কোরআনের কিছু আয়াতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
১-২- ১৯২৯ সালে আমরা জানতে পেরেছি যে, নক্ষত্রগুলি দুরে সরে যাচ্ছে,
কিন্তু কোরআন ১৪০০ বছর আগেই বলেছে,
আমি শপথ করি যেসব নক্ষত্রগুলো(গ্যালাক্সি) পশ্চাতে সরে যায়।চলমান হয় ও অদৃশ্য হয়
( সুরা তাকভীর৮১:১৫-১৬)
২;পেইন রিসেপ্টর আছে শুধু চামড়ায় অর্থাৎ ব্যথার অনুভুতি
"এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শন সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী।
[সুরা নিসা ৪: ৫৬]
আচ্ছা এখানে তো এমনও বলা যেত-- তাদের চামড়া, গোস্ত আর হাড্ডি জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব। আগুনে নিক্ষেপ করার পর এটাই কি স্বাভাবিক নয়? কিন্ত এখানে আল্লাহ
কেন শুধু চামড়ার কথা উল্লেখ করলেন? বিস্ময়টা কিন্তু এখানেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন পেইন রিসেপ্টর আছে শুধু চামড়ায় অর্থাৎ ব্যথার অনুভুতি শুধু ছামড়াতেই অনুভুত হতে পারে। একটা মানুষের যদি চামড়া, গোস্ত আর হাড্ডিতে তাপ প্রয়োগ করা হয় তবে শুধুমাত্র চামড়াতেই তাপ অনুভুত হবে , হাড্ডি অথবা গোস্তে নয়। আর এ কারনেই আল্লাহ উক্ত আয়াতে চামড়াকে জ্বালান ও পাল্টানোর কথা বলেছেন।
৩; সূর্য স্থির না চলমান
আগে ১৯৮০, সালের দিকে বিজ্ঞান বইতে ছিল যে, সূর্য স্থির থাকে, কিন্তু কোরআন ১৪০০ বছর আগে বলছে
সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ।
(সুরা ইয়াসিন আয়াত ৩৬:৩৮
তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। সুরা যুমার আয়াত ৩৯:৫)
৪; বিগ ব্যাং এর কথা
আমরা কবে জানতে পেরেছি? ১০০ বছর? ২০০ বছর? কোরআন ১৪০০ বছর আগেই বলেছে যে,
"কাফেররা কি ভাবিয়া দেখে না যে, আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল অতঃপর আমি উভয়কে খুলিয়া দিলাম, এবং প্রানবন্ত সবকিছুই সৃষ্টি করলাম পানি থেকে এর পরেও কি তার বিশ্বাস স্থাপন করবে না? (সুরাহ আম্বিয়া আয়াত ২১:৩০)
৫; বিজ্ঞান বলে বিগ ব্যাং ছিল ধুয়ার মত,
এটা বিজ্ঞান কবে জানতে পেরেছে? কিন্তু কোরআন ১৪০০ বছর আগেই বলেছে
অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।
সুরা ফুসিওলাত আয়াত ৪১:১১)
৬; এখন বিজ্ঞান বলে চন্দ্র সুর্য একদিন ধংস হয়ে যাবে,
একথা বিজ্ঞান কবে জেনেছে? কিন্তু কোরআন ১৪০০ বছর আগেই বলেছে
"তুমি কি দেখনা যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন, এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন, প্রত্যেকেই নিদ্রিষ্ট সময় পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে, তুমি কি আরো দেখ না যে তোমরা যা কর আল্লাহ তার খবর রাখেন? (সুরা লোকমান আয়াত ৩১:২৯)
৭; বিজ্ঞান বলে বিশ্ব জগত সৃষ্টি হয়েছে ৬ টা সময়ে,
কোরআন ও বলছে বিশ্ব জগত সৃষ্টি হয়েছে ৬ টা সময়ে হতে পারে খুব লম্বা সময়, অথবা অল্প সময় কিন্তু ৬ টা সময়ে হয়েছে,
তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃস্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি পরম দয়াময়। তাঁর সম্পর্কে যিনি অবগত, তাকে জিজ্ঞেস কর। (সুরাহ ফোরকান আয়াত ৫৯)
৮; বিজ্ঞান অনু পরমানু আবিষ্কার করেছে কিন্তু তার চাইতে ছোট কিছু আবিষ্কার করতে পারেনি,
অনু, পরমানু, এবং তার চাইতেও ছোট বস্তুর কথা ১৪০০ বছর আগে কোরআনে বলা হয়েছে.........
কাফেররা বলে আমাদের উপর কেয়ামত আসবে না। বলুন কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ-অবশ্যই আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তাঁর আগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু, না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ-সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে। (সুরাহ সাবা আয়াত ৩৪:৩)
৯; পুরুষের শুক্রাণু সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ
তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী।একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়। (সুরা নাজম ৫৩:৪৫-৪৬)
আগে শহরে ও গ্রামে দেখা যেত যদি নবদম্পতির ঘরে পর পর ৩/৪ টা মেয়ে সন্তান হত তখন ভদ্রমহিলার স্বামী ও পরিবার তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করত। অজ্ঞতার কারনে ভাবত এটা মেয়েদেরই দোষ। কিন্তু এখন বিজ্ঞান বলে সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে এটা নির্ধারণ করে পুরুষের শুক্রাণু। কিন্তু কোরআন ১৪০০ বছর আগেই বলেছে যে, পুরুষের শুক্রাণু সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করে।
১০; ব্লাক হোলস :
"আমি শপথ করছি সেই জায়গার যেখানে তারকারাজি পতিত হয়। নিশ্চই এটা একটা মহাসত্য, যদি তোমরা তা জানতে।" (সূরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৭৫, ৭৬)
৭৫ নং আয়াতটি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, মহাবিশ্বে এমন জায়গা আছে, যেখানে তারকা পতিত হয়। ঠিক পরের আয়াতেই এটাকে, মহাসত্য বলে দাবি করা হয়েছে। মহাকাশে এরকম স্থান আছে, এটা মাত্র কিছুদিন আগে আবিষ্কার করা হয়েছে। এই জায়গাগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ব্লাক হোলস। এগুলোতে শুধু নক্ষত্র নয়, যে কোন কিছুই এর কাছাকাছি এলে, এখানে পতিত হতে বাধ্য। যাকে অস্তাচল হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
১১; আকাশেকে বিশেষভাবে সুরক্ষার ছাদ
আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। (সূরা আম্বিয়া ২১: ৩২)।
আয়াতটি বলছে আকাশেকে বিশেষভাবে সুরক্ষার ছাদ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে যা পৃথিবীকে নিরাপত্তা দেয়।
i.আমাদের পৃথিবীল বায়ুমন্ডলের উপরিভাগ অসংখ্য উল্কাপাত থেকে হর-হামেশা রক্ষা করছে। এটা এমন কিছু যা পৃথিবীকে বিশে নিরাপত্তা দেয়।
ii. বায়ুমন্ডলের একেবারে উপরিভাগে ভ্যান- এলেন-বেল্ট নামের একটি অতিরিক্ত স্তর রয়েছে। এই স্তরটি প্রায় ৬০,০০০ কিলোমিটার উপরে অবস্থিত। এই স্তর শুধুমাত্র সেই সমস্ত রশ্মিই
পৃথিবীতে আসতে দেয় যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। এটা সত্যি বিষ্ময়কর যে শুধু রেডিও ওয়েভ বা আল্ট্রা ভায়োলেট রে এর মত ক্ষতিকর রশ্মিগুলোই পৃথিবীতে আসতে পারে না, যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
একইসাথে এই স্তর সূর্যের ক্ষতিকর কসমিক রে কে পৃথিবীকে আসতে বাধা দেয়। অতিরিক্ত কম ঘনত্বের কারণে, এই স্তরটি আয়োনিত বা প্লাজমা অবস্থায় আছে। এই প্লাজমা মেঘ প্রায় ১০০ বিলিয়ন আনবিক বোমার (হিরোসিমায় মাত্র ১ টা ফেলা হয়েছিল) সমান পরিমান ক্ষতিকর শক্তি বিশিষ্ট রশ্মিকে আটকিয়ে দিতে পারে!
iii. আবার এই স্তর পৃথিবীকে মহাকাশের অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে, যা মাইনাস ২৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। দেড় হাজার বছর আগে মুহাম্মদ (সাঃ) কি করে জানলেন, পৃথিবীর উপরের এই সংরক্ষিত আর নিরাপত্তার ছাদের কথা?
১২; সাত আসমান :
তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত। (সূরা বাকারাহ ২:২৯)
আমাদের মাথার উপরের আকাশ অর্থাৎ বায়ুমন্ডল সাতটি বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত। এটা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। এই কিছুদিন আগে বিংশ শতাব্দির আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা ইহা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানীত হয়েছে।
কোরআনে দেড় হাজার বাছর আগে এই সাতটি স্তরের কথাই এভাবে বলেছে!খুবই বিষ্ময়কর। এই সাতটি স্তরের নামগুলো এরকম-
i. ট্রাপোস্ফিয়ার,
ii. স্ট্রাটোস্ফিয়ার,
iii. ওযনোস্ফিয়ার,
iv. মেসোস্ফিয়ার,
v. থার্মোস্ফিয়ার,
vi. আয়নোস্ফিয়ার,
vii. এক্সোস্ফিযার।
১৩; ভূমির সাতটি স্তর :
আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তাঁর গোচরীভূত। । (সূরা তালাক ৬৫:১২)
আয়াতটি আমাদের কি বলছে ? আয়াতটি আমাদের বলছে শুধু আসমানই নয় বরং পৃথিবীরও সাতটি স্তর রয়েছে। মোহাম্মদ (সঃ) তখনকার দিনে কিভাবে একথা বলতে পারেন! যখন মানুষ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ নির্ণয় করাই শেখেনি ? আজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে এর উপরিভাগ পর্যন্ত সাতটি স্তর রয়েছে। গঠনগত এবং কার্যগত দিক থেকে একটার সাথে আরেকটার কোন মিলই নেই।এগুলো হল –
i. Crust,
ii. Lithosphere,
iii. Upper mantle,
iv. Asrenosphere,
v. Lower mantle,
vi. Outer core,
vii. Inner core.
Source (Robart Gardner, Samuel F, Allyn and Bacon, Newton, Howe: General science-1885 Page-319-322)
১৪; চাদের আলো কার আলো :
তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সুর্যকে উজ্জল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযিল সমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এই সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে। (সূরা ইউনুস ১০:৫)
কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র। (সুরা ফুরকান ২৫:৬১)
চাদের আলো যে প্রতিবিম্বিত আলো বা ধার করা আলো একথাটা দেড় হাজার বছর আগের একটা আসমানী বইয়ে আসাটা খুবই স্বাভাবিক, যদি সে বইটা হয় এমন এক মহাসত্ত্বার কাছ থেকে যিনি মানুষের সবরকম ধ্যান-ধারণার অনেক উর্ধে। বিজ্ঞান সুস্পষ্ট কোরআনের সাথে এখন একমত।
১৫; থিওরী অফ রিলেটিভিটি :
রিলেটিভিটি থিওরী মতে আমাদের দৃশ্যমান সময়ের পরিমান, আমাদের নিজেদের আপেক্ষিক বেগের উপর নির্ভর করে। সহজ কথায় সময়ের পরিমাণ বেগের সাথে পরিবর্তনশীল। আইনস্টাইনের আগে কোন বিজ্ঞানী আমাদেরকে এই বিষয়ে ধারণা দিতে পারেন নি। মানুষ তখন সময়কে একটা ধ্রুব রাশি হিসেবে বিবেচনা করতো। অথচ দেড় হাজার বছর আগের কোরআন বলছে আমরা যে সময়কে বাস্তবে বিবেচনা করতে পারি, সেই সময়ই অন্য একটি ক্ষেত্রে সময়ের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।
ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা’আলার দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। (সূরা মায়ারিজ ৭০:৪)
তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন, অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।। (সূরা সেজদাহ ৩২:৫)
সময়ের পরিমান ক্ষেত্রভেদে ভিন্ন হয়, এই কথাটা থিওরী অফ রিলেটিভিটি যতটা পরিস্কারভাবে বলেছে, তার থেকেও বেশি পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে এই আয়াতদুটিতে। ভুলে গেলে চলবেনা, থিওরীটি আবিষ্কার হয়েছে মাত্র এক শতাব্দী আগে!
১৬; পর্বতের গঠন ও কাজ : "আমি কি করিনি ভূমিকে বিছানা এবং পর্বতমালাকে পেরেক?
(সূরা নাবা ৭৮:৬,৭)।
আয়াতটি বলছে পর্বতমালাকে পেরেকের মত করে তৈরী করা হয়েছে। পেরেকের কাজ হলো দুই বা ততোধিক কাষ্ঠখন্ডকে এমনভাবে জোরা লাগানো, যাতে সংযুক্ত বস্তুটিকে নাড়াচড়া করলেও খুলে না যায়। আমরা যে বিস্তীর্ণ ভূমির উপর বিচরণ করি, তা মূলত একধরনের পাতলা প্লেট।এদেরকে বলা হয় টেকটোনিক প্লেট। পৃথিবীর ঘুর্ণনের ফলে এই প্লেটগুলো সদা নড়াচড়া করে থাকে। আধুনিক বিজ্ঞান ব্যাখ্যা দিয়েছে, দুই বা ততোধিক প্লেট যখন একটির উপর আরেকটি চলমান হয়, অথবা ধাক্কা খায়, তখন এদের মিলনস্থলে পাহাড়ের সৃষ্টি হয়। এই পাহাড় ভূমির উপরে যতদূর উপরে উঠে, পরের অংশে অনেকগুন পরিমানে ভূমির নিচে দেবে যায়। অনেকটা ভাজ সৃষ্টির মত। এর ফলে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়া কমে যায়। অর্থাৎ এই প্লেটগুলোর সংযোগ স্থলে পাহাড় বা পর্বত অনেকটা পেরেকের মত কাজ করে।
পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ একটা ভীষণ উত্তপ্ত গলিত তরল পদার্থে পরিপূর্ণ। পেরেকের আকৃতির এই পাহাড়গুলো না থাকলে, পৃথিবীর ঘুর্ননের কারনে, হয়তো কোন একদিকের প্লেট সরে গিয়ে ঐ অঞ্চলের গলিত তরলকে বাইরে বের হয়ে আসার সুযোগ করে দিতো। ফলে ভয়ানক বিপর্যয় ঘটতো। যেমন এভারেষ্ট পর্বতমালার সবচেয়ে উচু মাথা ভূমির প্রায় ৯ মাইল উপরে উঠেছে। ঠিক একই জায়গায় এর ভিত্তিমূল মাটির নীচে পৌছে গেছে ১২৫ কিমি পর্যন্ত। শুধু যদি এই অংশটিকে আমরা বিবেচনা করি, তাহলে একে দেখতে মনে হবে- দৈত্যাকার এক পেরেকের মত! আর কোরআন চমৎকার ভাবে বলে দিয়েছে একথাটাই দেড় হাজার বছর আগে। আচ্ছা মুহাম্মদ (স) কি পৃথিবী ঘুড়ে পর্বতগুলোর নিচে কি রকম তা দেখেছিলেন ?
১৭; পর্বতমালার অবস্থান :
তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে কর(আসলে সেগুলো সচল), অথচ সেদিন এগুলো মেঘমালার মত চলমান হবে। এটা আল্লাহর কারিগরী, যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংহত। তোমরা যা কিছু করছ, তিনি তা অবগত আছেন। (সূরা নামল ২৭:৮৮)
১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সোসাইটি (ওয়াশিংটন ডিসি) প্রমাণ করে যে টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়াচড়ার কারণে পাহাড়গুলোও সম্পূর্ণ স্থির নয় বরং প্রতি বছর ২-৫ সেন্টিমিটার করে সরে যাচ্ছে।
যদিও এদের কার্যক্রম পেরেকের মতই। আর আমরা পাহাড়কে স্থির মনে করে যে একটা ভুলের
মধ্যে আছি. একথাটাই কোরআন বলেছে কাব্যিকভাবে।
১৮; লোহার রহস্য :
আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী। (সূরা হাদীদ:২৫)
বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে, আমাদের সৌরজগতের কোন গঠন প্রনালী নেই যা লোহার উৎপত্তি ঘটাতে পারে। লোহা কেবলমাত্র সূর্যের চেয়ে বড় কোন নক্ষত্রেই তৈরী হতে পারে যেখানে তাপমাত্রা কোটি ডিগ্রির কাছাকাছি। এ রকম কোন গলিত নক্ষত্রের বিস্ফোরনের মাধ্যমেই লোহার উৎপত্তি সম্ভব। আর এই
ধরনের বিস্ফোরনের মাধ্যমে সৃষ্ট লোহার টুকরাগুলো পরবর্তিতে পৃথিবীতে আসার ফলেই লোহা অস্তিত্ব লাভ করেছে।
অর্থাৎ লোহা যে আকাশ থেকে এসেছে এটা বিজ্ঞান মেনে নিয়েছে। আরেকটি বিষয় লক্ষনীয়, সুরা হাদিদ (হাদীদ অর্থ লোহা) কোরআনের ৫৭ নং সূরা। মজার ব্যাপারটা হলো 'আল হাদিদ' এর সংখ্যাগত অর্থও ৫৭, অর্থাৎ আরবীতে এই শব্দের মান হল ৫৭। শুধু 'হাদিদ' এর সংখ্যাগত অর্থ হল ২৬, যা লোহার এটমিক নাম্বার (২৬) এর সাথে মিলে যাচ্ছে। আর সূরাটির ১ থেকে ২৫ নং আয়াত (২৫ নং আয়াতে লোহার গুন সম্বন্ধে বলা হয়েছে) পর্যন্ত হাদিদ শব্দটি এসেছে ২৬ বার। (হা=৮, দাল=৪, ইয়া=১০, দাল=৪)।
১৯; বাতাশ ও বৃষ্টির সম্পর্ক :
আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই। বস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই। (সূরা হিজর ১৫:২২)
বিংশ শতাব্দির প্রথমদিকেও মানুষের ধারনা ছিল যে, বৃষ্টির সাথে বাতাসের সম্পর্ক হল, বাতাস মেঘকে চালিত করে দূরে নিয়ে যায়, ফলে বৃষ্টি সমভাবে হয়। বাতাসের মাধ্যমেই যে জলীয় বাস্প উপরে উঠে মেঘের সৃষ্টি করে, এ সম্পর্কে মানুষ জানত না।বৃষ্টিগর্ভ বায়ু বলতে জলীয় বাস্পপূর্ণ বায়ু বুঝানো হয়েছে। "বাতাস জলীয় বাস্পকে আকাশে উড়িয়ে নেয়, অত:পর মেঘ সৃষ্টি হয়" একথা এই আয়াতে। বাতাসের ভুমিকা না থাকলে সূর্য যতই তাপ দিক না কেনো জলীয় বাস্প কখনোই আকাশে পৌছতেই পারতো না, মেঘ হওয়া তো দূরের কথা।
২০; পরিমানমত বৃষ্টি : যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন পরিমিত। আতঃপর তদ্দ্বারা আমি মৃত ভূ-ভাগকে পুনরুজ্জীবিত করেছি। তোমরা এমনিভাবে উত্থিত হবে। (সূরা যুখরাফ ৪৩:১১)
প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৬ কোটি পানি বাতাসের সাথে মিশে। যা বছরে পাচ হাজার তেরশ কোটি টন। এই পানির পুরোটাই আবার প্রতি বছর মাটিতে ফিরে আসে। যদি এই ফিরে আসাটা পরিমিত না হত তাহলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যেতো। যেমন পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশী হয়। পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখার জন্য যা খুবই জরুরী। গবেষনায় দেখা গেছে যদি ঠিক এই পরিমাণ পানি বাতাশে না মিশে কিছু কম মিশতো, তাহলে মেরু অঞ্চলের জীববৈচিত্র নষ্ট হয়ে যেত। কারন মেরু অঞ্চলে বরফ স্তরের গভীরতা বেড়ে যেতো। যা গোটা পৃথিবীর জীববৈচিত্র রক্ষার সাথে সম্পর্কিত।
২১; সমুদ্রের পানির রহস্য :
তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন। উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করে না। (সূরা আর-রহমান ৫৫:১৯-২০)
সমুদ্রের এই বৈশিষ্ট্য অতি সম্প্রতীককালে আবিষ্কৃত হয়েছে। সমুদ্রের সারফেস টেনসন এবং ঘনত্বের পার্থক্যের জন্য এক সমুদ্রের পানি অপরটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হলেও মিশে যায় না। যেমন গালফ অফ
মেক্সিকোতে এর হাজার হাজার মাইলব্যাপি লোনা আর মিষ্টি পানির সাগর পাশাপাশি প্রবাহিত হলেও
একটির পানি আরেকটির সাথে মিশে যায় না। কোরআন নাযিলের সময় মানুষের মাঝে পদার্থবিজ্ঞানের কোন জ্ঞান ছিল না। আর মুহাম্মদ সাঃ ছিলেন মরুভুমির মানুষ তা ছাড়া তিনি মেক্সিকোতে গেছেন বলে মনে হয় না।
২২; সমুদ্র বিজ্ঞান :
যারা কাফের, তাদের কর্ম মরুভুমির মরীচিকা সদৃশ, যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে। এমনকি, সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, অতঃপর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী। অথবা (তাদের কর্ম) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ যাকে জ্যোতি দেন না, তার কোন জ্যোতিই নেই।
সুরা নূর আয়াত ২৪:৩৯-৪০
সমুদ্র বিজ্ঞান অনুযায়ী সূর্যের আলোর তিন থেকে ত্রিশ ভাগ সাগরে প্রতিফলিত হয়। তাই ২০০ মিটার গভীর সাগরে নীল রং ছাড়া আলোর সব রংই মিশে যায়। আগেকার দিনে মানুষ যন্ত্র না থাকায় ২০-২৫ মিটারের নীচে নামতে পারতো না। সাবমেরিনসহ নানা উন্নত সাজ সরঞ্জাম ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করল যে, গভীর সাগরের পানির ঘনত্ব বেশি হওয়ায় দুই ধরনের ঢেউ সৃষ্টি হয়। উপরের
ঢেউ ও ভিতরের ঢেউ। নিচের ঢেউ অন্ধকার হওয়ায় দেখা যায় না।ফলে কেউ হাত বের করলেও সেই
হাত দেখতে পারবে না ।সাগর বিষয়ক জার্মান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মার্গারও মনে করতেন বিজ্ঞানের উন্নতির কারনে ধর্মের দরকার নেই। কিন্তু সূরা নূরের এ আয়াত শোনার পর তিনি বলেছেন, "এসব কথা কোন
মানুষের কতা হতে পারে না, এ আয়াত ইসলামের অলৌকিকতার প্রমাণ।
২৩; গাছের লিংগ :
তিনিই ভুমন্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড় পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে দু’দু প্রকার সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্যে নিদর্শণ রয়েছে, যারা চিন্তা করে। (সুরা রাদ:৩)
পবিত্র তিনি যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, তাদেরই মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৩৬)
জোড়া অর্থাৎ পুরুষ আর স্ত্রী লিঙ্গ। এই আয়াতটি আমাদের বলছে গাছপালারও লিঙ্গ রয়েছে। আজকের বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে গাছপালারও লিঙ্গ থাকে। পুরুষ গাছ এবং স্ত্রী গাছ। এমনকি উভলিঙ্গ গাছে পুরুষ এবং মহিলা অংশ আলাদা অবস্থায় থাকে। সর্বপ্রথম যে বিজ্ঞানী উদ্ভিদরে মধ্যে পুংলিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি হলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী কার্ল লিনে। খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এ মত প্রকাশ করেন। তার ওই।বক্তব্যে অনেকেই বিষ্মিত হয় এবং তারা গীর্জার পাদ্রীদেরকে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। ফলে কয়েক বছর ধরে ইউরোপে তার লেখনীকে ভূল মতামত হিসেবে ধরা হত। কিন্তু এর কিছু পরই বিজ্ঞানীরা লিনের মতামতকে সত্য বলে স্বীকৃতি দেন এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক মূল
নীতি হিসেবে গৃহিত হয়। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের আগে কে জানতো যে গাছেরও লিঙ্গ আছে ?
২৪; গাছের নি:শ্বাস- ফটোসিনথেসিস :
"শপথ সকালের যখন তারা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়"। (সূরা তাকভীর ৮১:১৮)।
ফটোসিনথেসিস আবিষ্কার করার পর্বে, এই আয়াতটি বেশ রহস্য তৈরী করে রেখেছিল। মানুষ ভাবতো এটা এমন কি হতে পারে যা দিনের আলোয় নি:শ্বাস নেয়! লোকজন খুব অবাক হয়ে ভাবতো এমন কিছুর কথা, কিন্তু তারা খুজে পায়নি এটা। যতদিন না ফটোসিনথেসিস পদ্ধতির কথা মানুষ জানলো। এই পদ্ধতি মানুষকে জানালো এমন এক প্রক্রিয়ার কথা যেটা ব্যবহার করে গাছ কার্বণ-ডাই-অক্সাইড কে শোষণ করার মাধ্যমে নিজের জন্য খাদ্য প্রস্তুত করে। একইসাথে অক্সিজেনকে পরিবেশ এ মুক্ত করে। এই প্রক্রিয়াটি কেবল দিনের বেলাতেই ঘটে, যেহেতু আলো এখানে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ গাছ কেবল দিনের বেলাতেই নি:শ্বাস ক্রিয়া চালায়। আর এ কথাটিই বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। এখানে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি গাছের উল্লেখ করে আয়াতটি নাজিল করেন নি। বোধহয় এ কারনে যে, ভবিষ্যতেও
কোরআন যে কালোত্তীর্ণ, এই বিষয়টি যাতে পরিষ্কার হয়।
২৫; আঙ্গুলের ছাপের ভিন্নতা : মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করব না?পরন্ত আমি তার অংগুলিগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।(সূরা কিয়ামাহ ৭৫: ৩,৪)
অর্থাৎ কারো আঙ্গুলের অগ্রভাগই অন্য কারো সাথে পুরোপুরি একই হবে না। আজ প্রমানীত এ পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের আলাদা আলাদা আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে। কারো ছাপই কারো সাতে মিলবে না। আর এজন্যই এই ছাপ এখন ব্যবহার করা হয় পরিচয়পত্র হিসেবে। ১৯ শতকের পূর্বে মানুষ আঙ্গুলের ছাপকে শুধু কিছু ভাজ বলেই জানতো। উল্লেখ্য, আঙ্গুলের ছাপ ভিন্ন হয়, এটা ১৮৮০ সালে প্রথম আবিষ্কার করেন স্যার ফ্রান্সিস গ্যালটন।
২৬; পেশি ও হাড়ের গঠন :
কোরআনে বলা হয়েছে মাতৃগর্ভাষয়ে মাংশপেশী গঠিত হওয়ার আগই বাচ্চার হাড় গঠিত হয়।
আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। (সূরা মুমিনুন ২৩:১২-১৪)
কিছুদিন পূর্বেও ভ্রুণবিদ্যা জানতো যে, ভ্রুণ এর হাড় ও মাংসপেশী একই সময়ে তৈরী হয়। এখন আধুনিক এমব্র্যয়লজি(ভ্রুণবিদ্যা) এভাবে দেয়া হয়েছে "সাত সপ্তাহের মধ্যে কংকালের গঠন শেষ হয় এবং দেহের সবখানে ছড়িয়ে পরতে থাকে। এবং হাড় এর বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করে। অষ্টম সপ্তাহের দিকে মাংসপেশী গঠিত হতে থাকে যা হাড়ের চারপাশে অবস্থান নিতে থাকে।" Keith Moore (developing Human, 6 part)-1998 অর্থাৎ মানুষের জন্ম ঠিক সেভাবেই হয় যেভাবে কোরআনে বলা হয়েছে।
মার্কিন নাগরিক ও বিজ্ঞানী মার্শাল জনসন ভ্রুনতত্ত্ব সম্পর্কিত আয়াত প্রসঙ্গে বলেছেন, "ভ্রণের বিকাশের
পর্যায়গুলো সম্পর্কে কোরআনের এ বাস্তবতা আবিস্কার করা সম্ভব। কোরআন হল দেড় হাজার বছর আগের
গ্রন্থ। সে সময় কোন মাইক্রোসকোপের অস্তিত্ব ছিল না।তখনও মাইক্রোস্কোপ আবিস্কৃতই হয়নি। কোরআন নাজিলের বহু বছর পরে যখন মাইক্রোস্কোপ আবিস্কৃত হল তখন ওই মাইক্রোস্কোপ কোন বস্তুকে ১০ গুণের বেশি বড় করতে পারতো না এবং স্বচ্ছতাও কম ছিল কাজেই কোরআনের বানী মানুষের হতে পারে না"
২৭; দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি : কোনটা আগে ?
অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা সেজদাহ ৩২: ০৯)।
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। (সূরা ইনসান ৭৬: ০২)।
অর্থাৎ কোরআন বলছে মানুষ আগে শ্রবণশক্তি আর তারপর দৃষ্টিশক্তি পায়। আসলে কি তাই? চলুন দেখি বিজ্ঞানীরা কি বলেন- গর্ভে পাচ মাস থাকার পর ভ্রুনের শ্রবন ইন্দ্রিয় তৈরী হয় পরবর্তিতে সাত মাস থাকার পর ভ্রুনের চোখ তৈরী হয়। কি ধ্রুব-বিজ্ঞানময় এই কোরআন!
২৮; পাখিদের গতিপথ :
তারা কি উড়ন্ত পাখীকে দেখে না? এগুলো আকাশের অন্তরীক্ষে আজ্ঞাধীন রয়েছে। আল্লাহ ছাড়া কেউ এগুলোকে আগলে রাখে না। নিশ্চয় এতে বিশ্বাসীদের জন্যে নিদর্শনবলী রয়েছে। (সূরা নাহল ১৬:৭৯)
আধুনিক বিজ্ঞানের আবিস্কার কি ? আধুনিক বিজ্ঞান বলছে পাখিদের মাথায় উড়ে বেড়ানোর প্রোগ্রামিং করা আছে। আর এই কারনেই ছোট ছোট পাখি আগে কোনরকম অভিজ্ঞতা না থাকলেও হাজার হাজার মাইল উড়ে বেড়িয়ে আবার নিজ বাসায় ফিরে আসতে পারে। এই যেমন শীতকালে আমাদের দেশে সাইবেরিয়া থেকে এভারেষ্ট এর উপর দিযে উড়ে আসে অতিথী পাখিরা।।শীত শেষে আবার চলে যায় নিজের বাসায়। এই বিশাল দুরুত্ব (মাত্র ৬৫০০ মাইল গড়ে) পথ পাড়ি দিতে ওদের কোন গাইড লাগে না! কে তাদেরকে মাথায় রাস্তা চেনার এই ক্ষমতা দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "আ্ল্লাহ তায়ালাই তাদের স্থির রাখেন।" কি আশ্চর্যকর এই কোরআন!
২৯; পিপিলিকার সমাজ :
সুলায়মানের সামনে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা হল। যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে। ( সূরা নামল ২৭: ১৭,১৮)।
কি ভাবছেন ? কোরআনে এসব রুপকথার গল্প লিখা হয়েছে কেন ? হে বিজ্ঞানপ্রেমী, এগুলো এখন
আর রুপকথা নয়! আপনার বিজ্ঞান ঘোষনা করে দিয়েছে, মানুষের সাথে সামাজিক কাঠামোয় সব থেকে মিল যে প্রাণীর সেটা পিপীলিকা। ওরা আরো জানিয়েছে পিপীলিকারা নাকি ওদের মৃহদেহ কবর দেয়, ওদের সমাজের কাজ নাকি ভাগ করে করে, ওদের নাকি আছে ম্যানেজার, সুপারভাইজার, শ্রমিক ইত্যাদি ব্যবস্থা! ওরা নাকি ভবিষ্যত চিন্তা করে মানুষের মত খাদ্য মজুদ করে, আরো অবাক করা কথা কি জানেন, ওদের মজুদকৃত শস্যদানায় যদি কুড়ি গজায় তা ওরা কুড়িগুলো কেটে ফেলে, যেন ওরা জানে, এই কুড়িগুলো ওদের শস্যকে নষ্ট করে দিবে। আর কোনভাবে শস্যদানাগুলো ভিজে গেলে, ওরা ওগুলো বাইরে এনে শুকাতে দেয়। যেনো ওরা জানে, এগুলো না শুকালে শষ্যগুলো পচে যাবে! পিপীলিকাদের এই উন্নত প্রকৃতি সম্বন্ধে বিজ্ঞান আমাদের জানালো এই কিছুদিন আগে। আর কোরআন জানিয়েছে -------১৪০০ বছর আগে!
৩০; পাখিরা কথা বলে ?
সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘হে লোক সকল, আমাকে উড়ন্ত পক্ষীকূলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সব কিছু দেয়া হয়েছে। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব। ’ (সূরা নামল ২৭:১৬)
কোরআন এখানে পাখিদের ভাষার কথা বলছে, যা শিখানো হয়েছিল সুলায়মান (আ কে । পাখিরা কি নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারে ? চলুন দেখি বিজ্ঞান কি বলে। মারিয়া লুইসা ডাঃ সিলভা কর্তৃক ব্রাজিলিয়ান হামিং বার্ড এর উপর দীর্ঘ এক গবেষণার পর এর ফলাফল বিখ্যাত সাইন্স ম্যাগাজিন
"ন্যাচার" এ প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়-হার্মিং বার্ড এর কন্ঠনি:সৃত শব্দগুলোর নির্দিষ্ট অর্থ আছে, যেগুলো অন্য হার্মিং বার্ডকে নির্দিষ্ট কাজ করতে উৎসাহিত করে। এরা নিজেদের মধ্যে শব্দ বিনিময়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করে।
কাকের উপর গবেষণার একটি ফলাফল এরকম- এরা কয়েকশত প্রকারের বিভিন্ন সাউন্ড তৈরী করতে পারে, যেগুলোর নির্দিষ্ট অর্থ আছে, একটি কলোনির সকল কাকাকে সতর্ক করতে, কোন কলোনির কাকাদেরকে এক জায়গায় একত্রিত করতে, নিজেদের দুরবস্থার কথা অন্যকে জানাতে------এর
নির্দিষ্ট ধরনের সাউন্ড তৈরী করে থাকে।এমনকি এরা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর প্রয়োগ ঘটিয়েও অন্য কাককে তা মনের কথা জানাতে পারে। এ রকম হাজারো উদাহরণ দেয়া যাবে।
৩১; মধুর ওষুধীগুন :
আপনার পালনকর্তা মধু মক্ষিকাকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতগাহ্রে, বৃক্ষ এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরী করএরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহল ১৬:৬৮, ৬৯)
আমারা আগে জানতাম মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে বিভিন্ন ফুল থেকে অত:পর তা মৌচাকে মজুদ করে রাখে সরাসরি। আসলে তা নয়, বিজ্ঞান কিছুদিন আগে প্রমাণ করেছে মৌমাছির শরীর থেকে মধু বের হয়। কোরআন দ্বারা যা প্রমাণিত। কোরআন আরো বলেছে মধুর ওষুধীগুনের কথা। আজ আমরা জেনেছি মধুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর ধাদ্যগুন। আছে প্রচুর ভিটামিন কে আর ফ্রুক্টোজ। আরো আছে মাঝারি এন্টিসেপ্টিক গুন। কেটে যাওয়া জায়গায় মধু লাগিয়ে রাখলে কোনরকম ইফেকশান হয়না।
৩২; সূরা নাহল ও কর্মী মৌমাছির
লিঙ্গ : কোরআনে মৌমাছিকে নিয়ে একটি সূরা আছে। এটি হল সূরা নাহল, নাহল শব্দটির অর্থ মৌমাছি।
ক. এই সূরাটির অবস্থান কোরআনের ১৬ নাম্বার স্থানে।
খ. খুব সম্প্রতি বিজ্ঞান জানিয়েছে, পুরুষ মৌমাছির ক্রোমোসোম সংখ্যা ১৬!
স্ত্রী মৌমাছির ৩২ । ১৬*২=৩২ । এভাবে মিলে যেতে হবে ?
গ. আবার সুরাটিতে আয়াত আছে ১২৮ টা। ১৬*৮=১২৮।
ঘ. এই সূরার ৬৮ নং আয়াতে প্রথম নাহল বা মৌমাছি সম্বন্ধে বলা হয়েছে।
এই আয়াতটিতে ১৩টি শব্দ আছে। সূরাটির একেবারে প্রথম শব্দ থেকে গুনে গুনে এই নাহল শব্দটি পর্যন্ত শব্দ সংখ্যা ৮৮৪।
তো কি হয়েছে ? ৬৮ নং আয়াতে ১৩ টা শব্দ থাকতেই পারে আর সর্বপ্রথম নাহল শব্দটিও থাকতেই পারে, এটার গুরুত্ব কি আছে! আছে বৈ কি, কারণ ১৩*৬৮=৮৮৪ হয় যে!!!
কি অস্বাভাবিক গাণিতীক অবস্থান এই কোরআন মেনে চলে!!! এই সূরার ৬৮ এবং ৬৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে কর্মী মৌমাছির কথা। ওখানে কর্মী মৌমাছিকে বলা হয়েছে"কুল্লিঅফাছলুক"। এই শব্দটির অর্থ স্ত্রী মৌমাছি । অর্থাৎ কোরআন কমী মৌমাছিদেরকে বলেছে মেয়ে মৌমাছি।
আপনার পালনকর্তা মধু মক্ষিকাকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতগাহ্রে, বৃক্ষ এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরী কর (সূরা নাহল ১৬:৬৮)।
আগে আমরা জানতাম কর্মী মৌমাছি হল পুরুষ মৌমাছি। আজ আমরা জেনেছি কর্মী মৌমাছিদের আসলে কোন রাজা নেই আেছে রাণী আর কর্মী মৌমাছি হচ্ছে স্ত্রী মৌমাছি। কোরআন দেড় হাজার বছর আগে মৌমাছির লিঙ্গ সনাক্ত করেছিল ?
ভবিষৎবাণী ও আশ্চর্য কিছু আয়াত।
৩৩; কোরআনের আর একটি ভবিষ্যতবানী, যার উল্লেখ আমি এখানে করতে চাই তাহলো- ইরানীদের উপর রোমানদের বিজয়।
রোমকরা পরাজিত হয়েছেনিকটবর্তী এলাকায় এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর অতিসত্বর বিজয়ী হবে (সূরা রুম ৩০:২-৩)
এই আয়াতগুলো নাযিল হয় ৬২০ সনে। তখন রোমান অর্থাৎ বাইজেন্টাইনরা, ইরান বা পারস্য শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে নিজেরা এতটাই দূর্বল হয়ে পরেছিল যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকবে কিনা এই নিয়ে সংশয় চলছিল। উক্ত আয়াত নাজিল হওয়ার ঠিক ৭ বছর পর ৬২৭ সনে রোমানরা অবিশ্বাস্যভাবে ইরানীদের পরাজিত করে।
সত্যি প্রমাণিত হয় কোরআনের ভবিষ্যতবাণী। আর একটি বিষয় খুবি চাঞ্চল্যকর। বলা হয়েছে "রোমানরা পরাজিত হয়েছে, সবচেয়ে নিচু জায়গায় (Adna al-ard পৃথিবীর নিম্নতম স্থান)। - রোমানরা ইরানীদের কাছে যে জায়গায় পরাজিত হয় সেটা হল ডেড সি বেসিন। এটি কি সত্যি পৃথিবীর নিম্নতম স্থান ? আজকে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, পৃথিবীর নিম্নতম স্থান হল ডেডসি বেসিন, এই স্থানটি সমুদ্রতল থেকে নীচে অবস্থিত।
পূর্বে নিশ্চয়ই এটি জানা অসম্ভব ছিলো যে, এটিই পৃথিবীর সবচাইতে নিচু জায়গ। মহানবী সাঃ এই জাযগাটির গভীরতা কি দিয়ে পরিমাপ করেছিলেন ?
৩৪; ফেরাউনের লাশ সংরক্ষন :
কোরআনে আছে ফেরাউন ডুবে মারা গেছে আর মৃত্যুর পরও তার শরীর অক্ষত রাখা হবে, পরবর্তি সীমালংঘনকারীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে।
অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে যাতে তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না। (সূরা ইউনুস ১০:৯২)
ঐতিহাসিকগণ ১৮৯৮ সালে ফেরাউনের লাশ উদ্ধার করেন। যা আজ মিশরের কায়রোতে দ্যা রয়েল মমী হলে একটি কাচের সিন্দুকের মধ্যে রয়েছে। এর দৈর্ঘ ২০২ সেন্টিমিটার। ৩১১৬ বছর পানির নীচে থাকা সত্ত্বেও তার লাশে কোন পচন ধরে নি। এটা কি মোটেও যৌক্তিক ? মুহাম্মদ সাঃ এর যুগের আরব জাতি ও অন্যরা মিশরীয়দের মধ্যে, ফেরাউনের পানিতে ডুবে মারা যাওয়া কিংবা তার লাশ যে সংরক্ষিত হবে এরকম ভবিষ্যতবানী করা এবং তা মিলে যাওয়া এক কথায় অসম্ভব।
৩৫; ইরাম শহর এর রহস্য :
আপনি কি লক্ষ্য করেননি, আপনার পালনকর্তা আদ বংশের ইরাম গোত্রের সাথে কি আচরণ করেছিলেন,
সুরা ফজর ৮৯:৬
-------------------------------------------------------