মংগোলিয়া, জর্জিয়া, স্লোভাকিয়া, লিথুনিয়া, ইটালি, নরওয়ে, হাঙ্গেরী, নেদারল্যান্ড, পর্তুগাল, নিউজিল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন্স, হন্ডোরাস, ডমিনিকান রিপাবলিক, স্পেন, নিকারাগুয়া, আইসল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর। এই জোটের নাম দেওয়া হয় ‘বহুজাতিক বাহিনী – ইরাক’ Multi National Force – Iraq (MNF-I) এবং তার অফিসিয়াল মনোগ্রামে হলুদ রঙ্গের আধিক্য। এবং ধীরে ধীরে অল্প সময়ের মধ্যে গোটা ভূখণ্ড দখলে নিয়ে নেয়।
আর এই যুদ্ধের সঠিক যুদ্ধ বন্দী পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। আর তাদের উপর পরিচালিত অকথ্য নির্যাতন ও ধর্ষণের কাহিনী আবু গাইরিব কারাগার হতে বের হউয়া ছবি, অতি উৎসাহে ধারণকৃত ভিডিওর মাধ্যমে অনেক সচেতন মুমিনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
অপর বর্ণনায় এসেছে,
“ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত হবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত ইরাক আক্রান্ত হবে এবং নিরপরাধ ইরাকবাসী সিরিয়াতে আশ্রয় নিবে। সিরিয়া পুনঃনির্মিত হবে এবং ইরাক পুনঃনির্মিত হবে”।
(মুন্তাখাব কানাজুল উম্মাল, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৫৪)
২১ শে জুন ২০০৭ পর্যন্ত UNHCR এর হিসাব অনুযায়ী, ২০০৩ সালে যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে ঐ পর্যন্ত ২২ লক্ষ ইরাকি পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। এরমধ্যে ১০ লক্ষ ইরাকি সিরিয়াতে এবং সাড়ে ৭ লক্ষ ইরাকি জর্ডানে (তৎকালীন বৃহত্তর সিরিয়ার অংশ) আশ্রয় গ্রহণ করে।